দেবাশিস সাহা (Debasish Saha), থাকেন কৃষ্ণনগরে। প্রকাশিত একমাত্র কবিতার বই 'সর্বভূতেষু'। পেশায় শিক্ষক। একা আর নির্জনবাস আমাদের দু'জনা মিলে সুন্দর নির্জনবাস একাকী পিঙ্গলরঙা দোআঁশের ঢিলেমি মাটির শিকড়ে বাড়ে মৃত ফরাসের অবকাশ সবই তো দিয়েছ মুছে হে ঈশ্বর হে অন্তর্যামী! পরজীবী মিথোজীবী অথবা পদস্থল জোড়া ভেসে গেছে মহাপ্রলয়ে নোয়ার নৌকায় সপ্ত ঋষির ন্যায় বেঁচে থাকে যতটুকু প্রাণভোমরা কালোরক্ত বয়ে...
তোমাকে নির্দিষ্ট দিনে কমবেশি বিরহে টেনেছি। রক্তিমতা, স্রোতের নির্ভার, তোমার দুচোখে দিয়ে এসে বসি আলগোছে, পিঁড়ি টেনে, উনুনের পাশে... নদীর বুকের খাঁজে যে ভ্রমর বাসা বেঁধেছিল, যে আলোর মরীচিকা অতি দূর নক্ষত্রের দিকে আমাকে টেনেছে, আমি আজ তাকে বিরহেই টানি। তুমি তো জেনেছ, ভয়, মৃত-সুর, বিপন্নতা, ঘুম— পুটুস ফুলের মতো তারা, আমারও পথের দুই পাশে কাঁটা হয়ে...
উত্তম চৌধুরী (Uttam Chowdhury) জন্ম: ১৯৬২। ইংরেজি ভাষা-সাহিত্যে স্নাতকোত্তর,বি এড। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: ২১টি। উল্লেখযোগ্য: শব্দবাহক, সনেট আটচল্লিশ, করতালি ধরে রাখবেন, চূর্ণ কবিতারা প্রভৃতি। পুরস্কার প্রাপ্তি: বিনয় পদক, ত্রিবৃত্ত, চিকরাশি, মন্দাক্রান্তা প্রভৃতি। টুকরো টুকরো প্রকৃত আলোর কাছে প্রস্তাবিত দিন সাঁকোর ডামি নিয়ে সড়ক পেরিয়ে যায়। ডিএমইউ ট্রেনের মতো দু'মুখো চিন্তায় ভরে উঠছে যাত্রাপথ, গন্তব্য আর গতিশীল...
শুভ্রাশ্রী মাইতি (Subhrashree Maiti) শিক্ষিকা। থাকেন পূর্ব মেদিনীপুরে। কাব্যগ্রন্থ-- মনজানালার আকাশ, সুবর্ণসুতোর সম্পর্ক, নিমফুলের নূপুর, মগ্ন জলের মুহূর্তেরা, হারিয়ে যাওয়া নাকছাবিটি। সৃজন মা রুটি বেলে আশ্চর্য কায়দায় বেলন ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে এক একটা নিখুঁত, নিটোল পূর্ণিমা চাঁদের বৃত্ত; গুঁড়ো গুঁড়ো জ্যোৎস্না আটার স্বপ্ন, রুটির গায়ে তেমন রুটি বেলতে পারিনি আমি কোনদিনও; মায়ের রুটি বেলার দিকে তাকিয়ে থাকি আর ভাবি পৃথিবী গড়ে ওঠে...
প্রায় নারীকণ্ঠে বিলাপের উচ্চতায় উড়ে যাচ্ছে হৃদয়বেদনাবাহী রিক্সার পর রিক্সা। নীচে এই শহরের চাপড়া-চাপড়া ত্বক পড়ে থাকে করুণ মাধ্যাকর্ষণের দিন। নদীর আকাশে এক তীব্র আলোর ছেদ দেখা গেল পাখিদের হৃদয়যন্ত্র লেগে ওই শেষ অস্ত্রোপচার বেতারে ছড়িয়ে পড়ে এইভাবে গান
"অর্ধেক নগরী তুমি অর্ধেক কল্পনা" (পথে প্রবাসে) প্যারিসে সূর্যের আলো ক্রমশ সন্ধ্যার রঙে মেশে ফরাসি ভাষার মতো নরম, মধুর এই রাত... তোমার হাসিতে দেখি মোনালিসা হেসে ওঠে আজ ল্যুভর মিউজিয়াম --- ছবির দূরত্ব মুছে যায়! এদেশে চাঁদের আলো পূর্ণ মায়ায় মন ভোলে এখানে একলা মন বিদেশ ভ্রমণ করে চোখে এখন মধ্যরাত ---- ওখানে কি চাঁদ ওঠে? প্যারিসে কি বুদ্ধ পূর্ণিমা?
