তখনও তো ওরা কেউ শরীর বোঝেনি
প্রেমের গন্ধ ছিল টিউশন জুড়ে
এলোমেলো চুল তাতে লাল নীল গার্ডার
সপ্তাহে তিনদিন মন ফুরফুরে।
ওরা কেউ চেনে না কি, আদরের মায়া
শুধু বোঝে কালো শার্ট, নীল চুড়িদারে
একটুও হাত যদি লেগে যায় হাতে
দিনটা দিব্যি কাটে নচিকেতা সুরে।
এইভাবে ফেলে এসে সময়ের ক্ষত
হঠাৎ বজ্রপাত, গড়িয়ার মোড়ে
অটোর লাইনে জ্যাম, মেঘ করে...
আমাদের হাঁটা-চলায় দোষ অনেক
হুজুরের করণকক্ষের ভেতরে ঢুকে চোখে চোখ রেখে
সরাসরি তাকিয়ে বলি : ‘আমি কী আসতে পারি স্যার’ ?
তকতকে পরিষ্কার রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে
এমনি এমনি হোঁচট খেয়ে পড়ি
হাঁটুতে ব্যথা নিয়ে ভুগি দু’চারদিন।
আমাদের দেখা-শোনাতেও দোষ অনেক
যেটা দেখি সেটা প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে মেলে না
যেটা শুনি সেটাও ‘কোট আনকোট’ জিভ থেকে সরে না।
অদৃশ্য কেউ...
আমেরিকা সাত, ইউরোপ পাঁচ, রাশিয়া সাকুল্যে চার দিন
জীবনের বাকি দিনগুলো আমি চেয়েছিলাম তোমাকে দিতে
ফোড়নের মতো দপ করে জ্বলে উঠে
তুমি, কয় মন অসন্তোষ ঢেলে দিলে...
অথচ আমাকে ধরে রাখতে চেয়েছে, সমুদ্দুর
সামুদ্রিক ফ্যানা, সে-ই আরব্যরজনী, এক একলা আকাশ
চীনের প্রাচীর
আজও দেখো রয়েছে একই
কত পর্যটক প্রতিদিন আসে যায়!
ব্যবধান গড়েছে সময়
শীতের শহরে, বস্তা, আরাম যখন
রূপকথা...
আলমবাজার গঙ্গার ঘাটে যেদিন কবিতা পড়েছিলাম
বারোজন শিব নিথর বসে শুনেছিলেন
অশ্বত্থের পাতায় পাতায় বেজেছিল মৃদু মুগ্ধতা
দক্ষিণেশ্বর ঘাটে যেদিন পড়ছিলাম
নৌকো এসে পছন্দের শব্দগুলো পৌঁছে দিয়েছিল মন্দির থেকে মঠে
রতন বাবুর ঘাটে কবিতাপাঠের দিন মৃণ্ময় ঠাকুর হঠাৎ বলে উঠেছিলেন --
তুই শালা কবিতা দিয়ে একটা নাভি বানা দেখি!
আহিরীটোলায় কবিতার ফাঁকে ভেসে যেতে দেখেছি
দেবীগন্ধ ছেড়ে...
তোমায় দিলাম পদ্মনাভ ভোরের
আকুল-বিকুল শিউলি ফুলের ঝরা,
তোমায় দিলাম অন্তরঙ্গ ঘোরের
রক্ষাকবচ। পাখির রাতচরা
দেখাক তোমায় তাদের বুকের ক্ষত
গোলাপকাঁটায়,যে যন্ত্রণায় গানের
গভীরতায় অরণ্যময় যত
বৃষ্টি ঝরায় ছন্ন অভিমানে।
তোমায় দিলাম মন খারাপের গলি,
বিকেল বেলার মেঘলা প্রতিশ্রুতি,
যখন তোমায় মনের কথা বলি
বোঝো আমার সমগ্র বিচ্যুতি?
