Home বাংলা কবিতা

বাংলা কবিতা

  দিগন্ত বিস্তৃত হাওয়া যখন নিস্তব্ধ স্বরে কথা বলে চলে ফিরে আসার শব্দ পাই, ফিসফাস যেখানে খুব করে সবুজেরা ভিড় করে সবুজ আর সোনালি রোদের ব্লেন্ডেড মাদকতা যেখানে যেখানে, অথবা যেখানে অন্ধকারের মধ্যে নিশাতুর, গাঢ় সবুজের সাথে চোখাচোখি হয় সেই মাত্র মনে পড়ে খুব খুব করে মনে পড়ে হারানো সময় কেমন করে অনন্ত তোরঙ্গে বন্দি হয়ে গেল।
কিছুই চাই না আমি শুধু একটা গাঢ় নীল পর্দা টানা ঘর লাল রঙের একটি টেপ রেকর্ডার যেখানে একসঙ্গে সবুজ হলুদ আর নীলাভ সংগীত বেজে উঠবে। মধ্যাহ্নে গুঞ্জরনময় বৈদ্যুতিক পাখা থেকে ঝড়ে পড়বে সোনালি বৃষ্টি শিরায় বইতে থাকবে তীব্র স্রোত রক্তগোলাপের সমস্ত দরজা অপরূপ রহস্য নিয়ে বন্ধ হয়ে যাবে। আমার ভেতরে বেড়ে ওঠা নিবিড় সুগন্ধগুলো কোথাও পৌঁছবে না কোনোদিন। কোমল বেগুনি রঙের বিছানায় লীন...
গোঁফের রেখা স্পষ্ট হয়ে থেকেই খেয়াল রাখি, কে কতটা সুন্দর। কার গালের টোল ছাপিয়ে পড়ছে পিঠ অবধি চুলের গন্ধকে আর কে চামচ দিয়ে খাইয়ে দিয়েছিল খিদে পেয়েছে শুনে সব খেয়াল রাখি। তবু বুঝে উঠতে পারিনা কিছু, একা একা বহুদিন হলো। প্রথমে ভাবি, বান্ধবীদের প্রেমে পড়তে নেই, তারপর মনে হয় বান্ধবী ছাড়া কারোর প্রেমে পড়তে নেই; বড় একা...
তোমার রূপের বর্ণনা আমি লিখে রেখে গেছি, পাথরে খনিজে যেভাবে শস্য প্রবাহিত হয় ফাটলে ফাটলে, জেগে থাকা বীজে তোমার চোখের অশ্রুর মতো হাতের পাতায় ঝরে পড়ে জল যেন ঝুঁকে আছে মহাকাল, যার বৃষ্টির ফোঁটা শুধু সম্বল তোমার হাসির দমকে দমকে আধখানা তিল, ওপরের ঠোঁটে যেন সমুদ্রে ভেসে থাকা চাঁদ, ঝাউবন শুধু একা দুলে ওঠে আমি ফিরে এসে সেসব লিখেছি ভুর্জপত্রে, খোলা প্যাপিরাসে আর...
অরনি তোমার স্তনবৃন্ত থেকে দেখো জন্ম নিল দুধ-চারা আদর তাকে দেয়নি নিরাপত্তা তারা জল-কোষ থেকে স্নেহ মাখছে নীরবে পুষ্ট হচ্ছে অভিমান তারা স্পষ্ট হচ্ছে আদিমতায় মেঘ-রস তাদের ছুঁয়ে যায় গোপনে রেণু আদর পাঠায় তীব্র বৃন্ত "কামড়" আঁকড়ে ধরে বাঁচে তবু ভয় হয়- কোনো অমঙ্গল-অমাবস্যা-রাতে, দল বেঁধে আসে তারা, জংলী-জানোয়ারের মতো ছিড়েখুঁড়ে খাবে স্তনবৃন্ত, অভিশপ্ত তোমার দুধ-চারা লুকিয়ে রাখো শত-বর্ষ গভীরে, হাজার পশম-কোলে, শুষ্ক-ঠান্ডা...
ভেতরের দিকে ঢুকে এলে গাঢ় জখম। মৃত্যুর নেশার মতো ঘরের চতুর্দশ সম্ভাবনা নিয়ে আমি হেঁটে যায়। রাস্তার অসুখ, মহুয়ার গন্ধ নিয়েও মন্ত্রের জাদুর মতো খুলে ফেলো প্রায় সমস্ত নিয়মিত পাপ। পাইপ বেয়ে নেমে যাও আরও নীচে যেখানে ভূ-গর্ভস্থ জরায়ু ফুটে আছে নেশা করো। নেশা করো ঈশ্বরের অষ্টম আয়ুধের পাশে। শত্রুর দিকে তাকাও কৃতজ্ঞতাবোধে, সেই আসলে...
