রজতকান্তি সিংহচৌধুরী
পুব-পশ্চিমের সাঁকো : অলোকরঞ্জনের অনুবাদে গ্যোয়েটের ‘ডিভান’
কত আর সেতু বাঁধি…
অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত গ্যোয়েটের সংস্পর্শে আসেন তাঁর নিজের ভাষায়, শান্তিনিকেতনে তাঁর নিতান্ত ‘আনপড়ুয়া’ ছাত্রদশায়। রিখিয়ায় ঠাকুর্দার কবোষ্ণ আশ্রয় ছেড়ে দশ-এগারো বছর বয়সে পাঠভবনে ক্লাস সিক্সে ভর্তি হতে আসেন অলোকরঞ্জন (১৯৪৪)। রবীন্দ্রনাথ সদ্য চলে গেছেন। সেদিনের খোলামেলা শান্তিনিকেতনে থেকে থেকেই গান্ধী, নেহরু, সরোজিনী নাইডুর মতো ব্যাক্তিত্বদের আনাগোনা। শেষোক্ত জন কবি বলেই হয়তো কবিতা-প্রিয় কিশোর অলোককে কীটস-অনুবাদে উৎসাহ দেন। এইভাবে ছ’বছর বয়সেই যাঁর কবিতা লেখার শুরু, স্কুলবেলাতেই সেই অলোকরঞ্জনের অনুবাদকর্মেরও সূচনা। লক্ষণীয়, প্রথম কবিতার বই দিগ্বিজয়ী ‘যৌবনবাউল'(১৯৫৯)-এর আগেই বেরিয়ে গেছে আলোক সরকারের সঙ্গে তাঁর যুগলবন্দিতে নির্মিত ফরাসি গীতিকবিতার শীর্ণ অনুবাদ-সংকলিতা ‘ভিনদেশী ফুল’ (১৯৫৬)। অচিরেই প্রকাশিত হবে শঙ্খ ঘোষের সঙ্গে সম্পাদিত বিশ্বকবিতার বিপুল তরঙ্গ ‘সপ্তসিন্ধু দশদিগন্ত’ (১৯৬২)।
প্রাচীরবিহীন সেদিনকার শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রভবনের লাইব্রেরিতে তিনি দেখেন ‘সোনার তরী’র পাণ্ডুলিপি, যার মার্জিনে জ্বলজ্বল করছে রবীন্দ্রনাথ ‘স্বহস্তে, সযতনে মকশো’ করা গ্যোয়েটের বচন,
Entbehren sollst du, sollst entbehren
Thou must do without, do without!
এক অর্থে গ্যোয়েটের সঙ্গে অলোকরঞ্জনের যুগলবন্দির আলাপ তাঁর জীবনদেবতা সেই রবীন্দ্রনাথকে ঘিরেই।
উত্তরকালে এই সাগরমেখলা ধরণীর অন্য প্রান্তে জার্মানির বিশ্রুত হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাতের দশকে তাঁর গবেষণার বিষয় হয়েছিলেন এই দুই বিশ্বকবি, সেই সন্দর্ভের সুপরিচিত শিরোনাম ‘গ্যোয়েটে ও রবীন্দ্রনাথ’। জার্মানির সর্বোচ্চ গ্যোয়েটে পুরস্কারেও তিনি সম্মানিত।