বালক বয়সে গিঁট খুলতে পারিনি বলে তোমার তীর্থস্থানটি দেখা হয়নি আমার। তারপর গোয়ালন্দ স্টিমারঘাট পেরিয়ে উইপোকার মতো অচেনা দেশের মাটি দিয়ে ঘর বানিয়েছি আমরা ক'জন। ভাগ্যিস তোমার তোমাকে ছাড়া আর কিছু দেখিনি সেদিন তাই শুধু অপরূপ মুখশ্রী নিয়ে আজও তুমি বেঁচে আছো স্রোতস্বিনী কর্ণফুলি হয়ে। তারপর দিন গেছে মন্বন্তরে রাত্রি গেছে বেহুলা-ভেলায়। নিষিদ্ধ মাংসের লোভে কতবার চরিত্র দূষিত হয়ে...
আজ এই অসমাপ্ত রাতের আধারে জোনাকি ও তৃণদল, কুয়াশা ও গানের লিরিক থেকে সময়ের বেশকিছু আগে জন্ম নিল সবেমাত্র রক্তমাখা ক্ষীণদেহী মেয়ে এখন দীর্ঘ মাস রেখে দেবে কৃত্রিম উষ্ণতার ঘরে ছোটো ছোটো পাঁজরের ওপর মসৃণ ত্বকের আবরণ ক্ষুদ্র হাত নল দিয়ে ঢাকা হৃৎপিণ্ড, লাবডুব, দূর থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় অধীর স্পর্শের গায়ে লীন অপেক্ষাগুলোকে আজ মুড়ে রাখছে পুতুলবালিশে উষ্ণতার ঘর...
( আঙ্গিক ঋণ; পিনাকী ঠাকুর ) এখন আছে "আর সে নেই " বাড়ি পাশের রাস্তা দু-দিক খোলা আজও শূন্যতা ছোঁয় টগর, বকুল,ঝাউ-ও ও সান্তনা,তুমি এলে, তুমিও! জানি, মা কাঁদতে পারছেন না পিছুটানে জানলা খোলে বোন --- "কাকাতুয়া, আই, ভুল হচ্ছে কেন ? দাদা-ই ছিল রবীন্দ্র সঙ্গীত যথারীতি মায়া-ও আঁকে ছায়া (আমরা রইলাম সৌজন্য বোধক) কাজ ফুরোলে পালায় সূর্যি মামা   কোথা থেকে...
কতদিন বৃষ্টি পড়ে না বুকের পাটায় সকারণ ভেজেনি পাঁজর জলের খাতায় পাঁচিলে শ্যাওলা জমেছে অবোধ হৃদয় ঘড়িদাগে সেসব আজ শুধু অসময় নিয়েছি দুহাত মাটি, চাক ঘোরে লাঠির খোঁচায় জল সরে গিয়ে, পলি গভীরে, সব দেখা যায়
একটা লোক এই মুহূর্ত থেকে ‘নেই’ হয়ে গেল। নিমেষে বদলে যাওয়া বাড়ি, তার নিজস্ব এক ঘর, আলনায় গোছানো পোশাক একইভাবে পড়ে থাকে। বিছানায় শোয়ানো মলিন হ্যান্ডস্টিক, ঘরের কোণে পানের ডিবে সবাই নিশ্চুপ। একটা অভ্যস্ত শরীরের গন্ধ ধীরে ধীরে ফিকে হচ্ছে। জানলায় ঝুলে থাকা না-কাচা পর্দা, ব্যবহারিক খুঁটিনাটি ইত্যাকার অবশেষ ঘেঁটেও তার হদিশ মেলে না। শুধু,...
বিকেল-আকাশে ‘দৃষ্টিপ্রদীপ ’ উপন্যাসের আশ্চর্য মেঘেরা শেয়ালদাস্টেশনের থেকে বনগাঁলোকাল ছেড়ে দিল … ভিড় কামরায় কে আমি , কে সীতা, কে যে  দাদা , কে বা পাগল -হয়ে -যাওয়া বাবা আর ছেঁড়া -শাড়ি- পরা মা আমার ? ট্রেনের হু হু - হু হু- হু হু - জানলা গুমা- বিড়া- হাবড়ার বিড়িটানা চাঁদ  হারমোনিয়াম বাজিয়ে রসের ভিয়েন...
