স্রোতের মাঝখানে শান্ত ঘূর্ণির মতন নাভি। নাভির মতন দুরারোগ্য গভীর অবসাদ। শুধু দুধ পোড়ার গন্ধে আমি তোমাকে ভালোবেসেছিলাম। শুধু টেবিলক্লথের ওপরে শুকনো চায়ের দাগ দেখে সাহস করে বলেছিলাম, দরজা খোলো, কিছু কিনতে হবে না। আমি আজ টবের শুকনো গাছগুলোর গোড়ায় জল দিয়ে চলে যাচ্ছি। কাল আমি স্নানঘরের আয়না...
তোমার চিঠির কোনও উত্তর দিইনি বলে
নিকটের রাধাচূড়া বিরাগ সেধেছে গত দীর্ঘ এক ঋতু।
কী বলি প্রণয়চালে?
অথবা শোকের মতো অশ্বত্থের ঝুরি নামা দেখে
বিগত মৃত্যুর কোনও অনুষঙ্গ মনে পড়ে যদি?
স্থিতধী উদ্ভিদজন্মে কার শিকড়ের টান কার চেয়ে বেশি,
এই নিয়ে দড়ি টানাটানি শুরু হলে
কার কাছে বিষমাখা এঁটো হাত পেতে
কোন নামে কাকে ডাকি ময়দানে শহিদ...
কথা'কে এমন করে ঠোঁটে রাখা,
যেন মনে পড়ে গেছে প্রথম সাক্ষাৎ!
জ্যোৎস্নায় মাতাল রাতের বাতাস
বাতাসে স্রোতের ভাঙাচোরা, চাঁদ, ভাঙাচোরা বাতুলতা,
যেন এ' পৃথিবী একবারে একটিই জোয়ার,
একটি মাত্র আবর্তনের সাক্ষী থাকতে চায়
এই অবেলায় পরিচিত সকল পূজা
হারায় অর্ঘ্যের অধিকার, তবু
অন্তরস্থ ঈশ্বর জাগেন!
যেন এইবার সময় পক্ষ নেবার,
অথচ তোমার আমার অধিকার
শুধু, শুধুই নৌকা...
বাবা বলেছিল- পৃথিবী ঠাকুমার মতো সুন্দরী। ছোটকাকু বলেছিল- আমাদের গ্রামে কোনওদিন যুদ্ধ হবে না।
দুজনেই মিথ্যে বলেছিল। আমাকে বাঁচাতে?
বুড়ি দিদিমণি বলেছিলেন- অঙ্ক শেখ। সব অঙ্ক মিলবেই। জিতেন স্যর বলেছিলেন- রবীন্দ্রনাথ পড়। শান্তি পাবিই।
দুজনেই মিথ্যে বলেছিলেন। আমাকে বাঁচাতে?
যেদিন প্রথম বুঝতে পারলাম। চারজনকে আটকে ফেললাম। একটা গুহায়। ভীষণ রাগ তখন। বললাম-
কেন মিথ্যে...
দুহাতে দুচোখ নিয়ে ঘুরে বেড়ালাম এতকাল
রেটিনা-ওপড়ানো-মণি : সাদা অংশে লাল দানা-দানা...
কেউ দেখতে পায়নি তা’; দেখে শুধু অন্ধের অকাল—
খিস্তি-মেরে চলে গেছে। বলছে : ‘এ মা, চোখ থাকতে কানা’
বিক্রি-করে-দেব এদের কলকাতার পাহাড়িয়া-বাঁকে...
যেখানে মার্কেট-গিরি— উঁচু-উঁচু শৃঙ্গ-শপিংমল...
‘প্রাইস ট্যাগ’ লটকে-প’ড়ে ঝাঁ-চকচকে কাচমোড়া তাকে—
শারদীয়া উৎসবের ধুমে— অন্তর্ভেদী, অতন্দ্র, অতল...
