বইঘরের উদ্বোধনে, ভোরে
ঠান্ডায় হাড়হিম, সকলের নিঃশ্বাসে কুয়াশা বাড়ছে,
রাস্তায় বইঘরের উদ্বোধনে স্বরচিত জার্মান কবিতা পড়ছেন গিসেলা উইন্টারলিং।
এ হেন হিমাঙ্কের মাঝেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ভিড়, সাংবাদিকরা সুদৃশ্য খাতায় তুলে রাখছেন দৃঢ় পঙক্তিগুলি।
রাউএনতালার স্ট্রিট বেয়ে বয়ে যাওয়া গাড়িগুলি থামিয়ে নেমে আসছেন,
ছুটির সকালে, কিছু লোকজন। প্রতিস্পর্ধী ভিড়টা ক্রমেই বেড়ে উঠছে।
কবিতা মধ্যেই করিম ধরলেন স্যাক্সোফোন, গিসেলার স্তবকগুলির থেকে ঝরে পড়ল মূর্ছনার মীড়। জেগে উঠলো নিসর্গ, যদিও আদৌ এটা গোলাপের নিজস্ব ঋতু নয়।
আমার ডাক পড়তেই করিম ধরলেন বাঁশি, মনে হলো এবারই
প্রথম, কবিতারা পেয়ে গেল ডানা, পরিযায়ী পাখিদের মতো পাড়ি দিলো দিকচক্রবালে। ওরাতো উষ্ণতা খোঁজে।
পাখিরা হয়তোবা ততক্ষণে বিষুবরেখায়, আমাদের উৎসব শেষ। অভিনন্দন জানিয়ে গেলেন জনৈক পুলিশের কর্মচারী, মদিরার ফুটন্ত ককটেল বিতরণ চলছে এই ভোর সকালেই।
তবে সেই পাখিরা এখনও পৌঁছসংবাদ কিংবা সে দ্বীপের উষ্ণতার খবর জানিয়ে কোনো টেলিগ্রাম করেনি।
অমলেন্দু
রাইন নদীর ধারে কয়েক মিনিট,
বুনো ফুলে ঝাঁকে ঝাঁকে মৌমাছির দল,
ডাহুকের জলকেলী, মৃগেলের ঘাই
দেখে যদি এক্ষুনি তোর কাছে যাই?
কৈশোরের দামাল সাঁতারে
জুড়ি তোর মেলা ছিল ভার।
নৌকায় লগি ঠেলে এপার ওপার,
কচুরিপানার ফুলে ধ্যানে মগ্ন বক।
আচ্ছন্ন হয়ে খেলে স্মৃতির গমক।
অমলেন্দু, তোর আজ কি খবর বল।
শীর্ণতার উত্তরীয় উড়িয়ে আছিস?
কোন বিভুঁয়ের গ্রামে পল্লী তোদের?
তোর চুলে ধরেছে কি কাপাশ – কোরক ?
দুই দণ্ড বসা হলো রাইনের ধারে,
এবারে উঠতে হবে। প্রকৃতিকে ছেড়ে
বুকে ধরে নিয়ে যাব টগরের মতো
অমলেন্দুর যত হাসির মোড়ক।
বৃক্ষ
ফোয়ারার কাছে এসে মুগ্ধ হয়ে মেয়েটি দাঁড়িয়ে পড়েছে।
এতটা স্থানুর মতো যে তার শিকড় গজালো,
ডালপালা উজ্জীবিত হলো এতটাই, শালিকেরা অনবদ্য সভা জমিয়েছে।
রোদের প্রাচুর্য দেখ ঝরে পড়ছে ষড়ঙ্গে। অবুঝ
লতাগুল্ম জড়িয়েছে, আহ্লাদে, শরীর।
এই ভাবে কতক্ষণ লুকাবে একাকী,
এই ভেবে যখনই বলেছি,
ফিরে এস, ওক গাছটি আমাকে বলছে,
“প্রৌঢ়, তুমি বৃক্ষ হয়ে বাঁচবার আনন্দ কতটুকু বোঝো?”
কোনোদিন হাতে, বুকে তুষার ধরিনি,
মেঘবুকে বাড়াইনি প্রশাখা।
উর্ধবাহু তপস্যায় ডাকিনি মল্লার।
সত্যি আমি এ ব্যাপারে কতখানি জানি!
মেয়েটি চোখের সামনে গাছ হয়ে গেল,
ওর এই আনন্দ বুঝতে আমাকেও ওক হতে হবে।