অভিমান তোমাকে যত না ঠেলে দেয় দূরে
তার চেয়ে দূরে নিয়ে যায় রোমন্থন।
তার চেয়ে আরও যেন বিরাট-- দূরত্বের যবনিকা পড়ে
আকরিক খুঁজতে খুঁজতে খনি উজাড় ক'রে
উপড়ে আনতে মানিকমঞ্জরী!
তোমাকে যে সাকি বলে চেনে
সে তুমি পেয়ালার সখ্য নিখুঁত, অম্লমধুর!
যে তোমাকে চাঁদ তারায় গুনে দেখেছে
সে তোমার আকাশী জলে পা ধুয়ে দেয়...
বুঝতে বুঝতে শত ঋতু,...
ঘরের মৃদু আলো নিভে আসে দিনের শেষে
পাশাপাশি শুয়ে থাকে দাদু আর দিদা
ঘুমানোর আগে দিদার কত যে অভিযোগ
ভেসে আসে— দাদু তেমন কিছুই বলে না।
সমস্ত কথার শেষে দিদা বলে ওঠে
“আমি যেন ঠিক চলে যেতে পারি তোমার যাবার আগে”
দাদুর মুখ থেকে বেরিয়ে আসে কেবল একটিই কথা
“কেন যে এইসব বলো... সকালে উঠতে হবে...
শোকের কাছ ঘেঁষে অতীত নদীরা থেমে যায়
আঘাত ছোঁয়াচ পেলে ভেঙে যাবে মেঘেদের বাড়ি—
সেও বুঝি জল হবে, ধুলো হবে তুচ্ছ শরীর;
খাঁচারা বদলে যাবে প্রতি জন্ম-অধ্যায় শেষে।
কারা যে বসেছে এসে নির্বাক সময়ের কাছে একা
মানুষের অন্ধকারে ঘুম আনে সমস্ত মৃতস্বর,
প্রহরের অপেক্ষা শুধু— এই বুঝি সাঙ্গ হবে খেলা
কীভাবে নিভে যাবে তারাদের সাবেক উৎসব।
স্রোতেরা...
আর কত আলোকবর্ষ !
সকাল দুপুর মধ্য রাত
বিরামহীন চলতে হবে আমি জানিনা।
নিজের কোন লক্ষ্য নেই
আলস্য মাখা কয়েকটি ছোট বড় চোখ
ধানকুটি মাড়ানো বলদের মতো
আমায় ছুঁটিয়ে বেড়ায়
কেন আমি জানিনা।
কাঁধের জোয়ালের কথা মনে পড়লে
আমার আরও খিদে পায়
অথচ ঘুম পায়না,
ঘুমের দুয়ারে অক্লান্ত আমি...
দন্ডি কাটি কেন আমি জানিনা।
শুধু আমি এটুকু জানি যে
এসব জানার জন্যই আমি...
একটা উত্তরকে প্রতিউত্তরের দিকে ঠেলে নিয়ে যাই
অপরাধের সূত্র ধরে কাঁচের ওপর দিয়ে হাঁটি
সন্তর্পণ জানালার বিচারক্ষেত্রের দিকে ঘুরে দেখি
স্পর্শের দক্ষিণ, থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে সিলিং ফ্যান
কণ্ঠার মৃদু হাড়ের ওপর জমে আছে অস্পষ্ট আঙুল
পোড়া মেঘের ছায়া এসে লাগে কাঁচের ওপর
আমি মুখ নামাই, জিভের করুণা খুঁজি,
খুঁজে দেখি পারা ওঠা আয়নার ওপর অবশ্যম্ভাবী...
নিজের মতো এক সন্ধ্যায় কেটে ফেলি হাতের শিরা
ভ্রম এসে আমাদের ন্যুব্জ করে গেল
তার দস্তানার ভিতর লুকোনো ছিল মেঘের পাহারা
তারও ভিতর ক্রোধ, মামুলি অস্ত্র
চাঁদের দুধ পড়ে পুড়ে গেছে শস্য। আমি সেদিকে যাইনি আজ
ধোঁয়া-ওঠা সেই প্রান্তর বীভৎস এক অলৌকিক হয়ে আছে
নিজস্ব শিল্পের মতো কেটে ফেলেছি হাতের শিরা। শ্বাস বুজে আসার আগেও
একবার...
