হাঁসের ডানার ছায়ায় কেমন রহস্যময় মনে হয় সবকিছু।এই মাঠ প্রান্তরের ভেতর ধান লুকিয়ে
রাখছে ইঁদুর।নদীতে ভেসে আসা কাঠের বন্দুক।
ঘোড়া হারানো সেই বিষন্ন জোতদারের কথা খুব মনে
...
প্রায় নারীকণ্ঠে বিলাপের উচ্চতায়
উড়ে যাচ্ছে হৃদয়বেদনাবাহী রিক্সার পর রিক্সা।
নীচে এই শহরের চাপড়া-চাপড়া ত্বক
পড়ে থাকে করুণ মাধ্যাকর্ষণের দিন।
নদীর আকাশে এক তীব্র আলোর ছেদ
দেখা গেল পাখিদের হৃদয়যন্ত্র লেগে
ওই শেষ অস্ত্রোপচার
বেতারে ছড়িয়ে পড়ে
এইভাবে গান
সুদীপ বসুজন্ম ১৯৬৭ -তে, কলকাতায়। প্রথম কবিতার বই 'অনিন্দিতা বাসস্টপ' প্রকাশ পায় ১৯৯৪ সালে। পরে ক্রমশ প্রকাশিত হয়েছে আরো আটটি মৌলিক কবিতার বই, একটি গদ্যগ্রন্থ ও একটি গল্পসংকলন। বিশ্বসাহিত্যের অনুবাদগ্রন্থ রয়েছে ছয়টি। সম্পাদনা করেছেন অমল চন্দের গল্পসংগ্রহ। সুদীপ 'আন্তর্জাতিক সম্পর্ক' বিষয়ে স্নাতকোত্তর।অকালমৃতার ডায়েরি থেকেমা বলত, ‘তোকে যোগিন্দর সিং-এর কাছে...
মৈত্রেয়ী রায়চৌধুরী (Maitrayee Roychowdhury)
বিজন রোদনা
আমার হাতে কখনও কোনও অস্ত্র ছিল না,
কোন হাতিয়ার নয়,
তবু, এতদিন তিলে তিলে গড়ে তোলা তিলোত্তমা, আমার ইমারৎ
এক প্রহরের সাইক্লোনে কীভাবে ভেঙে গেল!
আর ওই প্রবল ধূসর অবরোধকে যে আড়াল করে রেখেছিল সে উচ্ছল জলধিতরঙ্গ,
এক খরস্রোতা নদী।এতকাল
তা আমি জানতেও পারিনি।
সেই বন্ধনহারা উচ্ছলতা
প্রতিক্ষণে আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে চলেছে।
অবলোকন করি,
ভেসে...
যথেষ্ট ব্যথার দেনমোহর দিয়ে তোমার ঋণ চুকিয়েছি কি?
কত অশ্রুর মুক্তো দানা গুনে গুনে বটুয়াতে ভরতে হয় খাজানা চুকিয়ে দিতে, বলো মহাকাল?
তবুও পরোয়া নেই। তুমি বল। বলতে থাকো। হাঁকো নীলামের দস্তুর।
আমি সব কর্জ, দায়, ঋণ পাই পাই চুকিয়ে দেব।
আনা, দুই আনা, অর্থ, অনর্থের মূলে
শুধে দেবো ধার।
পাতো হাত। অঞ্জলিতে পান্না চুনি...
বিশ্বজিৎশব্দের বিপরীতে১চুপ থাকাএক অসম্ভব শিল্প।জানি,কেউ কারোর ধার ধারে নাকেউ কারোর ঘর চালায় না।তবুও টিকিটএকই স্টেশনের দিকে…২অসুখ-বিসুখেতুমি থাকাটা জরুরি।তুমি নামটাই সব…সারাদিন পারদ ওঠে-নামেতুমিও ওঠা,নামার ভেতরপৃথিবীজুড়ে একটা কার্ফু চলছে৩জন্ম নিয়ে প্রশ্ন বাড়েশিক্ষার কোনও শেষ নেই।শূন্য বাড়তে বাড়তেসংখ্যারাও মুখোমুখি ভাস্কর্যে…৪মৈথুন শেষেসব অভিমান কেটে যায়।দিন বদলে আলোর কাছাকাছিছুঁয়ে যাই…একে অপরের মুহুর্ত
১
আনারকলিকে ঘিরে গাথা হচ্ছে পাথর
সেলিমের কথা বলতে গিয়ে বারবার
ধরে আসছে বাবার গলা আর ঘুমের মধ্যে
তলানি হয়ে যেতে যেতে বাদশাহের নির্দেশ
মিশে গেল লতা মঙ্গেশকরের রেকর্ডে
২
ঘোরানো সিঁড়ি দিয়ে একে একে নেমে যাচ্ছে
বিষণ্ণ জোকারেরা
শীতে শাস্তি পাওয়া ছেলেদের কথা ভেবে
আর ফিরবে না তারা
শুধু মরচে পড়বে উৎসব
৩
শেষপর্যন্ত দ্বিচারিতাই থেকে যায়
বিশেষত এই পাখির উড়ে যাওয়া
সূর্যাস্তের...