মহাকবি গ্যোয়েটের সঙ্গে অলোকরঞ্জনের সাযুজ্য অনেক। গ্যোয়েটের এক কৌতুকী কণিকা অলৌকিক অনুবাদে, ‘মায়ের কাছে পেয়ে গিয়েছি প্রাণের আলোড়ন / এবং এই কল্পনাবিলাস।’ সংবেদনশীলতার মধ্যেও ব্যক্তিত্ব বজায় রাখা মাতৃনির্ভর দুই কবিরই বৈশিষ্ট্য। প্রবল আত্মবিশ্বাসী দুই কবিই সংকল্পের একটা জায়গায় পৌঁছে নিশ্চিন্তে বসে থাকেন না, দম নিয়ে এগিয়ে চলেন। দুই কবিরই বন্ধুদের সঙ্গে ফুরফুরে আলাপচারি, এমনকী কথা-কাটাকাটিতেও ছড়িয়ে থাকত সহজ মহিমা। অলৌকিক বাকশৈলী তো আমাদের সুপরিচিত। জীবনকে তন্ন তন্ন করে জানা, কৌতুকপ্রিয়তা, দেশকালের বেড়া ডিঙিয়ে চলা, এক-একটি জীবনসংকট থেকে নতুন পর্যায়ের আবিষ্কার ছিল উভয় কবিচারিত্র্যেরই মুদ্রা।
জার্মান সাহিত্যের ভিতরমহলের বাসিন্দা অলোকরঞ্জনের গ্যোয়েটে অনুবাদ তাই খুব স্বাভাবিক। তবু তিনি এতে হাত দিয়েছেন বেশ খানিকটা পরে। হাইনে, হ্যোল্ডারলিন, এমনকী বের্টোল্ড ব্রেশটের কবিতা অনুবাদের পর। মহাকবির জন্য স্বতন্ত্র সম্ভ্রম হয়তো এর কারণ।পারস্য-কবি হাফিজের (১৩১৫ — ১৩৯০) ‘ডিভান’ (‘দিওয়ান’) অবলম্বনে লেখা ‘প্রাচী-প্রতীচীর মিলনবেলার পুঁথি'(১৯৯৭)-র মতো মহাগ্রন্থের মহনীয়তাও এর অন্য কারণ।
বাংলা কবিতায় কালোত্তীর্ণ অথচ সময়োচিত বিশ্বকবিতার আহরণ
বিষয় হিসেবে ‘বিশ্বসাহিত্যে’র সূচনা কিন্তু গ্যোয়েটে (১৭৪৯ — ১৮৩২) থেকেই। গ্যোয়েটে তরুণ বয়সে কালিদাসের ‘শকুন্তলা’র অনুবাদ পড়ে অভিভূত হয়েছিলেন। সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদ আর ধর্মীয় মৌলবাদ-কবলিত বিশ্বে অনুবাদের মাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন ভাষা-সংস্কৃতির ভেতরে এই দেওয়া-নেওয়াও এক শুশ্রূষা।
বাংলা ভাষায় গ্যোয়েটে-চর্চার সূচনা, অন্য অনেক কিছুর মতো, রবীন্দ্রনাথ থেকেই। হাইনে বা ভিক্টর হুগোর কবিতার মতো গ্যোয়েটের কবিতা অবশ্য তিনি বাংলায় অনুবাদ করেননি, অনুবাদ করেছেন গ্যোয়েটের কিছু সূক্তিমালা মাত্র। অবশ্য তাঁর ‘প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে মোরে আরো আরো আরো দাও প্রাণ’ গানের সঞ্চারীতে ‘আরো আলো আরো আলো এই নয়নে প্রভু ঢালো’..সঙ্গে কী আশ্চর্য সমাপতনে এসে মেশে শেষ নিঃশ্বাসের আগে গ্যোয়েটের অন্তিম উচ্চারণ, ‘আলো, আরো আলো’ (Licht, mehr licht)। আর অলোকরঞ্জনও তাঁর শেষ পর্বের এক কবিতার বইয়ের নাম রাখবেন ‘আলো, আরো আলো’ (২০০৯)।
গ্যোয়েটে আর রবীন্দ্রনাথ বিশ্বসাহিত্য বীক্ষার অতৃতীয় প্রবক্তা। মনে করতেন অলোকরঞ্জন।
অনুবাদ নিজেকে আবিষ্কার করবার এক বিনীত উপায়