নরম মাটির ভেতর কেবল মিলিয়ে যাচ্ছো তুমি। মিলিয়ে যাচ্ছে তোমার অস্তিত্বের উড়ন্ত ডানা। রৌদ্রজ্জ্বল সমস্ত দিন বসে আছে তোমার সরলতার পাশে। অথচ তুমি মেলে দিয়েছো শুকনো গাছের ডালে একফালি জটিল অন্ধত্ব। তোমার কাঠবেড়ালি রঙ, দৃষ্টিহীন চোখ ও লুকোচুড়ির সমস্ত সমীকরণ আমাদেরকে একটু একটু করে বিকারহীন নদীর কাছে বসতে শেখায়।...
সাউথ সিটি কলেজের সামনে ডিসেম্বরে যে বর বউ
দশটাকায় বারোটা গোলাপ দিত, মনে হতো তারা
দেবদেবী। কোন পদ্য লিখে তাদের তুষ্ট করা যেত
যদি জানতাম, তাদের জন্য লিখতাম দু এক লাইন।
আচ্ছা তুমি প্রেম বলতে কী বোঝ? হাতে হাত, ঠোঁটে
ঠোঁট, পায়ে পা, গায়ে গা... কী বোঝ তুমি? এ চরাচরে
প্রেম বলে কিছু নেই জেনে...
উড়ালের আগে যতটা আড়াল
যেভাবে গান মিহি হয়ে আসে রাতের দক্ষিণে
নামে বেনামে চিনে নিতে থাকি মানচিত্র
সুড়ঙ্গেরও নিচে, যেখানে টান জন্ম নেয়
ডাকে, ডাকে, ডাকতেই থাকে
আর কত নিচে নামবো!
প্রতিবর্তে স্পষ্ট হই রোজ
কনিষ্ঠ সময় চিনি। আমারই বরেণ্য ডালে পাখি
জ্যোৎস্নায় ডানা মেলে, শালবনে আলো মাখামাখি—
অবাধ মৈথুন শেষে ফেরে। ফের, উড়ে যায় বনে
বিষাদ প্রস্তর ভেঙে পথ তৈরি করেছে যাপনে…
কখনও রক্তাক্ত তির, ক্রৌঞ্চশাবকের ডানা ছিঁড়ে
বেপথু ও পরাহত। শবরেরই আকন্ঠ নিবিড়ে
গভীর আশ্রয় চায়… চায় শব্দে উচ্চারিত হোক
বহুবর্ণ সময়ের ওড়াউড়ি স্তব্ধ করে, শ্লোক—
সে-শ্লোক বন্ধক রেখে সময়ের...
জাল যদি বুনে নিতে হয়
তবে দেরি কিসের
মাছেরা যে প্রস্তুত
সমর্পণে
সে পাল্লা হোক কি
রুই মৌরলা
বোকা স্ক্রিন, পণ্য নীতি
রঙিন চশমা, জিপিএস
আমরাও জালের তলায়...
ফুলের বাগান করার অভিজ্ঞতা নেই, বিড়াল পোষার অভিজ্ঞতা নেই। তবু একটা বারান্দা আমিও চেয়েছি। বারান্দার দড়িতে ভাঁজ করে ঝুলিয়ে রাখব জঙ্গল, কিছু পাখির ডাক, একটা পাহাড়ি নদী আর তাতে পা ডুবিয়ে তোমার হেঁটে বেড়ানো। যে রঙমিস্ত্রির দেয়াল রঙ করার কথা ছিল, বালতিতে রঙের ব্রাশ ডুবিয়ে ফিরে গেছে, তার উৎকণ্ঠাও...
বারবার ফিরে যাচ্ছ, বারবার, কতবার শূন্য ক্রোধ নিয়ে
আমার কোনো মনখারাপ নেই একথা আঙুল তুলে বলে দিচ্ছি তোমাকে
পৃথিবী নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে, শস্যভূমিতে কাৎ হয়ে পড়ে আছে কাকতাড়ুয়া
রুক্ষ মাটি বন্ধ্যা, হা-হা অন্ধকার পেটজোড়া খিদে
কথোপকথন হলো না, নদী উলটে যাচ্ছে, জল গড়িয়ে আসছে বারান্দায়
তুমি ভয় পাচ্ছ না, তুমি চমকে উঠে জড়িয়ে ধরছো...
