সন্দ্বীপের চর
বাবা নেই। মা নেই। শ্মশানের রাত। হেঁটমুণ্ড ছায়াবাহকেরা হরিধ্বনি তুলে মিশে গেল চুল্লির দ্বারে। একটা রাক্ষসী আগুন দুহাত বাড়িয়ে গিলে নিতে চায় চরাচর। কাকজ্যোৎস্নায় শিস দিতে দিতে পিশাচিনী তার পুঁজ-রক্ত-কফ রেখে গেল মাটির মালসায়। আশ্চর্য এ জীবনের কাঁথা-কানি কড়ি ও কোমল। নরম তালুতে রাখা বেলকাঁটার ভাব-ভালোবাসা। পুনর্জন্মের আশা নিয়ে নিভে যাচ্ছে রক্তমাখা গাছ। দুঃখের সংসার থেকে ধোঁয়া উঠছে। ভাতের ঘ্রাণ। রাশিরাশি ফেনা ও বুদ্বুদ, সুপ্ত হননেচ্ছা ঠেলে ঘুরে আসি সন্দ্বীপের চর।
শিল্পের হাট
চোখের কোটরে লাল পিঁপড়েরা বহুদিন ধরে বাসা বেঁধে আছে। সারসার খাদ্য নিয়ে তাহাদের সুশৃঙ্খল আনাগোনা। নীল অভিমানে আমি দেখে থাকি পৃথিবীকে। একটা রক্তশূন্য ঘড়ি লকলকে জিভ দিয়ে চেটে নেয় দুরন্ত আগুন। কামনার জাল ছিঁড়ে প্রজাপতি উড়ে যায় নিঃস্ব মরুদেশে। ভাবনারা আলগা হচ্ছে,পাতলা হয়ে ভেসে যায় শিলা। বেকুব চুপ থেকে ক্ষয়ে গেল দেউটির মাটি। আজ ভাসানমঙ্গল। আজ অন্ধকারে রক্তস্নান সেরে নেবে শৃগালেরা। আমি তাদের বুকজোড়া ক্ষত রাংতায় মুড়ে বেচে দেব শিল্পের হাটে।
অবিশ্বাসের ভোর
সাপের মত চেরা জিভ দিয়ে চেটে নিচ্ছে গাল। তুমি তার হিসহিস শব্দে শিহরিত হও। তোমার দুপায়ের ফাঁকে অগ্নি। পুড়ে যাচ্ছে মাঠের পর মাঠ। এখানে বৃষ্টি নেই। হা-হুতাশের শব্দ বিস্ফোরণের মত বাজে। তালগোল পাকানো সন্ত্রাস বোতলের মধ্যে পুরে ভাসিয়ে দাও ঢেউয়ের শিখায়। লুপ্ত হয়ে আসে পর্বতপ্রমাণ ক্ষমা। দরজার চৌকাঠ ডানা মেলে উড়ে যায় বসন্তবাতাসে। মৃতদেহের পাশে হাতজোড় করে হারিয়ে যাওয়া জামা। রাতের গর্ভ থেকে অপরিণত শিশুর মত জন্ম নেয় অবিশ্বাসের ভোর।
বছরশেষের রাত
একটা কাটা মাথা প্রচণ্ড আলোতে শব্দ করে ফেটে গেল। খুলির টুকরোগুলো নারকেলের মালার মত ছড়িয়ে ছিটিয়ে ইতস্তত। অল্প অল্প চুল আর সাদা শাঁসে না-দেখা দৃশ্যের ঘোর। এই দৃশ্যে কিছু সুর ঢুকে পড়ে গ্র্যান্ড পিয়ানোর। ভাঙা বালতিটিকে কেউ রেখে গেছে কুয়োতলার পাশে। ভাঙা মন নিয়ে কবাডি খেলছে ছেলেবেলা। কপালের পাশটিতেই বুলেটের ক্ষত। সাফসুতরো পাকস্থলী মদে ভিজে গেঁজে উঠছে বছরশেষের রাতে।