আমাদের আর কিছু নেই শুধু
জড়িয়ে ধরতে পারি
বাজ বিদ্যুতে ঝড়ে বা তুফানে
হাহাকারে মহামারি
যা আসে আসুক বুঝে নেব
এই বুকের কলিজা পেতে
তোমার জন্য রুটি রাখা আছে
তোমার জন্য ভাত...
এসো আজ এই গল্প করবো
পথ দিয়ে যেতে যেতে...
যাই হোক যদি অন্যায় দেখো
নোয়াবে না আর মাথা..
তোমাকে লিখছি চোখে চোখ রাখো
সন্ধ্যার ঝরা পাতা ...
তুষার ভট্টাচাৰ্য (Tushar Bhattachariya)
কলম্বাসের নৌকো
নিঝুম হিমেল রাত্তিরে কলম্বাসের পালতোলা ফাঁকা নৌকো ভেসে আসে ঘুমের শিয়রে ;
আমি তার স্বপ্ন সন্ধানী নাবিক হয়ে
চলে যাই
গঙ্গা পদ্মা মেঘনা যমুনার দুরন্ত
জলস্রোত ভেঙে
শিলাইদহ সাজাদপুরের কুঠিবাড়িতে
সেখানে দেখি দখিন জানালা খুলে
ইজি চেয়ারে বসে আছেন রবীন্দ্রনাথ ;
কিছুক্ষণ পরে নৌকোর বাঁশের লগি ঠেলে চলে যাই বরিশালে
জোছনা আলোয় ভাসা ধানসিড়ি...
পিরিতে বর্ষা লেগে আছে
শ্রাবণ বাতাসে গলে অভিমান
জর্দা চোয়ানো রঙে থমথমে জল
বেপাত্তা ভেসেছি এতদূর,
জোছনাবাটিতে কারা রাত্রি জাগে?
পাহাড়তলিতে পড়ে থাকে পদচিহ্ন
গাঁয়ের মোড়লের চাবুক বাজাচ্ছে প্রাণে
ভুল হল তবে এতখানি ভালোলাগা?
কংসাবতীর জলে কাদা বাড়ায় ধর্মাবতার
পাখিরা হেসে উঠেছিল
তারপর বনপথে ছাতা খুলে দাঁড়ায় করম পরব
ভাদরিয়া ঝুমুর গীতে বাড়ে উদাসি মায়া
তোমার পিছুটানে লেগে আছে গাঢ় নিশীথ
তবু তুমি গোপনীয় বলে এঁকে ফেলেছো শরীরের মূর্ছনা
অথচ রোমাঞ্চ ভেঙে বহুজন্মের বিষাদ জেগে আছে,আজন্মকাল
কিন্তু সরোদের কম্পন এসব ঘটনায় ভোরের কুয়াশা, নন্দনতত্ত্ব
এবারে আমার মিশে যাওয়ার পালা
যেন অদূরে আলোর আভাস উদীয়মান সারাক্ষণ
এসেছি, প্রেম অতীত বলে তুলে দিই আদিগর্ভ স্পর্শ
সঙ্গে শেষ সমুদ্রস্নানে লেগে থাকা নিয়ন আলো
জীবনের সহজ...
একটা লোক এই মুহূর্ত থেকে ‘নেই’ হয়ে গেল। নিমেষে
বদলে যাওয়া বাড়ি, তার নিজস্ব এক ঘর, আলনায় গোছানো
পোশাক একইভাবে পড়ে থাকে। বিছানায় শোয়ানো মলিন
হ্যান্ডস্টিক, ঘরের কোণে পানের ডিবে সবাই নিশ্চুপ। একটা
অভ্যস্ত শরীরের গন্ধ ধীরে ধীরে ফিকে হচ্ছে। জানলায় ঝুলে
থাকা না-কাচা পর্দা, ব্যবহারিক খুঁটিনাটি ইত্যাকার অবশেষ
ঘেঁটেও তার হদিশ মেলে না। শুধু,...