অসুরের মুখে আমাদের শান্তিকামী জননেতার মুখ
আমাদের অহিংসার ক্ষত
নতুন নতুন পথ খুঁজছে মুখ লুকোনোর
বছরের পর বছর
কাকে চির অশুভের প্রতীক বানিয়ে
ত্রিশূলে বেঁধা কার হত্যাকান্ড দেখে
আমরা পথ খুঁজছি মঙ্গলকামনার!
আমাদের মঙ্গলঘট রক্তমাখা
আমাদের শান্তির দেবতার দিকে
নিত্য উঁচিয়ে ধরছি
ধর্ম আর মতবাদ-অন্ধতার ত্রিশূল
পাঁচ হাজার বছরের ইতিহাস পেরিয়ে
দিগন্তব্যাপী সত্যাগ্রহ আর অনশনের শেষে
কে আজ একফোঁটা...
হাঁসের ডানার ছায়ায় কেমন রহস্যময় মনে হয় সবকিছু।এই মাঠ প্রান্তরের ভেতর ধান লুকিয়ে
রাখছে ইঁদুর।নদীতে ভেসে আসা কাঠের বন্দুক।
ঘোড়া হারানো সেই বিষন্ন জোতদারের কথা খুব মনে
...
কতকিছু প্লাবিত হয়ে যায়
বাবাকে দেখেছি ভাসমান নৌকোর মতো
ভেসে যেতেন এঘর ওঘর,
শাঁখের ধ্বনি শুনে কী ভাবে সন্ধ্যা হয়-
রক্তাভ আকাশ, তাও দেখেছি। শুনেছি
এই নৌকো, এই শাঁখ নাকি বংশের পরম্পরা।
বাজার থেকে মরামাছ এলে হাবুডুবু খেতো
উঠোনের জলে,
তা দেখে বঁড়শির মতোন হাসতেন ঠাকুমা,
সাদা থান ঠেলে ঝুলে পড়তো জীবনের অস্তরেখা।
আমরা যারা ছোট্টো...
অনেকদিন প্রণাম করা হয় না কাউকে,
বৃষ্টির দিনে সাদা জামা পরে, ছাতা হাতে মানুষকে দেখলেই কেমন যেন মাস্টারমশাই বলে মনে হয়...
কালো মেঘের মতো দুর্নীতি ছেয়ে আছে আমাদের সবার উপরে;
ছুটে গিয়ে জিজ্ঞেস করি,
"কোন পথে যাব স্যার... এত বিভ্রান্তি, এত হাতছানি, এত অন্ধকার,
কোন পথে যাব স্যার?"
- "যে পথে গেলে আয়নার দিকে...
আমার রক্তের মধ্যে আজীবন সমুদ্রের শব্দ শোনা যায়,
সমুদ্রের কাছে আমার যাওয়া হয় না খুব একটা।
তবু অফিস- বাড়ি, বাড়ি - অফিস করতে করতেই সমুদ্রের ডাক আমার শিরা উপশিরায় কোলাহল কল্লোল তুলে আসে।
প্রেমিকার ডাকের মতোই সে ডাক উপেক্ষা করা যায় না।
সুনীল দাসের ঘোড়াটির গায়ে সেঁটে দিই
জাদু বাস্তবতা। ফোলানো কেশর নিয়ে
তৈলচিত্র ছেড়ে নেমে আসে ঘোড়া। টগবগে
যেন এখনই উড়ালে যাবে। চার পায়ে ক্ষুরগুলি
কী বলিষ্ঠ লাগে! দাঁড়ানোর ভঙ্গিটিও মহেঞ্জোদারিক।
প্রত্ন ঘুম ভেঙ্গে উঠে আসা ঘোড়া
অনন্ত ভ্রমনে যাবে বলে মাটি বক্ষে ক্ষুর আঁচড়ায়।
বলে, ডেকেছো যখন তবে কাজ দাও। গতিময়
ক্ষুরের আঘাতে ধুলোঝড় জন্ম নিলে...
সে যেন খুব সীমান্তবর্তী গাছ
শিকড় এপারে ডুবে খানিক ওপারে
ফলের বসত ঘিরে যত আলোচনা
মাঠের নোনতা মাখে আচমন সারে
মালায় প্রশ্ন আসে এর কিছু পরে
জ্বালানির ঘ্রাণটুকু পেলে আজ তাকে
ফাঁকা জমি চুষে ফেলা বেহিসেবি রোদ ...