ঘুরে-ঘুরে উড়ছে কারা সঙ্গীসহ পাকদণ্ডী-বেয়ে...
গলি পেলে চান্স-মারছে।...
মানুষকে কতটুকু জানো তুমি ?
কী এমন জানো ?
মানুষ তো সাজানো বাগানও
তছনছ করে দিয়ে
চলে যায় দূরে
কোনও বনে
ভিড়ের ভেতরে থেকে কেউ যা শোনে না
সে তা শোনে
মানুষ তো ভরা বরিষণে মাঝ নদী
পেরোতে পেরোতে একা একা
গল্প হয়ে যায়
তুমি শোনো
গল্প থেকে হয় ইতিহাস
যা কিছু বাস্তবে নেই
সেই মাটি সেই জল...
বর্ষায় বাড়িঘর ভেসে যায় জাহাজের মতো।
পাখিদের জায়গায় মেঘেরা দুপুর থেকে ওড়ে।
এইসব স্মৃতিদের রেখে দেয় যারা অক্ষত,
বারবার চাইলেও ফিরতে পারে না বন্দরে।
পাটাতন ভেবে জল বাড়ির বারান্দায় জমে।
নাবিকের লংকোট কেঁপে যায় হাওয়ার দাপটে।
শরীর ধোয়ার পর যত দ্রুত আর্দ্রতা কমে,
ঘরে মেলে দেওয়া শাড়ি ততটা আপন হয়ে ওঠে।
বাতিঘর সেজে দূরে জ্বলে ওঠে শহরের...
মাটির যাবতীয় দুঃখঘর আমাদের ব্যর্থতা
সাতসকালে গান গেয়ে যে মাঝি চলে গেছে
আলোর দুয়ার দিয়ে ঝরনা রোদের পাতায় পাতায়
তাকে দেখেনিকো কেউ
দুঃখদুয়ারে যাদের রোজ নামতা মুখস্থ
তারা তার পায়ের শব্দ শুনেছিল
গিঁট খোলা নেই বলে যারা বিরক্ত হয়ে ঘুমিয়ে গেছে
তারা মাঝরাতে স্বপ্ন দেখেছিল
কুয়াশায় ঢেকেছিল সবগুলো খোড়ো চাল
চাঁদ ফুটো হয়ে জ্যোৎস্নার জল এসে
ধুয়ে...
যখন আকাশের ছবি তুলি
মানচিত্রের খন্ড খন্ড দেশ গুলোর কথা মনে পড়ে
এঁকেবেঁকে কত রেখা
ভূখণ্ড কে ভাগ করেছে দৃঢ়তার সঙ্গে
দাগের এপারে ওপারে,
কত বিভেদ, কাটাকাটি, মারামারি
অথচ আকাশে কিছুই ছাপ ফেলেনা এসব।
এখনও ভূখণ্ড নিয়ে টানাটানি হয়
কিন্তু, আকাশ নিয়ে কেউ টানাটানি করে না
কারণ, মানচিত্রে আকাশ দেখা যায় না
তাই মান্টো আকাশের গল্প বলে গেছে...
উড়ো মেঘে এই যে খানিক বৃষ্টি হয়ে গেল
এই যে রাখালের মাঠ থেকে
ডেকে উঠলো হারানো বাছুর
হাঁসেরা পুকুর ছেড়ে শব্দ করতে করতে চলে যাচ্ছে
হাততালি দিচ্ছে ন্যাংটো বিভোর,
ভেজা ঘাস থেকে গড়িয়ে পড়ছে ফোঁটা ফোঁটা স্নিগ্ধ
আমি তাকে অনুরাগ বলে ডাকি…
আমি হাঁটছি , আর
সোঁদা গন্ধে ভরে...