তাঁর সত্তর বছরের জন্মদিন বিশ্বকবি গ্যোয়েটে উদযাপন করেছিলেন পারসিক কবি হাফিজের ‘দিওয়ান’-এর অনুরণনে লেখা তাঁর ‘West-oestlicher Divan’ বন্ধুদের হাতে উপহার হিসেবে তুলে দিয়ে। অলোকরঞ্জন এ বইয়ের অনুবাদ বাংলার পাঠকের হাতে তুলে দিলেন ১৯৯৭ সালে তাঁর নিজের বয়সও যখন ষাটোত্তীর্ণ।
মধ্যপ্রাচ্যের কবি হাফিজের কবিতা পশ্চিমে গেল গ্যোয়েটের হাত ধরে। আবার অলোকরঞ্জনের হাত ধরে সে-কবিতা ফিরে এল ভারতের পূর্বশেষে সেই শ্যাম বঙ্গদেশে। অলোকরঞ্জন নিজে অবশ্য এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, হাফিজের কবিতায় তিনি পান ভারতীয় ভক্তিবাদী কবিতার, পদাবলি সাহিত্যের সুর। রবীন্দ্রনাথের অনুবাদে কালিদাস যেমন রবীন্দ্রায়িত, বক্ষ্যমাণ বইটিতে গ্যোয়েটেও তেমনি অলোকরঞ্জিত। তাই অলোকরঞ্জন-অনূদিত ‘ডিভান’-এ যেমন আরবি-ফারসি শব্দের চাঁদের হাট, তেমনি ভারত-পুরাণেরও মণিমুক্তো। ইশক, বেহেশত, জাহান্নাম, মস্তানা, হুরি-পরি, মজলিশ, ইউফ্রেটিস নদীর পাশে আছে ত্রিতাপ, আদ্যাশক্তি, হোমানল, নাদব্রহ্ম, অপ্সরা, মেঘদূত, এমনকী ক্ষিত্যপতেজমরুৎ-এর ধারণা। স্বদেশের সঙ্গে আজীবন সংলাপরত অলোকরঞ্জন বিদেশি ফুল সাজিতে সাজাতে গিয়ে দেশজ সুবাস ভরে দিয়েছেন বলা চলে। ‘স্থানে স্থানে প্রকাশিব নিজ মন উক্তি’, মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে ‘পদুমাবৎ’ কাব্যের অনুবাদক কবি সৈয়দ আলাওলের (১৬০৭ — ১৬৭৩) এই ঐতিহ্যপ্রাচীন বীক্ষা অলোকরঞ্জনের পাথেয় হয়েছে।
যোগযুক্ততাই সব (Bezug ist alles)
সংস্কৃতির ইতিহাস বন্ধুত্বের ইতিহাস। অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বসাহিত্যের মধ্যে যোগযুক্ততা তো বন্ধুত্বের আবহেই।
গ্যোয়েটের সুবিশাল ‘ডিভান’, যা আদতে ‘বিশ্বপ্রেমের পুঁথি’, শুধু অনুবাদই করেননি অলোকরঞ্জন, সঙ্গে রেখেছেন এক পাতঞ্জল মহাভাষ্য।
বারোটি সর্গে বিন্যস্ত এ বই। ‘গায়েনপুঁথি’, ‘হাফিজনামা’, ‘ইশক-নামা’, ‘অসন্তোষের পুঁথি’, ‘অবলোকনের পুঁথি’, ‘প্রবচনমঞ্জুষা’, ‘তৈমুরনামা’, ‘জুলেখার পুঁথি’, ‘সাকী-নামা’, ‘রূপকপুঁথি’, ‘পারসিক পুঁথি’ আর ‘বেহেশতের পুঁথি’। এত সাবলীল এর বয়ান যে মনে হবে, অনুবাদ নয়, বাংলা ভাষারই ছন্দোবদ্ধ মৌলিক লেখা। আমরা এখানে শুধু এ মহাগ্রন্থের কিছু চরণ ছুঁয়ে যাব।
