দিনলিপি
প্রথম প্রেমের মতো শরীরের আড়ভাঙা গূঢ় কামনার
অস্ফুট রোমাঞ্চ নিয়ে আলো ফোটে স্বপ্ন ফিকে হলে।
অতঃপর দিন কাটে মোহে ও বিস্তারে,
দিন কাটে একটানা একঘেয়ে দীর্ঘ বিনোদনে—
আরও বেশি অধুনার অবরুদ্ধ এইসব দিন—
পূত শুভ্র কিশোরী কুসুম তার বৃন্তের দৃঢ়তা
হারিয়ে যৌতুক পায় সংসারশোভন ভালোবাসা।
তুমি স্থায়ী, তুমিই সঞ্চারী।
তোমারই মহিমে গড়া শুদ্ধ এই পরাক্রান্ত রীতি।
নিভৃত রক্তের টান এই গ্রাহ্য ভালোবাসাবাসি
যেন কোনও স্বপ্নের সহজ কথকতা থেকে
রুটিরুজি সন্ধানের রূঢ় পথে নিয়ে এলে দিন যায়—
মোহে ও বিস্তারে ক্রমে দিন যায় নিহিত অর্জনে।
দিন যায় অবরোহে, তোমার সাধিত সমারোহে।
রাত্রিলিপি
রাত হলে বহু যত্নে গড়ে তোলা সেতুগুলি
পূর্বাপর একা হয়ে যায়—
আরও বেশি অধুনার এইসব অবরুদ্ধ রাত—
সাঁকোগুলি হাওয়ায় ঈষৎ দোলে অথবা দোলে না,
চাঁদ-গলা জলে তার ছায়া ভাসে,
যেমন পিতার স্মৃতি ফিরে ফিরে আসে বারংবার
স্বপ্ন কিছু প্রৌঢ় হয়ে এলে।
রাত হলে সুন্দরের কায়া থেকে মায়া সরে যায়—
আরও বেশি অধুনার এইসব অবরুদ্ধ রাত—
অলঙ্কার একে একে খুলে রাখে পোয়াতি উচ্চাশা,
বিস্তৃত অমল চিদাকাশে
মেঘ জমে ইতস্তত অপূর্ণ ইচ্ছার মতো আক্ষেপ রঙের,
ক্রমিক নাছোড় পিছুটানে
ভালোবাসা ভাষা পায় আলো-ভাসা অন্ধগলি মনে।
রাত হলে তোমার করুণাঘন আঘাত সার্থক হয়ে ওঠে।
দিনরাত্রির খতিয়ান
তুমি পথ, তুমিই পাথেয়,
তবু এই নিরঞ্জন পঙ্গুতা আমার।
দিন যায়, রাত যায়—
অধুনার এইসব অবরুদ্ধ দিন আর রাত আমাদের—
স্পর্শহীন, গন্ধহীন, আলিঙ্গনহীন,
ব্যাহত সময় শুধু সারণীর অভিমান মেনে
প্রতিবিম্বে ধরে রাখে সহস্র মৃত্যুর বিনিময়ে
নিজস্ব নিশ্চুপ ইহলোক।
আলো আর অন্ধকারে ভেসে গেলে রূপ ও অরূপ,
বাহিরের সব ঝড় শুষে নিয়ে এই শান্ত স্থিতধী মুখশ্রী
তোমার বিমূর্ত গাথা রচনার আলো জ্বেলে রাখে—
তবু তার সমর্পণে কেন এত সুপ্ত হাহাকার,
কেন এই বীতপ্রজ্ঞ অনঙ্গ অগতি?
তুমি পথ, তুমিই পাথেয়,
তবু এই নিরঞ্জন পঙ্গুতা আমার!