উড়ালের আগে যতটা আড়াল
যেভাবে গান মিহি হয়ে আসে রাতের দক্ষিণে
নামে বেনামে চিনে নিতে থাকি মানচিত্র
সুড়ঙ্গেরও নিচে, যেখানে টান জন্ম নেয়
ডাকে, ডাকে, ডাকতেই থাকে
আর কত নিচে নামবো!
প্রতিবর্তে স্পষ্ট হই রোজ
কনিষ্ঠ সময় চিনি। আমারই বরেণ্য ডালে পাখি
জ্যোৎস্নায় ডানা মেলে, শালবনে আলো মাখামাখি—
অবাধ মৈথুন শেষে ফেরে। ফের, উড়ে যায় বনে
বিষাদ প্রস্তর ভেঙে পথ তৈরি করেছে যাপনে…
কখনও রক্তাক্ত তির, ক্রৌঞ্চশাবকের ডানা ছিঁড়ে
বেপথু ও পরাহত। শবরেরই আকন্ঠ নিবিড়ে
গভীর আশ্রয় চায়… চায় শব্দে উচ্চারিত হোক
বহুবর্ণ সময়ের ওড়াউড়ি স্তব্ধ করে, শ্লোক—
সে-শ্লোক বন্ধক রেখে সময়ের...
জাল যদি বুনে নিতে হয়
তবে দেরি কিসের
মাছেরা যে প্রস্তুত
সমর্পণে
সে পাল্লা হোক কি
রুই মৌরলা
বোকা স্ক্রিন, পণ্য নীতি
রঙিন চশমা, জিপিএস
আমরাও জালের তলায়...
ফুলের বাগান করার অভিজ্ঞতা নেই, বিড়াল পোষার অভিজ্ঞতা নেই। তবু একটা বারান্দা আমিও চেয়েছি। বারান্দার দড়িতে ভাঁজ করে ঝুলিয়ে রাখব জঙ্গল, কিছু পাখির ডাক, একটা পাহাড়ি নদী আর তাতে পা ডুবিয়ে তোমার হেঁটে বেড়ানো। যে রঙমিস্ত্রির দেয়াল রঙ করার কথা ছিল, বালতিতে রঙের ব্রাশ ডুবিয়ে ফিরে গেছে, তার উৎকণ্ঠাও...
বারবার ফিরে যাচ্ছ, বারবার, কতবার শূন্য ক্রোধ নিয়ে
আমার কোনো মনখারাপ নেই একথা আঙুল তুলে বলে দিচ্ছি তোমাকে
পৃথিবী নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে, শস্যভূমিতে কাৎ হয়ে পড়ে আছে কাকতাড়ুয়া
রুক্ষ মাটি বন্ধ্যা, হা-হা অন্ধকার পেটজোড়া খিদে
কথোপকথন হলো না, নদী উলটে যাচ্ছে, জল গড়িয়ে আসছে বারান্দায়
তুমি ভয় পাচ্ছ না, তুমি চমকে উঠে জড়িয়ে ধরছো...
অসুরের মুখে আমাদের শান্তিকামী জননেতার মুখ
আমাদের অহিংসার ক্ষত
নতুন নতুন পথ খুঁজছে মুখ লুকোনোর
বছরের পর বছর
কাকে চির অশুভের প্রতীক বানিয়ে
ত্রিশূলে বেঁধা কার হত্যাকান্ড দেখে
আমরা পথ খুঁজছি মঙ্গলকামনার!
আমাদের মঙ্গলঘট রক্তমাখা
আমাদের শান্তির দেবতার দিকে
নিত্য উঁচিয়ে ধরছি
ধর্ম আর মতবাদ-অন্ধতার ত্রিশূল
পাঁচ হাজার বছরের ইতিহাস পেরিয়ে
দিগন্তব্যাপী সত্যাগ্রহ আর অনশনের শেষে
কে আজ একফোঁটা...
হাঁসের ডানার ছায়ায় কেমন রহস্যময় মনে হয় সবকিছু।এই মাঠ প্রান্তরের ভেতর ধান লুকিয়ে
রাখছে ইঁদুর।নদীতে ভেসে আসা কাঠের বন্দুক।
ঘোড়া হারানো সেই বিষন্ন জোতদারের কথা খুব মনে
...