রাশিয়া আমার স্বপ্নের দেশ
ছোটোবেলা থেকে ওর সঙ্গে আমার পরিচয়।
সোভিয়েত দেশ চিনিয়েছিল নিজেকে
চিনিয়েছিল আরও অনেককে।
বিস্ফারিত চোখে ম্যাপে দেখতাম ওর বেড়ে ওঠা শরীর
উজবেকিস্তান, কাজিকিস্তান, লাতভিয়া,
এস্তোনিয়া, বেলারুশ, ইউক্রেন আরও আরও.....
গান্ধারীর সন্তান ছিল রাশিয়া।
বড় হয়ে দেখলাম--
বড় বিষণ্ণ আর ক্ষণস্থায়ী এই দুনিয়া।
যা চোখে দেখা যায় না, যা কানে শোনা যায়
তা শুধু কান্না ও হাহাকার।
এ...
হেমন্ত
এসব গোধূলি আলো
স্বজন হারানো লোভে একা
পথেই পায়ের ছাপ তারপাশে লিখে রাখা ঘাতক আলোয়
আঁকশি ফেরানো চোখে
ফেরা যায়! বলো!
দেহ নেই! জন্ম নেই
মাতৃহননের সুরে
কাকেই বা প্রিয় ডাকি, কাকে যে দেবতা !
এসব গোধূলি আলো একা...
সন্ধ্যা
কাকে বল ছায়া?
আলোর দরজা পেতে, রোজ সেও হেঁটে গেছে জারুল বাগানে
মৃত গাছেদের চোখে ঘৃণা জন্ম নিতে দেখে--
চুপচাপ পুঁতে দেয়...
শুভ্রাশ্রী মাইতি (Subhrashree Maiti)
শিক্ষিকা। থাকেন পূর্ব মেদিনীপুরে। কাব্যগ্রন্থ-- মনজানালার আকাশ, সুবর্ণসুতোর সম্পর্ক, নিমফুলের নূপুর, মগ্ন জলের মুহূর্তেরা, হারিয়ে যাওয়া নাকছাবিটি।
সৃজন
মা রুটি বেলে
আশ্চর্য কায়দায়
বেলন ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে
এক একটা নিখুঁত, নিটোল
পূর্ণিমা চাঁদের বৃত্ত; গুঁড়ো গুঁড়ো
জ্যোৎস্না আটার স্বপ্ন, রুটির গায়ে
তেমন রুটি বেলতে পারিনি
আমি কোনদিনও; মায়ের রুটি বেলার
দিকে তাকিয়ে থাকি আর ভাবি
পৃথিবী গড়ে ওঠে...
শরতের হাওয়া বইতে শুরু করলেই
কাগজে কাগজে তার চিহ্ন ফুটে ওঠে
এ'দুয়ের মাঝে কোন মিল আছে বুঝি!
হয়তবা আছে,
ভোরের শিউলি ফোটে
মায়ের প্রতিমা তৈরি থেকে শুরু করে
দীপাবলি পর্যন্ত ছবি তৈরি হয়ে যায়
কাগজপত্রে,
পুজো সংখ্যা কত কত
কবিতার ঝুরি, শব্দের বন্যা বয়ে যায়,
কে পড়ে? কারা?
নাকি পড়ে থাকে টেবিলে?
আমিত্বের বিজ্ঞাপন সংখ্যা গুনে নেয়
কটা হল!
কেউ কাউকে কি মনে...
অর্কেস্ট্রা শোনার পরে বেঁচে ওঠে, এই গ্রামে নাকি রয়ে গেছে এমন যুদ্ধজাহাজ কারখানা
বৃষ্টি শেষে শুনশান চারদিক, রাস্তা জুড়ে হেঁটে চলেছেন ভ্যান গঘ আর বিটোফেন
চোখ থেকে স্বপ্ন খসে পড়ে, আলোহীন সম্পর্কের কথা ভাবি
মাথা নিচু জানুয়ারি সরে গিয়ে দাঁত বসাচ্ছে চরম ফেব্রুয়ারি
নাবিক ফিরেছে ঘরে সুতোকাটা ডিমের উল্লাসে, প্রতিটি বন্দরে জমানো হতাশা...
আমি আজ বড়ই একা
প্রকৃতির কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছি
ফুলের ঘ্রাণে মাতাল করেছে আমার মনন
বাতাস এসে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে বুকের ওড়না
তারপর?