সঙ্গমের সিনে দেখেছি
ক্যামেরার লেন্স আউট অফ ফ্রেম হয়ে যায়
এখনও এত কার্পণ্য
মোমবাতি নিভে যায়,কোথাওবা টিকটিকির আরশোলার শিকার ধরা।
অধ্যাপক মানেই চোখে তার ভারী ফ্রেমের চশমা
দেখেছি,স্কুলে ঢোকার আগে দিদিমণিকে নাকের নোলক
খুলে রাখতে মিনি পার্সে।
এখনো এই ধারণা রয়ে যায় আমাদের বৃহত্তর জীবনে
ভাবতে ভাবতে রক্তকরবী পড়া শেষ হয়ে গেল
খামাকা রঞ্জনকে মারলেন কেন?
অতৃপ্ত সঙ্গম শেষে...
ছেঁকেছুঁকে লিখেছি কত না –
মাতৃকুলের অপযশ হবে,সেই ভয়ে।
গর্ভের জল ভেঙে গেলে বলেছি,
কিছু না কিছু না!
ঘর পুড়ে গেলে সেই ধোঁয়া,পোড়া মাংসের ধোঁয়া,পাকিস্তানের দিকে উড়িয়ে দিয়েছি।
কেউ আর কানাকানি করেনি আমাকে নিয়ে!
সমাজ, সংসারে,যন্ত্রণায় মরে যেতে যেতে, সেয়ানার মতো,উৎস ঘুরিয়ে দিয়েছি ধর্মতলায়,যেখানে ধর্ণায় বসেছে নরনারী।
কখনও -বা,প্রেমিকের মিছিল চলেছে –
ওরা স্রেফ বন্ধু আমার, এইমতো...
শুদ্ধেন্দু চক্রবর্তীজন্ম: ১৯৮০, কলকাতাপ্রথম কাব্যগ্রন্থ: আকাশপালকঅন্যান্য কবিতার বই: শিকারতত্ত্ব, আড়বাঁশির ডাক, জনিসোকোর ব্রহ্মবিহার, কানাইনাটশালাকবিতাথেরাপি নিয়ে গবেষণামূলক বই: ষষ্ঠাংশবৃত্তি সম্পাদিত পত্রিকা: শামিয়ানাচিড়িয়াতাপুভোর ভোর বেরিয়ে পড়েছি। লম্বা সফরচেক পয়েন্ট পার করে গেলেই দেখা যাবেসপসপে জাড়োয়া শরীরস্তন দেখা যাবে যোনি দেখা যাবেতেল সপসপে খোলামেলা মৈথুন দেখা যাবেওদের দেখতে দেখতে আমরা নিজেদেরদেবরাজ ভাবব পয়গম্বর...
১
যা হচ্ছে তা হোক
যা হচ্ছে না তা হওয়ার বৃত্ত থেকে
খুলে খুলে পড়ছে শব্দ
মিথ্যের সত্যিরা লুকিয়ে থাকে ডানায়
সত্যির মিথ্যের জেগে থাকে বুকে....
কিছু জটিল শিরশিরানি
মানুষকে বাঁচতে দিচ্ছে গুটিপোকার মতো...
একটা দুটো সত্যি
আকস্মিক ভাগ্যের মুখে থুবড়ে পড়ে হাসে...
কান্নার এক আলোকিত জোর আছে বুকে
এখানে লুডোতে সাপ আর সাপ
সাপের শরীর ধরে মন্ত্র শিখেছি বলে
এখন আমাকে...
এখন আর কিছুই পড়ে নেই
পোড়া বসন্ত সারারাত
স্মৃতিহীন অতীতের কথা
বলার চেষ্টা করে,
কিন্তু পারে না
দেওয়ালে তার পিঠ ঠেকে গেছে !
বুকের ভিতরে বাতাস ছিল
এখন সে বাতাস
অন্ধকার শীতলতম হিম!
তোমার সঙ্গেও আর দেখা হবে না
কোনওদিন
লাস্য হারাতে হারাতে তুমি আজ লাশ হয়ে গেছ!