ঢের দিয়েছ এতেই বোঝাই খাতা
স্বভূমি আজ প্রাচীর দিয়ে ঘেরা
তবুও ডাকো অবাধ্য কলকাতা!
হৃদয় যখন...
রাধার ছিল শতেক ঘোড়া, জিনপরানো
একলাপথে হাঁটছে তবু, রাজকুমারি
পথ পাথরে বেবাক তাকে ভুলিয়ে দিল
তারও আছে চকমেলানো রাজার বাড়ি।
কৃষ্ণকিশোর মাঠ চিনেছে ঘাট চেনেনি!
যে ঘাট বেয়ে নামছে সিঁড়ি রূপসায়রে
কে দিল তার বাঁশির বাতাস, চুম্বনে স্বাদ
কেউ কি জানে? রঙ-বেরঙে কুৎসা ওড়ে
আজকে যখন কৃষ্ণরাজের কলটি নড়ে,
মিথ্যে তাকে 'ধর্ম' নামে উঠছে ডেকে!
বাঁশির ফুঁয়ে দেশপ্রেমের ওড়ায়...
অর্কেস্ট্রা শোনার পরে বেঁচে ওঠে, এই গ্রামে নাকি রয়ে গেছে এমন যুদ্ধজাহাজ কারখানা
বৃষ্টি শেষে শুনশান চারদিক, রাস্তা জুড়ে হেঁটে চলেছেন ভ্যান গঘ আর বিটোফেন
চোখ থেকে স্বপ্ন খসে পড়ে, আলোহীন সম্পর্কের কথা ভাবি
মাথা নিচু জানুয়ারি সরে গিয়ে দাঁত বসাচ্ছে চরম ফেব্রুয়ারি
নাবিক ফিরেছে ঘরে সুতোকাটা ডিমের উল্লাসে, প্রতিটি বন্দরে জমানো হতাশা...
নিবিড় নিঃসঙ্গ হয়ে যাও
এখনো ভিড়ের মাঝে ?
কেন? কতটুকু ব্যথার ঘ্রাণ পেয়েছো কোলাহলে?
গা থেকে কিশোরীগন্ধ মুছে দিয়ে
অরণ্যে যাও, আলিঙ্গন করে এসো গাছ
শিখে নেবে কত বড় বড় কাজ শান্তভাবে
নীরবে নিভৃতে করা যায়।
সেইক্ষণে
মনও ভরে যাবে ফুল ফল পাখির কূজনে।
ফিরে এসো জনসভা থেকে
ফিরে এসো ভিড় থেকে
বুকে থাক অরণ্যের পাতার মর্মর ধ্বনি
এখনো ভিড়ের মাঝে...
ভেবেছিলে ওই পারে শালবন আছে?
দীর্ঘ আর ঋজু। তারা কথা বলবে চোখে চোখ রেখে
ওই দিকে সুশীতল হাওয়া বয়, নক্ষত্রের ভিড়
তোমার নিষ্পত্র শিরে আঁকা হবে জ্যোতির-বলয়?
এপার মলিন বড়। আলোহীন রোগা ভালবাসা
মাঝারি মাপের, তাই মিহি অজুহাতে
ছিঁড়ে ফেলে স্নেহ-রজ্জু, গা থেকে খসিয়ে ফেলে প্রত্নপরিচয়
হেঁটে যাচ্ছ ওই পারে, যাও...
ওপারে এখন একা, দীর্ঘতর ছায়া পড়ে...
নিমগ্ন দীঘির মুখোমুখি বসে বুনছি রুমাল
রুমালে লিখছি চিঠি পিগমিদের মতো
তোমার তানপুরায় জাল বুনে চলেছে মাকড়শা
সেই জালে সরগম সাধছে বিকেল।
বিষণ্ণ মেঘে তিরিতিরি কাঁপে খেপলির জল
সেই কম্পনে ধরে রাখতে চাইছি সুর
অপেরাঘরের মতো পদ্মপাতার জলে
সিমফনি বেজে চলে উদ্দাম চুম্বনের মতো।
জোছনা আয়না জুড়ে বেহালায় তর্পণ বাজে
জুপযন্ত্রের মতো মৃতদেহ সেলাই করেছি
তখনও কাঁপছে দেখি চোখের...