‘গায়েনপুঁথি’র ‘হিজরা’ কবিতা দিয়েই বইয়ের সূচনা। হজরৎ মহম্মদের মক্কা থেকে মদিনা যাত্রার শুভ লগ্নের সঙ্গে গ্যোয়েটে তুলনা করেছেন কর্মক্ষেত্র ভাইমার থেকে তাঁর বাল্যলীলাভূমি রাইন-মাইন অঞ্চলে যাত্রার। পশ্চিম থেকে পূর্বের দিকে মুখ ফেরানো গ্যোয়েটে বলছেন,
মিশে যাব যত রাখালের মজলিশে
নব উদ্যম ভরে নেব ওয়েসিসে
ক্যারাভন থেকে জুড়ে দেব দরাদরি
বিষয়বস্তু : শাল, কফি, কস্তূরী’…
শুধু তাই নয়, এল হাফিজের কাব্যে বর্ণিত কোরানোক্ত হুরি-পরিদের কথাও :
এবং কবির প্রণয়ের ফিসফাস
হুরি-পরিদেরও জ্বেলে দেবে অভিলাষ।
পার্থপ্রতিম কাঞ্জিলাল যে-‘ইরোস’-এর মাহাত্ম্য অলোকরঞ্জনের কবিতায় লক্ষ করেন শঙ্খ ঘোষের কবিতায় ‘থ্যানাটস’ এর বিপ্রতীপে, ‘ডিভান’-এর অনূদিত লিরিকগুলোতে বুঝি তার পরাকাষ্ঠা তাঁর মৌলিক কবিতার চেয়েও স্ফুটতর এখানে। ডিভান মানে লিরিক, গীতিকবিতা। ‘ইশক-নামা’ অংশে স্বভাবতই এই প্রেম-কবিতার ধারা পূর্ণ বায়ুভরে তূর্ণ স্রোতোবেগে গতিশীল :
সেই তো দুচোখ আর তার সেই মুখ
আমায় দেখেছে দিয়েছেও চুম্বন
অঙ্গুলিমেয় কটিতট, সুতনুকা,
স্বর্গসুখের প্রকৃত উপকরণ।…
কিংবা,
যদি পারতাম চুলের এমন মস্ত মুলুকে
ভরন্ত হাতে পরিব্রজন করার সুযোগ
হৃদয় আমার ভরে উঠতই স্বাস্থ্যে সুঠাম।…
বঙ্গানুবাদ করতে গিয়ে অনেক নতুন শব্দের সৃষ্টি হয়েছে সৃষ্টিশীল শব্দশিল্পীর হাতে। এমনই এক মজার শব্দ ‘উন্মাতাল’। এইভাবে উপসর্গ ব্যবহারে নতুন নতুন শব্দ তৈরি করা তাঁর কবিপ্রতিভার অঙ্গ। এভাবেই এসেছে ‘অতৃণ’, ‘অশুভানুধ্যায়ী’, ‘আযোজন’, ‘সুশীর্ণ’ বা ‘প্রহত’ (ওষ্ঠে ভাসে প্রহত চুম্বন, ২০০৬) শব্দ। একটু ব্যক্তিগত প্রসঙ্গে যাওয়ার ঝুঁকি নিয়েও উল্লেখ করি, অলোকদার উৎসাহে এক সময় ইতালীয় কবি উনগারেত্তির বেশ কিছু কবিতার অনুবাদ করে আজকের প্রতিবেদক। অনুবাদগুলো দেখতে দেখতে অলোকদা একসময় এক জায়গায় তাঁর উদ্ভাবিত এই ‘উন্মাতাল’ শব্দ যোগ করার পরামর্শ দেন। সে-পরামর্শ যে আমি নিতে পারিনি সে স্বতন্ত্র প্রসঙ্গ। কিন্তু নতুন নতুন শব্দনির্মাণ, পরিভাষা তৈরি ছিল এই অক্লান্তকর্মা কবির রোজকার কাজ।
‘অবলোকনের পুঁথি’ থেকে অসামান্য অবলোকন, ‘ডাঁহা ঠকে যাবে যে দেয় উজাড় করে/ হাড়কেপ্পন শুকিয়েই যাবে মরে/..