কতকিছু প্লাবিত হয়ে যায়
বাবাকে দেখেছি ভাসমান নৌকোর মতো
ভেসে যেতেন এঘর ওঘর,
শাঁখের ধ্বনি শুনে কী ভাবে সন্ধ্যা হয়-
রক্তাভ আকাশ, তাও দেখেছি। শুনেছি
এই নৌকো, এই শাঁখ নাকি বংশের পরম্পরা।
বাজার থেকে মরামাছ এলে হাবুডুবু খেতো
উঠোনের জলে,
তা দেখে বঁড়শির মতোন হাসতেন ঠাকুমা,
সাদা থান ঠেলে ঝুলে পড়তো জীবনের অস্তরেখা।
আমরা যারা ছোট্টো...
অনেকদিন প্রণাম করা হয় না কাউকে,
বৃষ্টির দিনে সাদা জামা পরে, ছাতা হাতে মানুষকে দেখলেই কেমন যেন মাস্টারমশাই বলে মনে হয়...
কালো মেঘের মতো দুর্নীতি ছেয়ে আছে আমাদের সবার উপরে;
ছুটে গিয়ে জিজ্ঞেস করি,
"কোন পথে যাব স্যার... এত বিভ্রান্তি, এত হাতছানি, এত অন্ধকার,
কোন পথে যাব স্যার?"
- "যে পথে গেলে আয়নার দিকে...
আমার রক্তের মধ্যে আজীবন সমুদ্রের শব্দ শোনা যায়,
সমুদ্রের কাছে আমার যাওয়া হয় না খুব একটা।
তবু অফিস- বাড়ি, বাড়ি - অফিস করতে করতেই সমুদ্রের ডাক আমার শিরা উপশিরায় কোলাহল কল্লোল তুলে আসে।
প্রেমিকার ডাকের মতোই সে ডাক উপেক্ষা করা যায় না।
সুনীল দাসের ঘোড়াটির গায়ে সেঁটে দিই
জাদু বাস্তবতা। ফোলানো কেশর নিয়ে
তৈলচিত্র ছেড়ে নেমে আসে ঘোড়া। টগবগে
যেন এখনই উড়ালে যাবে। চার পায়ে ক্ষুরগুলি
কী বলিষ্ঠ লাগে! দাঁড়ানোর ভঙ্গিটিও মহেঞ্জোদারিক।
প্রত্ন ঘুম ভেঙ্গে উঠে আসা ঘোড়া
অনন্ত ভ্রমনে যাবে বলে মাটি বক্ষে ক্ষুর আঁচড়ায়।
বলে, ডেকেছো যখন তবে কাজ দাও। গতিময়
ক্ষুরের আঘাতে ধুলোঝড় জন্ম নিলে...
সে যেন খুব সীমান্তবর্তী গাছ
শিকড় এপারে ডুবে খানিক ওপারে
ফলের বসত ঘিরে যত আলোচনা
মাঠের নোনতা মাখে আচমন সারে
মালায় প্রশ্ন আসে এর কিছু পরে
জ্বালানির ঘ্রাণটুকু পেলে আজ তাকে
ফাঁকা জমি চুষে ফেলা বেহিসেবি রোদ ...
প্রতিষ্ঠান
আমাদের বাড়িতে দুটো প্রতিষ্ঠান
এক আমার বাবা,
আর এক আমি,
আমাদের মুখোমুখি সংঘর্ষে
যে আহত হয়,
সে মা,
কোনো প্রতিবাদ করে না
শুধু কাঁদে,
আমরা সে জল তুলে নিই হাতে
অঞ্জলি ভরে ছিটিয়ে দিই আত্মদাহে।
আলো
আমাদের পরিবারে একটাই কুপি
কেরোসিন উবে গেছে পড়ালেখায় কন্যাদায়ে,
এখন কখনো কুপির ভিতর আমি ঢুকি
কখনো ঢোকে মা
কখনো বাবা
এভাবেই আলো জ্বলছে ঘরে
...
বুকের মধ্যে শ্বাপদ অতীত
নিঃশব্দে বহন করি, একা
হর্ষে-বিষাদে, এমনকি রবিবার, এমনকি সঙ্গমক্ষণে
দীর্ঘ, নিষিদ্ধ এই অন্ধকার যাত্রার
কোনো অন্তিম নেই, জানি-
তবু; যদি কোনোদিন পথ ভুল ক'রে
একটি শাদা মার্জার, ঢুকে পরে, এই অতিকায় শুন্যতায়
তার পিছু পিছু
একটি ভোরের দ্বারে উপনীত হতে পারি, এতটুকু আলোর শুশ্রূষা...
লোভে, লোভে, আত্মমুখী পুরুষের...