পরাজিত হয়েছেন।
এর মানে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন।
দক্ষতাও অর্জন করেছিলেন।
নিজেকে তীক্ষ্ণ কিরণসম্পন্ন করে তুলে
নেমেছিলেন যুদ্ধে।
লড়েছিলেন।
সর্বস্ব দিয়ে লড়েছিলেন।
এর পর এল পরাজয়।
বিপক্ষ শক্তিশালী বেশি অথবা
ভাগ্যের কোনো দুর্ভেদ্য চলন।
আপনি পরাজিত হলেন মানে
লড়ে হেরেছেন। এ তো বীরত্বের কথা।
আমি এমন অনেককে জানি যাঁরা পরাজিত হবার ভয়ে
কোনোদিন যুদ্ধক্ষেত্রেই নামেন...
হাত-বদলের হাসি আমাকে আশ্বস্ত করে নৌকা খুলে রাখে।
এবার পতন হবে: যেমন দক্ষিণা দেবে এই পরপারে
মন্ত্রোচ্চারণে কাঠের তৃষ্ণা তেমনই উজ্জ্বল হবে
অমাবস্যা ঢালা হবে শ্বেতকরবীতে
তুমি কি মাধবী ছিলে?
জলতলে অনাগত নিমগ্ন সূর্যাস্ত?
পাতাবাহারের রাতে কোমল কড়ির খেলা এমন উদিত হবে শ্রীপুষ্পসঙ্কটে
না জানি আকর্ষ তার কার কাছে ভেসে ভেসে যাবে
খুঁটে বাঁধা অভিকর্ষ--এমন আরতি...
আকাশ থেকে অশ্রু ঝরে কার?
লুকিয়ে কেন মেঘের বাড়ি থাকো?
এ ভরা বাদর বিরহের কারবার
বুকের ভিতর কার ছবি তুমি আঁকো?
চিরদিন কানু মন্দিরে মোর
বনমালী তুমি ভাগ্যে নেই
এ শহর মেঘে ঘনঘটা ঘোর
বৃষ্টি মানে বুঝি তোমাকেই
যতটুকু আজ দিয়েছি ক্ষত
অশ্রুতে সব রেখেছি মেপে
নব জলধর বিজুরি যত
ফিরে দেখি অতি সংক্ষেপে
এ বরষায় তুমি একাই নাব্য
রাধিকার চোখে মনখারাপ
শুনো...
স্বপ্ন যদি তর্ক করে
আমি তার দু'ঠোঁটে আঙুল
না রেখে বুঝিয়ে দেব
বাস্তবের সবক'টা ভুল;
কিন্ত ভুল ঠিক করব না।
বালির ভিতরে থাকা সোনা
গয়না হয়ে যদি ফিরে আসে
ছোট বউ গায়ে দিয়ে,
আবারও পালিয়ে যাবে
সরল বিশ্বাসে...
কবিতা তো জটিল বিষয়
অনেকের হয় না
কিন্তু কারও কারও হয়।
যার হয়, তার হাতে থালা দিয়ে বাড়ো মাছ-ভাত;
যার হয়...
হঠাৎ কোনো তপ্ত গ্রীষ্মদিন,
বৃষ্টি এলো শহরতলীর পাড়ায়
দু-চোখ জুড়ে অতীত কিছু ঋণ—
ঝাপসা স্মৃতি প্রাচীর হয়ে দাঁড়ায়
বিষাদ বুঝি জলের ছদ্মবেশে
আঁধার হয়ে রাখছে লিখে নাম
হঠাৎ যদি সন্ধ্যা এলো ভেসে
নিম্নচাপের মেঘে ছুটির খাম
দু-খানি ট্রেন ছুটবে দুইটি দিকে
বাজলো বাঁশি, বিসর্জনের ডাক,
কক্ষপথে চিহ্নটুকু রেখে
একলা মেয়ে একলা পড়ে থাক...
একটা সাদা-কালো ছবিতে আমি
সযত্নে রেখে দিয়েছি রক্তকরবী!
যদিও আমার কল্পনা কোনো
অবয়বে ধরতে পারেনি সে ফুল!