রঙ্গন রায়জন্ম: ১৯৯৮জলপাইগুড়িতে বসবাস।বাংলা সাম্মানিক স্নাতক স্তরে পাঠরত।কাব্যগ্রন্থ: প্রাপ্তবয়স্কতার পূর্বদিকহিরোশিমার প্রেমিকজোয়ান বীজের গানের কাছে আমার অনেক স্মৃতি জমা পড়ে আছে।অনেকদিন পর যখন আমাদের কথা হয় অনেক অনেক দূর থেকেআমি টেকনোলজির কাছে মাথা নত করে ফেলি, আকন্ঠ প্রেম নিবেদন করি--বাড়ি ফেরার প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যায়, যখন কিছুক্ষণের জন্য সমস্তসময় অতিক্রম...
রিয়া চক্রবর্তীজন্ম ও বেড়ে ওঠা কলকাতায়। দুটি কবিতার বই প্রকাশ পেয়েছে ‘নিয়ন আলোর দৃশ্যরা’ এবং ‘রাই পদাবলী’। দক্ষিণ কলকাতার একটি কলেজে অধ্যাপনা করেন।আলোর গল্পআমার পাঁজর থেকে একটা একটা করে খুলে নিচ্ছ হাড়,আর বাঁধ ভেঙে ছড়িয়ে পড়ছে আমার বুক ভরা স্বপ্নেরা...দু হাতের আঙুল থেঁতলে দিচ্ছো,যাতে না কোনও দিন স্ফুলিঙ্গরা দাবানল...
অরুণ পাঠক
শূন্য দশকের কবি। জন্ম ১৯৭৬ সালে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফলতায় পিতৃভিটেতে আজন্ম বসবাস। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বঙ্গভাষা ও সাহিত্য- এ স্নাতকোত্তর এবং ওই একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ফকিরচাঁদ কলেজ (বি.এড বিভাগ) থেকে শিক্ষক শিক্ষণ ডিগ্রিপ্রাপ্ত। শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ এগারোটি। সম্পাদিত পত্রিকা: সাহিত্যের বেলাভূমি।
প্রতিষ্ঠান
ভেঙে পড়া স্বপ্নের টুকরোগুলোই জীবন
যে...
ছোটদের ছবি
ওর ছোটবেলাকার কোনও ছবি নেই
ছোটবেলা নেই?
না না, ছবি নেই
ছোটবেলাটা কি ছবির মতো নয়?
সে আর ক'জনেরই বা হয়!
তা বলে ছবি থাকবে না?
হয়তো ক্যামেরা ছিল না
সেই সব দিনে
কটা বাড়ি ছবি তুলত ক্যামেরা কিনে?
স্কুল নেই? বিয়ে বাড়ি? আত্মীয়স্বজন?
পুজো বা জন্মদিন? খাওয়া? আয়োজন?
বান্ধববর্জিত নাকি! ছিল না এসবের প্রয়োজন?
প্রয়োজন না থেকে কারও পারে!
হয়তো...
কথা'কে এমন করে ঠোঁটে রাখা,
যেন মনে পড়ে গেছে প্রথম সাক্ষাৎ!
জ্যোৎস্নায় মাতাল রাতের বাতাস
বাতাসে স্রোতের ভাঙাচোরা, চাঁদ, ভাঙাচোরা বাতুলতা,
যেন এ' পৃথিবী একবারে একটিই জোয়ার,
একটি মাত্র আবর্তনের সাক্ষী থাকতে চায়
এই অবেলায় পরিচিত সকল পূজা
হারায় অর্ঘ্যের অধিকার, তবু
অন্তরস্থ ঈশ্বর জাগেন!
যেন এইবার সময় পক্ষ নেবার,
অথচ তোমার আমার অধিকার
শুধু, শুধুই নৌকা...