এই তো ফিরিয়ে দেওয়ার পালা।
পরিবারের সময় বিক্রি করে
আমি নিজের জীবন প্রস্তুত করেছি।
আমার ছেলেটি কবে
বড় হয়ে গেছে বুঝতে পারিনি,
বউ বার্ধক্যে উপনীত,
সারা ত্বকে দেশভাগের ফাটল এখন!
নদী নেই,গাছ,ফেলে আসা জমি
তার কাছে যাবো, যেন প্রাচীন পাখিটি,
যে সময় ধ্বংস হয়েছে,
দূর গ্রহ থেকে পেড়ে আনব আবার।
অভিমানের পথ পুষ্পসংগ্রহ।
ফুলে ফুলে ঐরাবত একা, ছুটে এল...
রাত দীর্ঘ হলে ভয়ও লম্বা হয়ে যায়
বাইরে বৃষ্টি নামে --- প্রবল বৃষ্টি
ঘরে খিল এঁটে দিই
শব্দ আসে শব্দ ভাসে শব্দ হাসেও
ঘরে তখন একা এবং অনেকে
তবুও শব্দ আসে
জাগিয়ে রাখে সমস্ত রাত
রাতও জেগে থাকে ঠিক নিশাচর
পাশাপাশি সেও অস্ত্র শানায়
রাত দীর্ঘ হলে ভয়ও লম্বা হয়ে যায়
রাতের সব চরাচর চুপ চুপচাপ
ঘরে...
সেই কবেকার সোনাঝুরি জঙ্গল থেকে উঠে এসেছিল শব্দটা। তারপর কত মনসামঙ্গল, চন্ডীমঙ্গল পেরিয়ে মৃত্যুগন্ধ শরীরে মেখে, কমলালেবু রঙের দুপুর পেরিয়ে, থ্রি জি কিংবা ফোর জির চক্করে পড়ে ব্ল্যাকহোলের মতো পরিণত হচ্ছিল নির্মম পরিহাসে
-
শুধু চিলেকোঠায় পৌঁছে যখন চোখে পড়ে গেল ধুলোময় খাট, আমার বাল্যকালের পড়ার টেবিল, ভাঙা রেডিওটাকে দেখে যখন...
আকাশ অংশত
বাকিটা না হয় রইল উহ্য
ইচ্ছেমত শব্দ রেখো
অথবা চুপচাপ
সাবধানে চলাফেরা কোরো
দৃষ্টির তীক্ষ্মতা মাছের চোখের মত ক্লান্ত
কোন বাণে বিঁধবে তাকে?
শীতকাল ফিরে এলো
ভাস্করের পাতায় পাতায়
তারপর কিছু সূত্র অথবা সমীকরণ
শুধু মনে রেখো
যে পাতা ঝরল অতর্কিতে
তার আর পুনর্জন্ম নেই
যে আসবে সে নতুন কেউ!
টুইটারে ২৩ লক্ষ ভিউ
আরও বেড়ে যাবে,
নেতাদের তেজী হুঙ্কার,
ক্ষতিপূরণের চেক পৌঁছে গিয়েছে।
যার যায়, সে-ই জানে,
বাকিরা মাংস ভাত, বাকিরা মাইক,
বাকিরা মন্ত্রী আর সেনাপতি হয়—
যারা যারা হাঁটছিল,
যারা চোখ রাখছিল,
দুই মেয়ে, খোলা স্তন,
তার নীচে ইনিবিনি,
উল্লাস, উল্লাস!
যেন ছয়, ফের ধোনি,
ভারত না ইন্ডিয়া,
শ্রীরাম না ডাকাতিয়া,
মেয়েরাই জানে।
ধানখেতে যেইখানে,
রক্তের ফোঁটা ঝরে,
সেইখানে পুরুষেরা নাচছে ভাসানে।...
বেশ কিছু কথা দিয়ে না রাখা
ফুল দিতে অপারগ যে শাখা
হাত ধরে-থাকা সেই বোবা হাত
থাকতে চেয়েও শেষে না থাকা
নেশাতুর, বেলাগাম সে রাতে
আদুরে ওমের লোভ পোহাতে
সোহাগের চৌকাঠ লঙ্ঘন
বিবেকের বেমক্কা জেহাদে
শীতঘুমে কুয়াশারা খেলাপি
ভুলে থাকা মানুষের থেরাপি
বসন্তে বিচ্ছেদ বেসোয়াদ
অপমান, বোকাদের সেরা ফি!
সময়কে হতে দাও নেশাড়ু
সংসারে সবাই তো দাবাড়ু
শেষ কথা শেষ চাল : কিস্তি
মৌত...