"অর্ধেক নগরী তুমি
অর্ধেক কল্পনা" (পথে প্রবাসে)
প্যারিসে সূর্যের আলো
ক্রমশ সন্ধ্যার রঙে মেশে
ফরাসি ভাষার মতো
নরম, মধুর এই রাত...
তোমার হাসিতে দেখি
মোনালিসা হেসে ওঠে আজ
ল্যুভর মিউজিয়াম ---
ছবির দূরত্ব মুছে যায়!
এদেশে চাঁদের আলো
পূর্ণ মায়ায় মন ভোলে
এখানে একলা মন
বিদেশ ভ্রমণ করে চোখে
এখন মধ্যরাত ----
ওখানে কি চাঁদ ওঠে?
প্যারিসে কি বুদ্ধ পূর্ণিমা?
বালক বয়সে গিঁট খুলতে পারিনি বলে
তোমার তীর্থস্থানটি দেখা হয়নি আমার।
তারপর গোয়ালন্দ স্টিমারঘাট পেরিয়ে উইপোকার মতো অচেনা দেশের মাটি দিয়ে
ঘর বানিয়েছি আমরা ক'জন।
ভাগ্যিস তোমার তোমাকে ছাড়া আর কিছু দেখিনি সেদিন
তাই শুধু অপরূপ মুখশ্রী নিয়ে
আজও তুমি বেঁচে আছো স্রোতস্বিনী কর্ণফুলি হয়ে।
তারপর দিন গেছে মন্বন্তরে
রাত্রি গেছে বেহুলা-ভেলায়।
নিষিদ্ধ মাংসের লোভে কতবার
চরিত্র দূষিত হয়ে...
আজ এই অসমাপ্ত রাতের আধারে
জোনাকি ও তৃণদল, কুয়াশা ও গানের লিরিক থেকে
সময়ের বেশকিছু আগে
জন্ম নিল সবেমাত্র রক্তমাখা ক্ষীণদেহী মেয়ে
এখন দীর্ঘ মাস রেখে দেবে কৃত্রিম উষ্ণতার ঘরে
ছোটো ছোটো পাঁজরের ওপর মসৃণ
ত্বকের আবরণ
ক্ষুদ্র হাত নল দিয়ে ঢাকা
হৃৎপিণ্ড, লাবডুব, দূর থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়
অধীর স্পর্শের গায়ে লীন
অপেক্ষাগুলোকে আজ মুড়ে রাখছে পুতুলবালিশে
উষ্ণতার ঘর...
( আঙ্গিক ঋণ; পিনাকী ঠাকুর )
এখন আছে "আর সে নেই " বাড়ি
পাশের রাস্তা দু-দিক খোলা আজও
শূন্যতা ছোঁয় টগর, বকুল,ঝাউ-ও
ও সান্তনা,তুমি এলে, তুমিও!
জানি, মা কাঁদতে পারছেন না
পিছুটানে জানলা খোলে বোন ---
"কাকাতুয়া, আই, ভুল হচ্ছে কেন ?
দাদা-ই ছিল রবীন্দ্র সঙ্গীত
যথারীতি মায়া-ও আঁকে ছায়া
(আমরা রইলাম সৌজন্য বোধক)
কাজ ফুরোলে পালায় সূর্যি মামা
কোথা থেকে...
কতদিন বৃষ্টি পড়ে না
বুকের পাটায়
সকারণ ভেজেনি পাঁজর
জলের খাতায়
পাঁচিলে শ্যাওলা জমেছে
অবোধ হৃদয়
ঘড়িদাগে সেসব আজ
শুধু অসময়
নিয়েছি দুহাত মাটি, চাক
ঘোরে লাঠির খোঁচায়
জল সরে গিয়ে, পলি
গভীরে, সব দেখা যায়
একটা লোক এই মুহূর্ত থেকে ‘নেই’ হয়ে গেল। নিমেষে
বদলে যাওয়া বাড়ি, তার নিজস্ব এক ঘর, আলনায় গোছানো
পোশাক একইভাবে পড়ে থাকে। বিছানায় শোয়ানো মলিন
হ্যান্ডস্টিক, ঘরের কোণে পানের ডিবে সবাই নিশ্চুপ। একটা
অভ্যস্ত শরীরের গন্ধ ধীরে ধীরে ফিকে হচ্ছে। জানলায় ঝুলে
থাকা না-কাচা পর্দা, ব্যবহারিক খুঁটিনাটি ইত্যাকার অবশেষ
ঘেঁটেও তার হদিশ মেলে না। শুধু,...
