নাবিক জলের গাথা
১
প্রাচীন নাবিক তুমি, তারও চেয়ে প্রাচীন এই যান
সময় সায়াহ্ন কাল।একটি রমণী বর্শা চিরে দিল
মাছের ওই পুংকেশর ঝাঁক।
২
সেই পাপ আদিপাপ
লাগলো এসে জলের সংসারে
জলের বিরুদ্ধভাব চাকার ঐ জটিল ঘূর্ণনে।
৩
মাঝখানে টুকরো ডেক
মেঘমনা নাবিকের ঘর
মাস্তুলের চেয়েও দীর্ঘ
তার ভাঙা ছায়ার বহর।
৪
অ্যালবাট্রস উড়া দিলে
তুমি বলো, হেমিংওয়ে
আমি কি পাব না জলে পূণ্য কড়িকাঠ!
কোর্ট চত্বর
সাদা -কালো বোড়ে সারি সারি
এ আড়াই চাল দিচ্ছে
ও বলছে সামলাও, নৌকা ডুবল…
রঙিন পোশাকগুলো
বিবর্ণ চেয়ে আছে দুইরঙা মসিহার দিকে
খাবারের গুমটি থেকে ধোঁয়া উঠে যাচ্ছে অনন্ত ব্যোমে
হার্লে ডেভিডসন একটি, পার্ক করা
উপরে দুটি মুরগি, উদ্ভ্রান্ত–সযত্নে হাগছে
এ মুহূর্তে কোন দাবীদার নেই, তাই তাড়ানোরও কেউ নেই।
অক্ষর নিলামে উঠছে, বর্ণমালার চোরাগোপ্তা ফাঁকে
পৃষ্ঠার ওপর পৃষ্ঠা– সূর্যাস্ত, উদয়
একটি অবোধ শিশু,মায়ের আঁচল ধরা ….লাট্টু ঘোরাচ্ছে
শিরদাঁড়ার প্যাঁচে, সেই লাটিমের বক্রগতি গাঁথা হয়ে আছে…
১৮ শতকের বাংলার ম্যাপ
একদা তাদেরও ছিল মঙ্গলাচারণ
বরণ করত এসে লক্ষ্মীশ্রী কূলো
গুয়াপান, সুপারি, ও সিঁদুরফোঁটায়
সে দরজায় এল
গৃহস্থের ধর্মগোলা– ধান্যরূপা, সুবাতাস
নীলগঞ্জের দিকে তারপর ঝরে গেছে কত হস্তিণী
নিঃসঙ্গ মাহুত, আর প্রাসঙ্গিক নও
নাব্যতার ম্যাপ জুড়ে সহমরণ শেষে
সার্কাসবাহিকা তুমি, পায়ে দলে আছ।
সূর্যের অস্তোদয় যবশীষে হাওয়া
খেলে যায় রাগরক্ত, রামধনু মায়া
প্রতিবার রজোঃদশা পেরোবার আগে
ঊষর প্রান্তর হয়ে পড়ে থাক, ভূমি।
কালপুরুষ
মহাকাশে নিঃসঙ্গ যোদ্ধা, আশ্চর্য নক্ষত্র এক- কালপুরুষ, তুমি
সঙ্গী শিকারী কুকুর, মুখে এক ম্যাজিক লন্ঠন নিয়ে
আমাদের পথ দেখায় স্থলে, জলে, বনতলে
মৃত এক নক্ষত্র যেন সেই অনাদি বনভূমি-
নেই কোন সুপেয় জল, কাঠঠোকরার শিস
তবু এক কম্পাসচ্যূত আলেয়ার মত পিছু, পিছু যাই- একাকী লুব্ধক!
তার নখরাঘাতে কম্পমান দেশে দেশে কাঁটাতার,
আঁচড়ে আঁচড়ে চলে বহুদিন ঘরছাড়া নাবিকের দেহ
ফুটো হয়ে জলযান, অসম্মানে ডুবে যায় ব্যাদিত ব্ল্যাকহোলে…
সে তোমার কে হয়? নিঃস্বার্থ আকাশ সেনানী? জারজ সন্তান? নৌচালক আকাশগঙ্গায়?
রিফু করে মহাকাশের চৌচির চাঁদোয়া , সময়ে সময়ে…
আমার মহাদেশ আজ প্রতিরক্ষাহীন
কোন গোলার্ধে তুমি- আশ্চর্য কালপুরুষ ?
তবুও একাকী এই সন্ধ্যা নেমে আসে….
উপাসনা
ধরো তুমি,
উপাসনারত, বুড়ো এক জামগাছ তলে
ছিঁড়ে ফ্যালো মাকড়শা জাল , পতঙ্গ-প্রলাপ
শুনে অতর্কিতে ওই জেলে নৌকা থেকে
ডিঙি মেরে হেঁটে আসে একাদশী চাঁদ।
প্রবাহসুখের ঘোরে গায়ে পড়ে উড়া জামপাতা
প্লাবিত নবদ্বীপের ভূমি, ঝারিখন্ড পথে গেল-
নির্জন সন্ত প্রতিভা; নীলাচলে প্রহরা মৃদুল
কবির সন্ন্যাস লোকায় পয়ারের ধর্মীয় স্ক্রোল
তুমি উপাসনারত আজো,
বুড়ো সেই জামগাছ তলে
জীবনের চোরাস্রোত অশ্বখুর বাঁকে
ফেননিভ বিজকুড়ি পরমার্থ কাদা মিশে মিশে
সুজাতার পরমান্ন ভেসে চলে অসীম বিচ্ছেদে…