কয়েকটি কবিতা :: পার্থজিৎ চন্দ

0
570

ভ্রমণ

তা হলে এমনই সন্ধ্যা লেখা ছিল বনের ভেতর

ছায়া নেমে আসে জলের মন্দির থেকে

সে ছায়ার হাত ধরে আমার ভ্রমণ শুরু হয়, এক জরায়ুর থেকে আরেক জরায়ু

মাঝখানে পাতা কাঁপে, ঝরে পড়ে দু-এক ফোঁটা জলের শরীর

সেক্সটনের মেয়ে

ভাঙাচোরা স্তনের ভেতর থেকে ভেসে আসছে এপ্রিলের আলো
একটি ক্যাথিড্রাল, পাখির ঠোঁটের মতো চূড়া
রোদ্দুর পড়েছে। তার ছায়ায় দাঁড়িয়ে তোমাদের বাড়ি যেন পাখিটির মৃদু শিস
তোমার মাথার কাছে বসে দেখি
রাত্রি-যোদ্ধা আর তার ফেলে যাওয়া শিফন রুমাল
বহুদূরে, কবরের পাশে জ্বলে থাকা মোমবাতি
সেক্সটনের মেয়ে, তুমি কথা বলা পুতুলের মতো
নিজেকে গল্প বল, নিজের মাথায় বিলি কেটে সারারাত
অসহ্য ঘুমের মধ্যে ঢলে যাও ধীরে

 

নোহার নৌকা

ছোট ছোট দু’একটি বাড়ি, জলমগ্ন

নৌকায় শেষ সম্বল তুলে হাতজোড় করে মানুষ কাঁদছে। মাঝি নির্বিকার

আরও দূরে গেলে দেখা যাবে নোহার নৌকা যেন, জলমগ্ন
শুরু হবে কোনও অচেনা প্রাণীর বসবাস

মূর্তি

একস্তনী দেবীর মূর্তি গড়ে
শিল্পী ঘুমাতে গিয়েছে। ঝকঝক করছে তারা, চাঁদহীন রাত। অ্যন্ড্রোমিডা ছায়াপথ
ভোররাত, শিল্পী দেখলেন
নিজে হাতে স্তনবৃন্ত চিরে দু’ভাগ করছেন, দেবী

ভূমিকা

এ আপনার ব্যক্তিগত অ্যম্পিথিয়েটার
আপনার ইচ্ছা মতো সংলাপ ও ঘটনাপ্রবাহ
শুধু নাটক শেষের পর অন্ধকার স্টেজ
একটি হত্যাকাণ্ড ঘটে
রক্ত ছিটকে এসে লাগে চোখের পাতায়

অ্যম্পিথিয়েটার, ট্র্যাজিক নাটক…
এ ভাবেই নির্ধারিত হয়ে যায় ভূমিকা আপনার

অন্ধ

পাতা ঝরবার মরশুম, আমলকী-বনে ‘বসে আঁকো প্রতিযোগিতা’র ধূসর বিকেল শেষ হয়ে এল; দলে দলে নিসর্গ-শিকারী এসেছিল একদিন, সারাদিন হেমন্তের নিথর গুহায় বসে তাকিয়ে থেকেছে গাছ ও টিলার দিকে। এরপর তারা দিগন্তের কাছে নামিয়ে রাখবে দৃশ্যগুলিকে…হাওয়া থমকে রয়েছে পাতার ভেতর, টিলা বেয়ে নেমে আসছে বিকেলের রোদ, একটি পড়ন্ত পাতার তিরতির কম্পনধ্বনি…তিল-তণ্ডুল মাখা পিণ্ডের মতো এ সবই থাকবে। থাকবে আরেকটি দৃশ্য’ও – এক অন্ধ শিল্পী তার ক্যানভাস নামিয়ে রাখছে ধীরে। পাতা ঝরবার মরশুম, অন্ধ…এক চৈতন্যভিখারি তার বৃক্ষধারণা রেখে যাচ্ছে আমলকী-বনে।