কঠোর দেখলে সবাই এড়াবে তারে/ কোমল মানুষ পোরা হবে কারাগারে’।
আবার অলোকরঞ্জনের পছন্দসই এলিয়টের সেই ‘ক্রান্তিসঞ্চারী’ ‘Tradition and Individual Talent’ প্রবন্ধের লাইন ‘ঐতিহ্যকেও অর্জন করে নিতে হয়’-এর অনুরণন ‘প্রবচনমঞ্জুষা’ অংশের এই প্রবচনে, ‘নওজোয়ানেরা করে প্রাচীনের সূক্তিরোমন্থন/ আর মনে করে ওদেরই নিজস্ব তা’।
আর একটি না দেখলেই নয়,
আকাঙ্ক্ষার প্লাবন শুধু অযথা আছড়ায়
অনমনীয় অটুট সমতটে
কবিতাভরা মুক্তা সে তো ছড়ায়
বেঁচে থাকার সেই তো সার্থকতা।
‘জুলেখার পুঁথি’তে যখন উচ্চারিত হয়, ‘আমায় রাখি তোমার করতলে’র মতো ভালোবাসায় ভরভরন্ত চরণ, তখন তাকে অনুবাদ নয়, মৌলিক বাংলা কবিতা বলেই ভুল হয়। কিংবা,
সত্যি নাকি, শুকতারা আমার
তোমায় আমি বক্ষে আছি ধরে
দূর হয়েছে নক্ত অন্ধকার
পাতালভরা যন্ত্রণার ঘোরে…
‘পারসিক পুঁথি’তে কবির পরিবেশসচেতন, শুশ্রূষু হৃদয়বত্তা স্রোতস্বান,
গাছগুলো বুনে দাও সম্মিতির নিপুণ নিয়মে
শুধু এই ভারসাম্যে প্রাচুর্যের খেলা খুব জমে।
সব শেষে ‘বেহেশতের পুঁথি’তে দেখব, কবি স্বর্গদ্বারে হুরিদের সঙ্গে সংলাপরত। প্রশ্ন করছেন নর্মসহচরী এক হুরিকে,
ছেয়ে দিলে চুম্বনে, আশ্লেষে
তার ভাষ্য খুঁজি না নিখিলে
শুধু বলো, কখনো কি অংশ নিয়েছিলে
মৃন্ময় আয়ুর পরিবেশে?
মৌলবাদের বিরুদ্ধে, প্রেমের সপক্ষে
কোনো ব্যক্তিকে নয়, বইটি উৎসর্গীকৃত মৌলবাদের বিরুদ্ধে প্রেমের সপক্ষে। হাইডেলবার্গের সৈকতে কবির সঙ্গে আলাপ হয় এক প্রেমিকযুগলের। তাদের অনুরোধেই অলোকরঞ্জন ‘ডিভান’ অনুবাদে হাত দেন। সাম্প্রদায়িক রোষাগ্নিতে এই যুগল প্রাণ দেন। এঁরা যে-বিষাক্ত মৌলবাদের শিকার, গ্যোয়েটের অনুবাদে তার বদ্ধপরিকর প্রতিবাদ। তাই মৃত এই যুগল লক্ষ্ণৌ-ভিয়েনার সেলিনা-পিটারের, অনুরোধ রক্ষা করতে আর দেরি করেননি অলোকরঞ্জন। বাংলাদেশের যুক্ত প্রকাশনী থেকে ‘প্রাচী-প্রতীচীর মিলনবেলার পুঁথি’ (২০১২) নতুন করে প্রকাশিত।
আজ যখন দেশ-দুনিয়ায় ‘নাগিনীরা চারি দিকে ফেলিতেছে বিষাক্ত নিঃশ্বাস’, তখন গ্যোয়েটের এই প্রেমের বাণী ব্যর্থ পরিহাস শোনাবে না। ‘বিদায় নেবার আগে তাই/ ডাক দিয়ে যাই/ দানবের সাথে যারা সংগ্রামের তরে/ প্রস্তুত হতেছে ঘরে ঘরে’, অলোকরঞ্জনের মধ্যস্থতায় তাঁর জীবনদেবতার এ প্রতীতিতে আমরা স্থিতধী হতেই পারি।