এক কাপ চা খেয়ে যা শান্তি পাই
তোমাদের আপ্যায়নে তা পাই না
হাজারো অভিযোগ মেনে নিয়েও যখন ভালোবাসি
ভুলে যাই পূর্বের সকল কথোপকথন
তারপর?
কৃষ্ণচূড়া ফুল দিয়ে পথ ঢেকেছি, হাঁটছি না
দাঁড়িয়ে আছি, অপেক্ষায় আছি
ঢেউ এসে...
শ্যামশ্রী রায় কর্মকারমূলত কবিতা ও প্রবন্ধ লেখেন। গল্প লেখেন। অনুবাদ করেন। লেখা প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশ, ব্রিটেন, ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সংবাদপত্র এবং পত্রপত্রিকায়। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘ফিরোজা রঙের ঘুম’। প্রকাশিত অন্যান্য গ্রন্থগুলি হল- ‘বব ডিলান: অন্তহীন যাত্রা’, ‘বিটলস: বদলের তালে তালে’, ‘পল রোবসন: শিকল ভাঙার গান’।প্রবল ঝড়ের আগেকাছে এসে বসেছে...
আজকাল সহবত শিখছি
১
যে সমস্ত শূন্যতাকে নিজের বলে দাবি করতাম, নিতান্তই আবেগ... আয়নার দিকে তাকালে বলিরেখা বাড়ে। সময়ের কোলে পরপর যুক্তাক্ষর।
হেঁটে চলি
শরীরে সহজপাচ্য রোদ্দুর
এরপর আয়ুযোগ হলে, ধরাকে সরা জ্ঞান করবো। চেসবোর্ডে লিখে ফেলবো সূর্যগ্রহণের নিরক্ষর কারণ।
২
সরে যায় কর্কটক্রান্তি দাগ, চেনা সংসার, ছক বাঁধা বিকেল। টুকরো অনুঘটক নিয়ে কেউ বেঁচে ফেরে,...
সৌম্যজিৎ আচার্যকবি,গল্পকার। অনুবাদও করেন।লেখা প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশ, বেলজিয়াম, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরার বিভিন্ন সংবাদপত্র ও পত্র পত্রিকায়।তাঁর কবিতা অনুবাদ হয়েছে ইংরেজি ভাষায়।সম্প্রচারিত হয়েছে বলিভিয়ার একাধিক এফ এম বেতার অনুষ্ঠানে। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা আট।এক ফেরিওয়ালা এসেছিলএক ফেরিওয়ালা এসেছিলগ্রামে,শহরে প্রতিটা রাস্তায়হেঁকেছিল জোরে জোরেটোকা দিয়েছিল দরজায়বাতিল লণ্ঠন নেবে বলেআজ দেখো,সেসব...
ব্যর্থতা বড়র দায়, শিশু কি
কখনও ব্যর্থ হয়
হামাগুড়ি দিতে দিতে উঠে দাঁড়ানোর
চেষ্টা
সেও এক এভারেস্ট জয়
আমি সেই জয়ের পতাকা
কুরুক্ষেত্রে নিয়ে গেলে মাটি থেকে
উঠে আসে চাকা
যুবতী মায়ের স্তনে
কানীন পুত্রের জিভ
বলে ওঠে,শেষ নয়,যুদ্ধ শেষ নয়।
শিবু মণ্ডল| জন্ম ১৯৮১
চাকরিসূত্রে হরিদ্বারবাসী। কবিতার বই: ‘শীতঘুম ও আনুষঙ্গিক জ্বর, দার্জিলিঙের রাত্রিগুলি। সম্পাদনা করেন হেমন্তলোক পত্রিকা।
ভোরের ইচ্ছে
ছায়া নদী ও মায়া হরিণের একান্ত সাক্ষাতের মধ্যে ঢুকে গেছে এক নিস্তব্ধ চরাচর। চিনবার মতো আশেপাশে কোনও স্মারক চিহ্ন নেই, মিথ্যা খোয়ারের নিচে চাপা পড়া তৃণ থেকে শিষ জাগছে না আর। তবুও...
এই দেখ মেয়ে, সামনে দেখ তাকিয়ে --
কি হ'লো, মিললো কথা ?
এবার বল তবে বুকে হাত রেখে সত্যি কথা
কবিতার সব কথা মিলে গেলো তো !
প্রথমটায় শুধুই করেছিলি অবিশ্বাস
আর আমি, বলেছিলাম তো --
জাদু আছে জাদু, দেখিয়ে ছাড়বো
দেখ তাকিয়ে, দরজা খুলে গেলো তো --
নে মেয়ে উঁকি দিয়ে দেখ ভিতরে
কী সুন্দর ঘরটা দেখ,
কতো...