সবর্না চট্টোপাধ্যায়প্রকাশিত বই ‘চারদেওয়ালি চুপকথারা’।বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়, দৈনিক এবং ওয়েব ম্যাগাজিনে লেখালিখি।প্রবন্ধ লেখেন বিভিন্ন বিষয়ে।কিশোর সাহিত্যে আগ্রহ রয়েছে।দেশলাই১.পলকা টোকায় ভেঙে গেল জলের পাঁচিল…দুটো পা বালির ভেতর।পাড় ভাঙছে হুড়মুড় করে...যে চোখ স্তব্ধতায়, অস্থির…আবার একবার সতীদাহ। গভীর খাদে একসঙ্গে ঝাঁপ…২.কত পথ হেঁটেছে একা সময়। কেঁদেছে আড়াল!ক্ষয়ে গেছে হাড়। মৃত শব্দের যন্ত্রণায় কাঁথা...
তাপস কুমার রায়
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অর্থনীতির গবেষক তাপস কুমার রায়। তিনি একজন চিত্রশিল্পীও। প্রকাশিত হয়েছে কবিতার বই 'ঘর খোঁজা সন্ধ্যারা'।
দ্বন্দ্ব
রাধার ঘরে কৃষ্ণ আঁধার, ভক্তের মনে সুখ
বৈষ্ণবেরা বুঝতো যদি আয়ান ঘোষের দুখ।
মৃত্যু
নরম পায়ে নদীর ঘরে হাঁটতে গেলো মেয়ে
প্রথমে দাঁড়ি পরে কমা ক্রমে বিন্দু হতে চেয়ে
চোখের সাদায় সন্ধ্যা ঘনায় শব্দহীন পথে
আবছা তরল...
লহর
কীভাবে লহর চলে মেঘশঙ্খরোদে!
কীভাবে লহর চলে সম্ভাবনা ছাড়া!
ক্রমশঃ পলির দিকে ম্যাজিক সমূহ...পাখি...
পাখি...
সীমান্ত হাত পেরিয়ে যায়...ঐ যায় হুলুস্বর
হংসধ্বনি গোক্ষুরজল
যায় বেজুবান ও নৃশংস ছুরিকা
তবে এসো,কথা হোক মদিরা-শ্রমণ,
রণকৌশলের ব্যপারে তুমি কী ভেবেছিলে,
কোথায় কোথায় ঘটবে ঘনবসতি বিভ্রম?
করোজ্জ্বল
করোজ্জ্বল ভবচরাচরে তুমি হে কৃপাময় একমাত্র লিবিডো,ভর করেছো সমগ্র গগনমণ্ডলে।
ভূধরে শ্যামা ঘাস তার ফসিল হারালো, বীর্য হারালো...
রাধার ছিল শতেক ঘোড়া, জিনপরানো
একলাপথে হাঁটছে তবু, রাজকুমারি
পথ পাথরে বেবাক তাকে ভুলিয়ে দিল
তারও আছে চকমেলানো রাজার বাড়ি।
কৃষ্ণকিশোর মাঠ চিনেছে ঘাট চেনেনি!
যে ঘাট বেয়ে নামছে সিঁড়ি রূপসায়রে
কে দিল তার বাঁশির বাতাস, চুম্বনে স্বাদ
কেউ কি জানে? রঙ-বেরঙে কুৎসা ওড়ে
আজকে যখন কৃষ্ণরাজের কলটি নড়ে,
মিথ্যে তাকে 'ধর্ম' নামে উঠছে ডেকে!
বাঁশির ফুঁয়ে দেশপ্রেমের ওড়ায়...
সমরেশ মুখোপাধ্যায়জন্ম সত্তর দশকের প্রথমার্ধে। শিক্ষা ইংরেজি সাহিত্যে এম এ। প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় শুকতারা পত্রিকায়। প্রথম কাব্যগ্রন্থ শামুকজন্ম। অন্যান্য কাব্যগ্রন্থ -বিষণ্ণ দাবার কোর্ট, তোমার ইঙ্গিত বুঝি, পুর্বপুরুষের ছায়া, নক্ষত্রবাড়ি, খাদের কিনারে একা। ২০১৫ সালে বনলতা পুরস্কার, ২০১৬ সালে অমিতেশ মাইতি স্মৃতি পুরস্কার, ২০১৭ সালে নতুন কৃত্তিবাস পুরস্কার পেয়েছেন।দীপাবলির...