রঙ দিতে পেরেছে কেবল...লাল, খুব গাঢ়
সমস্ত ছবিটায় ওই রঙটুুকু জানান দিয়ে বলবে
ঠোঁটে অমন করে লিপস্টিক আঁকার কারণ
শরীর থেকে শুকিয়ে যাবার আগে
হেমন্তের শিশির ওষ্ঠে ধারণ করো...
একটা কোনো ধ্রুব ইশারা তো চাই
তারই জন্য এমন রক্তকরবী।
তুমি নেবে?
কবিরা শুনেছি ফেরায়...
বিকেলবেলার হাওয়া এসে বলে গেল
প্রশ্রয় পেতে পেতেই কেউ উদ্ধত হয়,
তোমার কাছে আরেকটু উদ্ধত হতে চাইলাম,
সত্যযুগের এডিটর কুমুদ দাশগুপ্তর কথা লিখলাম
৭১-এর কলকাতায় গড়ের মাঠে সরোজ দত্তকে নামিয়ে দিলেন
অফিসার রুনু নিয়োগী, তারপর একটা গুলি......
প্রাতঃভ্রমণে এসে কেঁপে উঠলেন মহানায়ক।
আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে ২৪মিলিমিটার ওয়াইড অ্যাঙ্গেল ফোকাল লেন্স ক্যামেরায়
কানু সান্যালের ছবি তুলেছিলেন যে চিত্রগ্রাহক,...
ট্রেন যত এগোচ্ছিল গধনি পেরিয়ে
ততই কমছিল মানুষের তাড়া,
ট্রেনে ওঠা-নামার, দৌড়ে জায়গা ধরার....
জানালার ধারের সিট , তাতেও গা নেই ।
কানিমহুলি স্টেশন থেকে উঠল ,একই মন্ত্র জানা অনেক সোদর ;
নামবে গালুডিতে, হেঁটে যাবে স্বর্ণরেখার তীর ধরে ।
সুবর্ণরেখাকে ওরা স্বর্ণরেখা বলে ।
ফেরার সময় ছোটো লাল লাল শোলবাচ্চার পুরো চাকটাকে
জল থেকে পিঠে তুলে...
এমন কোনও বৃষ্টি নেই
এমন কোনও দৃষ্টি নেই
মেঘলা নেই যাতে
এমন কোনও ক্রান্তি নেই
এমন কোনও ভ্রান্তি নেই
ছায়ার চেয়ে গাঢ়
এমন কোনও আগল নেই
এমন কোনও বাকল নেই
বনস্পতি মায়া
এমন কোনও প্রান্ত নেই
এমন কোনও শ্রান্ত নেই
বিরহ যার আয়ু
এমন কোনও শব্দ নেই
কাল কিংবা অব্দ নেই
নিরপেক্ষ, সাদা
এমন কোনও পাত্র নেই
এমন দিবা রাত্র নেই
জলের দরে বুক
এমন কোনও ভূমিও...
দ্যূতসভাস্থল মধ্যে পৌঁছলেন অনিন্দিতরুচি।
বয়োবৃদ্ধ, জ্ঞানবৃদ্ধ প্রত্যেকের চোখে চোখ রেখে
নিক্ষেপিত হল তার প্রশ্নবাণ--
যিনি নিজে পরাজিত, তার অধিকার ছিল অন্যকে পণ রাখা?
এর উত্তর কী, সে তো সকলের জ্ঞাত;
ফলাফল সুদূরপ্রসারী; সে কথা বুঝতে এই সভাস্থলে জ্ঞানী-অজ্ঞানী--
অসুবিধা ছিল না কারোরই।
তবু সেই নিয়তিতে পাঞ্জাছাপ দিলেন সকলে।
আরও এক দ্যূতক্রীড়া শুরু হয়ে গেছে।
নীতি-নির্ধারক যারা, আত্মবিক্রয় করে
পণ...