চারিদিকে নিস্তব্ধ অন্ধকার
আলগোছে উড়ে চলেছে মেঘ
ভেঙে পড়েছে ধৈর্য্যের সীমানা
দুই দেশের মাঠের ওপর ভরা পূর্ণিমা।
এখানে রাত জেগে থাকে
দিনের আলোর মত
অন্ধকার ঘুরে বেড়ায় গুটি পায়
আলো এক হানাদারীর নাম
গোপনে ধ্বংস করে আবেগের গোপনীয়তা।
তোমার পরিশ্রম ধোয়া শীতল জলে
একফোঁটা নোনতা স্বাদ লেগেছিল
সন্ধ্যা নামার আগে
পাখিরা ফেরার আগে ভাবে
মাটির ভেতর থেকে
জলের ভেতর থেকে
সবটুকু সুখ ছেঁচে নিয়ে...
প্রকৃত শোকের কাছে সবকিছু তুচ্ছ হয়ে যায়
রোজকার জীবনের শীত, গ্রীষ্ম, মামুলি ঋতুরা
প্রকৃত শোকের আছে নিজস্ব উচ্চতা, সম্মোহন
ধ্যানের স্তব্ধতা আর আত্মার গভীর উচ্চারণ
প্রকৃত শোকের কাছে মাথা নত হয় অনায়াসে
ছড়ানো- ছিটানো যত লোভ, সব অর্থহীন লাগে
প্রকৃত শোকের আছে বেদনার গোপন আহ্লাদ
সুরের নিবিড় স্পর্শ, প্রার্থনার মতো মন্ত্রধ্বনি
প্রকৃত শোকের কাছে যেতে হয় খুব...
২৩শে মার্চ থেকে, বাড়িতে পাখি আসে শুধু ,
ফাঁকা ছাদে তারা চোখ মোছে –
আমাদের দেখা হয় না তবুও
সকালের আলো দেখে মনে পড়ে, চিঠি আসতো একদিন
পথে পথে লম্বা হয়ে শুয়ে থাকে ছায়া, বৃক্ষ,চরাচর
আকাশ ভরে যায় শোকময় প্রার্থনায়
বন্দরের ঘন্টা বাজে – বেজেই যায়
মুসাফির সব ফিরে গেছে বলে, শূন্য বিকেলে চৈত্র ওড়ে
একা !
খবরে...
আমাদের আর কিছু নেই শুধু
জড়িয়ে ধরতে পারি
বাজ বিদ্যুতে ঝড়ে বা তুফানে
হাহাকারে মহামারি
যা আসে আসুক বুঝে নেব
এই বুকের কলিজা পেতে
তোমার জন্য রুটি রাখা আছে
তোমার জন্য ভাত...
এসো আজ এই গল্প করবো
পথ দিয়ে যেতে যেতে...
যাই হোক যদি অন্যায় দেখো
নোয়াবে না আর মাথা..
তোমাকে লিখছি চোখে চোখ রাখো
সন্ধ্যার ঝরা পাতা ...
মতলবটা তোমার বুঝে ফেলেছি চাঁদবদন
হাড়-পাঁজর আছে ক'খান তা-ও চিবিয়ে খাবে
হেঁশেলে তো আগেই ঢুকে পড়েছো বাছাধন
ভাতের হাঁড়িটাকেই আখেরে কেড়ে নিয়ে যাবে।
জানি গো কত্তা, ভাতে মারার কৌশল তোমাদের
গাওনা গাওয়ার আগে করো কত্ত ধানাইপানাই!
গরিবগুর্বো, ভাতের হাঁড়িটাই সম্বল আমাদের
তারচে' বেশি চাওয়া পাওয়ার অধিকার তো নাই।
প্রেম বিলাতে এসেছো, সেজে নদেরই নিমাই
প্রেমের আগুনে পুড়ে যদি...