বিকেল-আকাশে ‘দৃষ্টিপ্রদীপ ’ উপন্যাসের
আশ্চর্য মেঘেরা
শেয়ালদাস্টেশনের থেকে বনগাঁলোকাল ছেড়ে দিল …
ভিড় কামরায় কে আমি , কে সীতা, কে যে দাদা , কে বা পাগল -হয়ে -যাওয়া বাবা আর
ছেঁড়া -শাড়ি- পরা মা আমার ?
ট্রেনের হু হু - হু হু- হু হু - জানলা
গুমা- বিড়া- হাবড়ার বিড়িটানা চাঁদ হারমোনিয়াম বাজিয়ে রসের ভিয়েন...
রাতের আকাশে জ্বল জ্বল করে আলোরবাতি
মনে হয় আলোর নেশায় মত্ত কালো এই মহাশূন্য
ভোরের পাতায় জমে জল
রোদের আলোয় চোখ ফোটে ঘাসেদের
রেল লাইনের ধারে সারি সারি যেসব দোকান,
তাদের ব্যস্ততা বাড়ে,রোদের তেজ বরাবর,
উনুনের আঁচ,
ঝেঁটিয়ে ফেলা ধুলো,
রাস্তা জুড়ে ছিটিয়ে থাকে জলের ছোপ,আর মাটির গন্ধ
এভাবেই সবটুকু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়
শুরু হয় ভোরের আজান।
আপেল, ছুরি, জলের পাত্র,
না-খোলা খবরের কাগজ
আরো কিছু অনাবশ্যক দৃশ্য
আর আছো তুমি-নেই ফলের খোসা ছাড়ানোর দৃশ্যের মত—
খুব সাবধানে, সন্তর্পণে চেঁছে নেওয়া
ফলের অযথা মাংস যেন না ফলের খোসার সঙ্গে যায়…
যে-তোমায় সমীচিন করে তুলেছে সে এই
ছুরিবিদ্ধ ফলের গায়ে সকালের গমগমে রোদ
যেটুকু আলো এসে পড়ে রিক্সার গায়ে
আমি তার হিসেব লিখে রাখি
বিশ্বকর্মা পুজো ছাড়া আর গমগম করে না স্ট্যান্ড
ছাতিমের গন্ধে গলিপথ ভ্রমণ--
গোপনে নেশা ছাড়ানোর পোস্টার নেই
আগে-পরের মধ্যে বহুতল দীর্ঘশ্বাস
বসন্ত এসে গেলে মনে হয়
মানুষ আরো একা হয়ে গেছে!
কত ছদ্মবেশ জানে তোমার প্রতিভা
অহংকারে নষ্ট এক নিষেধের মতো নেশায় আকুল হই। কত বিপ্রতীপে
ঘাই মারে মাছের স্বভাবে মন
ডুবে ডুবে জল খাওয়া চরিত্রের পেটে
এত বুদ্ধি ধরো তবু এত রাগ সামলাও কী করে!
তোমাকে নেব না ভেবে টেনে আনি ছোঁব না আঘাত
তবু দাও কলতলায় যেভাবে বালিশ পেতে
ধুয়ে দিলে মুখ্যুসুখ্যু ভ্রমে অন্ধ চোখের...
দিনগুলি অতি দীন, হীন তবু ক্ষীণ আশা
মুছে যাবে একদিন দিবসের তেলকালিঝুল,
আততায়ী মেঘ ভেঙে রৌদ্রের ফিরে আসা
ভেঙে দেবে স্বৈরীর দম্ভের যাবতীয় ভুল।
শিখিনি কাতর হতে ভয়-ত্রাসে নব নব শঙ্কায়
হৃদয়নন্দনবন ফুলে-পল্লবে আছে ভরা,
তবু জেগে বসে থাকি, দিন যায় লবডঙ্কায়
হাওয়া এসে কানে কানে করে যায় মশকরা।
তোমার কথা বাবা, ভুলতে পারিনা কিছুতেই
বলতে তো, ঘটনার...
কবিতা লিখে খুব বেশি হাসিখুশি থাকা সম্ভব নয়
কবিতার মধ্যে এক ধরণের বিপন্নতাবোধ আছে
হিংস্র জন্তু যেমন আগুনকে ভয় পায়
তেমনি সুখী মানুষ কবিতাকে এড়িয়ে চলে
কবিতাগ্রস্ত লোকেদের ভর হয়
ভূতে পাওয়ার মত তারা আছাড়ি পিছাড়ি লেখে
কল্পনা করে চরমতম অসুখের
কবিতার মধ্যে যে শোক
যে আঘাত
যে মাথাব্যথা
সেসব লিখে লিখে
কত কবির যে ঘর সংসার
ভেসে গ্যাছে
সে খেয়াল তাঁদেরই...
এখন আর কিছুই পড়ে নেই
পোড়া বসন্ত সারারাত
স্মৃতিহীন অতীতের কথা
বলার চেষ্টা করে,
কিন্তু পারে না
দেওয়ালে তার পিঠ ঠেকে গেছে !