যে যে নাম বাকি ছিল সব দেওয়া শেষ! মধুরে আরতি করি, নদীতে নদীতে তার দেখি প্রতিচ্ছবি একবার চোখ খোলো একবার ডেকে ওঠো : কবি! আমি নই, আমার সকল ছদ্মবেশ-- গোধূলি গগনে ঢাকা তারার শরীর তুমি তো অপ্সরা দ্যুতি দিনান্তের তরী আকাশে আকাশে ওড়া পক্ষী তুলনীয় পর্বতে আঁচড় কাটা অধরা পানীয় ধারা হয়ে নামে বুকে ছোঁয়া মাত্র জেগে...
বুকের ভিতর দৌড়ে বেড়ানো অসুখ শূন্য থেকে নেমে আসে বারান্দায়। আকাশ জুড়ে হামাগুড়ি দেয় ঈশ্বর অদৃশ্য, অস্তিত্ব তবু অন্তহীন-- আমি দু:খ ভাঙতে রোজ হাঁটু গেড়ে বসি, এনে দিই ফুল, ফল, চন্দন ইত্যাদি। জীবনের জাঁতাকলে পিষে কিনে নিতে চাই আরও কতকগুলো জন্ম। নেমে আসে ঝড়, নিজেরই ছায়ার কাছে অকেজো লাগে। যে জীবন আয়নায় দেখি রোজ নাভিকুন্ডে জ্বেলে রাখি আগুনের প্রতিচ্ছবি জ্বরের পরব...
ভালো লাগে না ভালো লাগে না এভাবে খুর চালাতে স্তব্ধতার গলায় কামধেনুর বোঁটা থেকে গলে নামছে দুধের ঝরনা আমের শাখা কাঁপে চাঁদের চুন্বনে থরথর এ সময় যদি নদী থাকত কোনও আমার জানালার পাশে থাকত যদি মাধবীলতা অথবা শেফালি আমি আর কোনওদিনও শুনতাম না ভৈরব রাগে আলাপ
বৃষ্টি শুধু বৃষ্টি অবিরাম শুধু বৃষ্টি ঝরছে ঝরে পড়ছে খোলা দুই চোখে শুভদৃষ্টি শুভযাত্রার কত দেরি আর, কানে আসবে কি তার শব্দ যে অবিরাম ঝরে শ্রাবণে করে সবাইকে ঘোর জব্দ? বৃষ্টি শুধু বৃষ্টি সে কি যথেষ্ট জোরে ঝরছে আমার যে স্নান প্রয়োজন সে কি তেমনটা দান করছে? যারা হল ভিজে টইটম্বুর তাদের তো এল মুক্তি করে...
পুরনো দিনের কথা মনে পড়ে। খাটের কোনায় শুয়ে মাথার ভিতরে থাকে অচেনা অট্টালিকা, প্রহরের বাঁশি। বেহালা বাজিয়ে ওঠে, কতিপয় ব্যথাতুর সদ্য কিশোর। সেইখানে পূর্বজন্ম - রেখে কোন এক মরা খালপাড় জুড়ে আমাদের স্নান স্নান খেলা। রাস্তার পিচে লাগা কালো বল প্যান্টের ঘষা, সদ্য গোঁফের রেখা মৃদু হাসি, বড় বড় চোখ। সে খেলায় হেরে গেছে, এখন আর নামবে না মাঠে, বড়জোর বেহালা বাজাবে। এখন...
পিরিতে বর্ষা লেগে আছে শ্রাবণ বাতাসে গলে অভিমান জর্দা চোয়ানো রঙে থমথমে জল বেপাত্তা ভেসেছি এতদূর, জোছনাবাটিতে কারা রাত্রি জাগে? পাহাড়তলিতে পড়ে থাকে পদচিহ্ন গাঁয়ের মোড়লের চাবুক বাজাচ্ছে প্রাণে ভুল হল তবে এতখানি ভালোলাগা? কংসাবতীর জলে কাদা বাড়ায় ধর্মাবতার পাখিরা হেসে উঠেছিল তারপর বনপথে ছাতা খুলে দাঁড়ায় করম পরব ভাদরিয়া ঝুমুর গীতে বাড়ে উদাসি মায়া
শংকর দেবনাথ (Sankar Debnath) ক্ষমতাসীনের প্রেম ৪ চাষির লাঙল আর মাঝির বৈঠা সমানুপাতিক ৷ লাঙলের ফলা ফালাফালা করে দেয় জমির হৃদয় আর বৈঠা কাটে নদীর নাব্যতা মেনে জলের শরীর বস্তুত ক্ষমতা-হাত গোলা ভরে আর পৌঁছে দেয় গন্তব্যের প্রিয় ঠিকানায়। প্রকৃত প্রস্তাবে প্রেম জোরাজুরি চায়।
মিতালি চক্রবর্তী  (Mitali Chakraborty) স্বপ্নসর্বস্ব তারপর ভিন্নতা হাল ছেড়ে দূরে সরে যেতে চাইল প্রিয় গান সুরের ভিতর রয়ে যাবে অনন্তকাল, এমনটাই ঘটে গেল পাতাবাহারের ফুল দৃষ্টিনন্দন হতে পারেনি, প্রিয়তর হতে চেয়েছিল প্রাণপনে নিরালম্ব গোপনে। সমস্ত দিন কেটে যাওয়ার পর অনাবিস্কৃত রাতটি জেগে ওঠে... নতুন একটা দিন প্রসাধন সেরে ফেললেই তার ছুটি। এইভাবে সমাহিত ঘুমের বিকল্পে উৎসাহিত আত্মরতির অভিসার চলে আয়নায়।
সাহানুর হক (Sahanur Hoque) আঁধি আমি একদিন খুব ভোরে নগ্ন পায়ে দেদার বেরিয়ে পড়ব ছায়াপথের মতো পথে, উপন্যাসের মতো দীর্ঘায়িত উটের শহরে সীমানা পেরিয়ে খুব কাছে যখন বাতিস্তম্ভগুলি নিখোঁজ তোমাকে নয়, তোমার মতো কাউকে ছুঁয়ে দেখব ক্যাকটাসের পাতায় দংশনের ব্যাথায় খুঁজব তুলসী পাতা শুনশান মৌন পৃথিবীর উপান্তে ঈশ্বরের ছায়ার অন্বেষণে আমার পাশ কেটে চলে যাওয়া আঁধির পিছনে ছুটতে...