রাতের আকাশে জ্বল জ্বল করে আলোরবাতি মনে হয় আলোর নেশায় মত্ত কালো এই মহাশূন্য ভোরের পাতায় জমে জল রোদের আলোয় চোখ ফোটে ঘাসেদের রেল লাইনের ধারে সারি সারি যেসব দোকান, তাদের ব্যস্ততা বাড়ে,রোদের তেজ বরাবর, উনুনের আঁচ, ঝেঁটিয়ে ফেলা ধুলো, রাস্তা জুড়ে ছিটিয়ে থাকে জলের ছোপ,আর মাটির গন্ধ এভাবেই সবটুকু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয় শুরু হয় ভোরের আজান।
আপেল, ছুরি, জলের পাত্র, না-খোলা খবরের কাগজ আরো কিছু অনাবশ্যক দৃশ্য আর আছো তুমি-নেই ফলের খোসা ছাড়ানোর দৃশ্যের মত— খুব সাবধানে, সন্তর্পণে চেঁছে নেওয়া ফলের অযথা মাংস যেন না ফলের খোসার সঙ্গে যায়… যে-তোমায় সমীচিন করে তুলেছে সে এই ছুরিবিদ্ধ ফলের গায়ে সকালের গমগমে রোদ  
যেটুকু আলো এসে পড়ে রিক্সার গায়ে আমি তার হিসেব লিখে রাখি বিশ্বকর্মা পুজো ছাড়া আর গমগম করে না স্ট্যান্ড ছাতিমের গন্ধে গলিপথ ভ্রমণ-- গোপনে নেশা ছাড়ানোর পোস্টার নেই আগে-পরের মধ্যে বহুতল দীর্ঘশ্বাস বসন্ত এসে গেলে মনে হয় মানুষ আরো একা হয়ে গেছে!
কত ছদ্মবেশ জানে তোমার প্রতিভা অহংকারে নষ্ট এক নিষেধের মতো নেশায় আকুল হই। কত বিপ্রতীপে ঘাই মারে মাছের স্বভাবে মন ডুবে ডুবে জল খাওয়া চরিত্রের পেটে এত বুদ্ধি ধরো তবু এত রাগ সামলাও কী করে! তোমাকে নেব না ভেবে টেনে আনি ছোঁব না আঘাত তবু দাও কলতলায় যেভাবে বালিশ পেতে ধুয়ে দিলে মুখ্যুসুখ্যু ভ্রমে অন্ধ চোখের...
দিনগুলি অতি দীন, হীন তবু ক্ষীণ আশা মুছে যাবে একদিন দিবসের তেলকালিঝুল, আততায়ী মেঘ ভেঙে রৌদ্রের ফিরে আসা ভেঙে দেবে স্বৈরীর দম্ভের যাবতীয় ভুল। শিখিনি কাতর হতে ভয়-ত্রাসে নব নব শঙ্কায় হৃদয়নন্দনবন ফুলে-পল্লবে আছে ভরা, তবু জেগে বসে থাকি, দিন যায় লবডঙ্কায় হাওয়া এসে কানে কানে করে যায় মশকরা। তোমার কথা বাবা, ভুলতে পারিনা কিছুতেই বলতে তো, ঘটনার...
কবিতা লিখে খুব বেশি হাসিখুশি থাকা সম্ভব নয় কবিতার মধ্যে এক ধরণের বিপন্নতাবোধ আছে হিংস্র জন্তু যেমন আগুনকে ভয় পায় তেমনি সুখী মানুষ কবিতাকে এড়িয়ে চলে কবিতাগ্রস্ত লোকেদের ভর হয় ভূতে পাওয়ার মত তারা আছাড়ি পিছাড়ি লেখে কল্পনা করে চরমতম অসুখের কবিতার মধ্যে যে শোক যে আঘাত যে মাথাব্যথা সেসব লিখে লিখে কত কবির যে ঘর সংসার ভেসে গ্যাছে সে খেয়াল তাঁদেরই...
এখন আর কিছুই পড়ে নেই পোড়া বসন্ত সারারাত স্মৃতিহীন অতীতের কথা বলার চেষ্টা করে, কিন্তু পারে না দেওয়ালে তার পিঠ ঠেকে গেছে ! বুকের ভিতরে বাতাস ছিল এখন সে বাতাস অন্ধকার শীতলতম হিম! তোমার সঙ্গেও আর দেখা হবে না কোনওদিন লাস্য হারাতে হারাতে তুমি আজ লাশ হয়ে গেছ!
যেকটি বৃক্ষের কাছে ক্ষমাভিক্ষা করেছি ক্ষয়িষ্ণু রীতি মেনে, যেকটি প্রার্থনাগীতি স্বরলিপি খাতা জুড়ে আলো, যেকটি হননসাধ একান্তে অপূর্ণ থেকে গেছে─ সেসব অধ্যায় যোগ করে করে পৃষ্ঠা গুনে গুনে তুমি জীবনের অদাহ্য আখ্যান রচেছিলে। এই যে বিজন রাত কিছুই দেখে না খুঁজে, সঙ্গোপনে শুধু স্থির সর্বনাশ হয়ে জেগে থাকে স্বপ্নের ভেতরে─ মেঘে কুয়াশায় ছাওয়া উঁচু-নীচু অবাস্তব গ্রাম...