ক্ষতনিঃসৃত নিদ্রার ভিতর জেগে আছি,
বিভ্রম নেই
কিছু জোনাকি এসে কুড়িয়ে নিয়ে যায় যাবতীয় নীরবতার বিস্তার
দূর নক্ষত্রে সান্ত্বনা খুঁজি। প্রস্তর যুগের ছেঁড়া পালক হয়ে বেঁচে উঠি
শান্ত দেহ থেকে উঠে আসে দারুচিনি কাঠের গন্ধ
দেখি, এক শীতকাল, সর্ষে-হলুদ শাড়ি পরে
আমার জন্য দু’হাত ভরে তুলে এনেছে শুষ্ক বরফ
আমি বয়ে যায়। জৌলুসে, উত্তাপে, অজ্ঞাত অসুখবোধে
নেশা...
একটা লোক বাসের পাদানিতে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পড়ল একদিন
ঘুম যখন ভাঙল,দেখল,এ পৃথিবীতে আর বাস চলে না
কোথাও কোনও ট্যাক্সিস্ট্যান্ডও নেই
চলে শুধু হাওয়া আর পাটাতনে রাখা সময়...
বাসের জানলাগুলো খুলে নিয়েছে কেউ,বসার সিটে তা দিচ্ছে পায়রা
এক গায়ক তারই মধ্যে গান গাইছে ইলেকট্রিক গিটারে
স্টেশানের ভেতরে,বাইরে প্রেমিকার মতো মেয়েরা উড়িয়ে দিচ্ছে হাহাকার…
একটা লোক...
প্রাচীন গুম্ফা থেকে ভেসে আসে মেঘ
যেন বহুদূরের বারান্দা থেকে তুমি হেঁটে এলে ধীরে
অর্কিড-উপত্যকায় সন্ধে নামছে এখন , ঘন হয়ে উঠছে ধোঁয়াকুয়াশার মরসুম
আমার আর কিছু পাবার নেই, কিছু হারাবার নেই
পাইনবনের পথে ওই দ্যাখো হাতে হাত আমাদের ছায়া
বাচ্চা লামারা ফুটবল খেলছে কিছুদূরে
আমি কোনদিকে যাবো বুঝতে না পেরে
শেষমেষ খাদের দিকেই চলে যাই
এতো...
যেখানে সেখানে মরব না আমি। যেমন তেমন করেও নয়।
অনেক আর্তি, অনেক কাতর ভিক্ষা, বহু আনত জ্যোৎস্না মাড়িয়ে,
এতৎকালের জমানো সব পুত্তলিকাপ্রবাহ;
দু হাতের নখে ছিঁড়ে ছিঁড়ে ফেলব শ্মশানচারী শৃগালের মত।
যত পলাতক পরীদের দল, আর রক্ষে থাকবে না হাহাকারে।
যত আমন্ত্রণ, যত নিহত শিশু পঙ্গপাল সব সব ছত্রভঙ্গ হবে -
দানব হুঙ্কারে। হে ক্ষত্রদেবতা,...
পৃথিবীর সেরা বেহালা বাদক জসুয়া বেল
ওয়াশিংটনের সাবওয়ে স্টেশনে
ঘন্টাখানেক বেহালা বাজালেন
সাতজন শ্রোতার সামনে ।
তারমধ্যে একজনের বয়স তিন
একজন মাত্র চিনতে পেরেছিলেন তাঁকে।
হুগলির ওভারব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে কবিতা পড়েছিলেন
একজন। যেখানে শ্রোতার সংখ্যা ছয়
একজনের বয়স নয়
কেউ চিনলো না তাকে
কোনো কমেন্ট কোনো শেয়ার কোনো লাইক থাকল না
শুধু দুন আর শতাব্দী এক্সপ্রেস
শব্দ করে চলে গেল দুদিকে
উড়তে...