মৈত্রেয়ী রায়চৌধুরীর কবিতা

0
347
Maitrayee Roychowdhury

মৈত্রেয়ী রায়চৌধুরী (Maitrayee Roychowdhury)

বিজন রোদনা

আমার হাতে কখনও কোনও অস্ত্র ছিল না,
কোন হাতিয়ার নয়,
তবু, এতদিন তিলে তিলে গড়ে তোলা তিলোত্তমা, আমার ইমারৎ
এক প্রহরের সাইক্লোনে কীভাবে ভেঙে গেল!
আর ওই প্রবল ধূসর অবরোধকে যে আড়াল করে রেখেছিল সে উচ্ছল জলধিতরঙ্গ,
এক খরস্রোতা নদী।এতকাল
তা আমি জানতেও পারিনি।
সেই বন্ধনহারা উচ্ছলতা
প্রতিক্ষণে আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে চলেছে।
অবলোকন করি,
ভেসে যাচ্ছে আমার অহঙ্কার
যা আমার প্রেম অলঙ্কার।
প্লাবিত হয়ে অনুধাবন করি,
গভীর দীঘির চেয়েও গভীর মায়াবী তোমার
দু-চোখের ভাষা।
অনুধাবন করি,
সমুদ্র গর্ভ থেকে উঠে আসা
মৎস কন্যার গলায় তোমার গান।
দিশেহারা, প্রবল জলোচ্ছ্বাসে, ঢেউয়ের ধাক্কায়
ভেসে যাচ্ছে আমার ব্রম্ভচর্য, গার্হস্থ্য,আগামী বাণপ্রস্থ অথবা আগামী সন্ন্যাস।
জোয়ারের স্রোতে তোমাকে কোথায় নিয়ে চলেছে।
তবুও আমি নিশ্চুপ,ভাষাহারা। যা প্রকাশের সাধনার পথ আমার জানা নেই।
অজানা সাধনে যা পাওয়া যায় তা শুধু বিধাতার দেওয়া উপহার, প্রাপ্তি হয়েই থাক।
তাই নীরবতাই আমার অলিখিত প্রতিশ্রুতি,
আমার ভাষা।
পরম বিস্ময়ে তাই আজও বলি
নীরবতাই শ্রেয়,
এই আমার বার্তা।

 

কথা

প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষের সংঘাত
অতীত ইতিহাস হয়ে গেলে প্রত্যক্ষের অবসান।
যা চিরসত্য পরোক্ষ ভাবে,অথবা অবিন্যস্ত হয়ে
রূপ নেয় শিলালিপির ।
কোথাও স্থান পায় মন্দিরের স্থাপত্য হয়ে।
কখনো বা জীবাশ্ম হয়ে ইতিহাসের সাক্ষী হয়।
ভাস্করের ছোঁওয়ায় তা মান পায় ভাস্কর্যের।
সেই ঐতিহাসিক পোরো বাড়ীর এক কোণায় রাখা খাঁচা থেকে আজও যেন শোনা যায় –
পাখির ঠোঁটের সেই বুলি।
সব কথা আজও যেন দিনের আলোর গভীরে
লুকিয়ে থাকে।
মনে পড়ে, রবিঠাকুরের রেল গাড়ীর কামড়ায় হঠাৎ দেখা সেই ছেলেটির বলা কথা।
রাতের সব তারাই আছে দিনের আলোর গভীরে।
শুধু যাওয়া আসার স্রোতে ভাসতে ভাসতে
কথারা আসা যাওয়া করে।
সবুজ মটরশুঁটির ক্ষেতে প্রচ্ছন্ন ভাবে,অতীতের সরণী বেয়ে আসে পরোক্ষভাবে।
ফিরে আসবে বলেছিলে,মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে দেখো সেই শিলালিপি, বিস্ময়ে স্থাপত্যের দিকে তাকিয়ে
জানতে চেও অব্যক্ত সেই কথা
অবশ্য সব কথাই আজ ঘুমন্ত, পরোক্ষভাবে শান্তিতে তৃপ্ত হতে আগ্রহী।
কর্মহীন অবসর এবার তোমার দরকার ।
নদীর সাথে একাত্ম হতে না পারলে তার কলতান, জমে থাকা অনেক কথা বুঝবে কি?
সেই সব অনেক কথা জোঁয়ার ভাঁটার টানে কোথায় বয়ে গেছে কে জানে??

সেই অন্তহীন স্তব্ধতায়,গভীরতম স্রোতে নিজেকে মুক্ত করে মনে মনে স্নাত হয়ো।
নিরুচ্চারিত শব্দগুলো সংগ্রহ করে কথার জাল বুনো জীবনে আমার।
মিষ্টি সুরে বেজে উঠুক,বেজে যাক চিরকালীন অশ্রুত শব্দে বোনা সেই কথা।
অপেক্ষার, প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে বলে উঠুক
হাসি কান্না হীরা পান্না দোলে ভালে
কাঁপে ছন্দে ভালো মন্দ তালে তালে।