বুকের ভিতরে বাতাস ছিল
এখন সে বাতাস
অন্ধকার শীতলতম হিম!
তোমার সঙ্গেও আর দেখা হবে না
কোনওদিন
লাস্য হারাতে হারাতে তুমি আজ লাশ হয়ে গেছ!
যেকটি বৃক্ষের কাছে ক্ষমাভিক্ষা করেছি ক্ষয়িষ্ণু রীতি মেনে,
যেকটি প্রার্থনাগীতি স্বরলিপি খাতা জুড়ে আলো,
যেকটি হননসাধ একান্তে অপূর্ণ থেকে গেছে─
সেসব অধ্যায় যোগ করে করে
পৃষ্ঠা গুনে গুনে তুমি জীবনের অদাহ্য আখ্যান রচেছিলে।
এই যে বিজন রাত কিছুই দেখে না খুঁজে, সঙ্গোপনে শুধু
স্থির সর্বনাশ হয়ে জেগে থাকে স্বপ্নের ভেতরে─
মেঘে কুয়াশায় ছাওয়া উঁচু-নীচু অবাস্তব গ্রাম...
অভিমান তোমাকে যত না ঠেলে দেয় দূরে
তার চেয়ে দূরে নিয়ে যায় রোমন্থন।
তার চেয়ে আরও যেন বিরাট-- দূরত্বের যবনিকা পড়ে
আকরিক খুঁজতে খুঁজতে খনি উজাড় ক'রে
উপড়ে আনতে মানিকমঞ্জরী!
তোমাকে যে সাকি বলে চেনে
সে তুমি পেয়ালার সখ্য নিখুঁত, অম্লমধুর!
যে তোমাকে চাঁদ তারায় গুনে দেখেছে
সে তোমার আকাশী জলে পা ধুয়ে দেয়...
বুঝতে বুঝতে শত ঋতু,...
ঘরের মৃদু আলো নিভে আসে দিনের শেষে
পাশাপাশি শুয়ে থাকে দাদু আর দিদা
ঘুমানোর আগে দিদার কত যে অভিযোগ
ভেসে আসে— দাদু তেমন কিছুই বলে না।
সমস্ত কথার শেষে দিদা বলে ওঠে
“আমি যেন ঠিক চলে যেতে পারি তোমার যাবার আগে”
দাদুর মুখ থেকে বেরিয়ে আসে কেবল একটিই কথা
“কেন যে এইসব বলো... সকালে উঠতে হবে...
শোকের কাছ ঘেঁষে অতীত নদীরা থেমে যায়
আঘাত ছোঁয়াচ পেলে ভেঙে যাবে মেঘেদের বাড়ি—
সেও বুঝি জল হবে, ধুলো হবে তুচ্ছ শরীর;
খাঁচারা বদলে যাবে প্রতি জন্ম-অধ্যায় শেষে।
কারা যে বসেছে এসে নির্বাক সময়ের কাছে একা
মানুষের অন্ধকারে ঘুম আনে সমস্ত মৃতস্বর,
প্রহরের অপেক্ষা শুধু— এই বুঝি সাঙ্গ হবে খেলা
কীভাবে নিভে যাবে তারাদের সাবেক উৎসব।
স্রোতেরা...
আর কত আলোকবর্ষ !
সকাল দুপুর মধ্য রাত
বিরামহীন চলতে হবে আমি জানিনা।
নিজের কোন লক্ষ্য নেই
আলস্য মাখা কয়েকটি ছোট বড় চোখ
ধানকুটি মাড়ানো বলদের মতো
আমায় ছুঁটিয়ে বেড়ায়
কেন আমি জানিনা।
কাঁধের জোয়ালের কথা মনে পড়লে
আমার আরও খিদে পায়
অথচ ঘুম পায়না,
ঘুমের দুয়ারে অক্লান্ত আমি...
দন্ডি কাটি কেন আমি জানিনা।
শুধু আমি এটুকু জানি যে
এসব জানার জন্যই আমি...
একটা উত্তরকে প্রতিউত্তরের দিকে ঠেলে নিয়ে যাই
অপরাধের সূত্র ধরে কাঁচের ওপর দিয়ে হাঁটি
সন্তর্পণ জানালার বিচারক্ষেত্রের দিকে ঘুরে দেখি
স্পর্শের দক্ষিণ, থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে সিলিং ফ্যান
কণ্ঠার মৃদু হাড়ের ওপর জমে আছে অস্পষ্ট আঙুল
পোড়া মেঘের ছায়া এসে লাগে কাঁচের ওপর
আমি মুখ নামাই, জিভের করুণা খুঁজি,
খুঁজে দেখি পারা ওঠা আয়নার ওপর অবশ্যম্ভাবী...