দেবার্ঘ সেনে (Debardha Sen) মান্দাস ভাঙা আদর্শের চাদরে লেগে আছে রাত ধাপে ধাপে আবাদ, তোমার আমার। শুধু আমার কাছে শাঁখা ভেঙে নিঃশুল্ক লাল চেয়েছিলে। আধুনিক আজ হয়েছে উত্তর তুমি মান্দাসে বইয়ে দিয়েছ তোমার সকল চুম্বন। আমাকে কেউ ডাকেনি রক্ত প্রবাল কুমারী সৈকতে এসে পড়ছে, শেষ পঙক্তির আলো...   বৃথাজন্ম প্রশ্রয়ে আজ পতন লেগে আছে হারিয়ে গেছে রাইজোবিয়াম বেদনা কোনও উপত্যকা নয়। এপিঠ ওপিঠ আমাকে শুধুই স্থবির করে দাও... ধোঁয়া ওঠা গরম...
শর্বরী চৌধুরী (Sarbari Chowdhury) ব্যর্থ নিজের পায়ের ছাপ দলিত করি নিজেই ছায়া হেসে ওঠে বালুচর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে গর্ত খুঁজি, যেখানে লুকোতে পারব নিজেকে। দিনবদলের গান শুনতে পেলে দুহাতে চাপা দিই কান। অসহায় অপারগতায় ক্রুদ্ধ হই নিজের ওপর ! সাফল্যের অতিরিক্ত কিছু চাইনি জীবনে, আজ সাফল্যের হাঁ-মুখ গিলে খাচ্ছে আমাকে। এ-ই আমার একমাত্র ব্যর্থতা !   ভয় আমি ভীত একটি শরীর পেয়েছি বলে ভীত...
প্রণয় বটব্যাল (Pranay Batabyal) হ্যাশ ট্যাগ শীতের পাঁচালী ১. রডোডেনড্রন,দেখতে পাচ্ছিস? আজ শীতকাল ঝরাপাতা,তালতলা পিকনিক স্পট! দুটো পায়ে ভর দিয়ে বরফের দেশ থেকে আয় এখানে লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকি পাইন আর বার্চ মুকুট পরুক নৈর্ব্যক্তিক স্বপ্নের মতো টান দিয়ে এক একটা রাতে আরো ঠান্ডা পড়ুক! ২. মুড়কি মুড়ি মোয়া, কিরে কেমন আছিস? প্রতিটা দিন দুপুর ঘুম,আউটিংয়ে নার্সারি সন্ধ্যে শাঁখ আর ঝিঁঝির...
সুদীপ দে সরকার (Sudip De Sarkar) আত্মপ্রকাশ দাঁড়াও কথাগুলোকে মাজাঘসা করে নিই একটু তোমরা বোসো ফোনের সুইচ্‌টা অফ্‌ করাই থাক্‌, বড্ড বিরক্তিকর--- এটা তো জানোই যে আমার দেরি হয়ে গেছে বেশ খানিকটা ওই যে জানলা-দিয়ে-মুখ-বাড়ানো রোদ্দুর ওই যে অসময়ের ডাক, কোকিলের --- ওরা জানে একবার যখন আমি পা বাড়িয়েছি তখন আর কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না আমারে। ফুটো পকেট থেকে এতটা সময় পড়ে গেছে ঝরে...
আভা সরকার মণ্ডল (Ava Sarkar Mandal) ভেসে গেলে পাথরের খাঁজে খাঁজে আটকে থাকা মনের কথাগুলো কবে যেন ভাব জমিয়ে ফ্যালে বয়ে চলা চপল স্রোতের সঙ্গে সুখ দুঃখের গল্প করতে করতে তারা ভেসে চলে আনমনে --- চারদিক থেকে অনিশ্চয়তা ঘিরে ধরলে আকাশের প্রচ্ছদে আষাঢ়ে মেঘ আর জলের বুকে প্রবল ঢেউয়ের দাপাদাপি সম্বিৎ ফেরায় ঠিক তখনই বোঝা যায় একবার ভেসে গেলে উজান ঠেলে তীরে...