শংকর দেবনাথ (Sankar Debnath)
ক্ষমতাসীনের প্রেম
৪
চাষির লাঙল আর
মাঝির বৈঠা
সমানুপাতিক ৷
লাঙলের ফলা
ফালাফালা করে দেয়
জমির হৃদয় আর
বৈঠা কাটে
নদীর নাব্যতা মেনে
জলের শরীর
বস্তুত ক্ষমতা-হাত
গোলা ভরে আর
পৌঁছে দেয় গন্তব্যের
প্রিয় ঠিকানায়।
প্রকৃত প্রস্তাবে প্রেম
জোরাজুরি চায়।
মিতালি চক্রবর্তী (Mitali Chakraborty)
স্বপ্নসর্বস্ব
তারপর ভিন্নতা হাল ছেড়ে দূরে সরে যেতে চাইল
প্রিয় গান সুরের ভিতর রয়ে যাবে অনন্তকাল,
এমনটাই ঘটে গেল
পাতাবাহারের ফুল দৃষ্টিনন্দন হতে পারেনি,
প্রিয়তর হতে চেয়েছিল প্রাণপনে
নিরালম্ব গোপনে।
সমস্ত দিন কেটে যাওয়ার পর
অনাবিস্কৃত রাতটি জেগে ওঠে...
নতুন একটা দিন প্রসাধন সেরে ফেললেই তার ছুটি।
এইভাবে সমাহিত ঘুমের বিকল্পে উৎসাহিত আত্মরতির
অভিসার চলে আয়নায়।
সাহানুর হক (Sahanur Hoque)
আঁধি
আমি একদিন খুব ভোরে নগ্ন পায়ে দেদার বেরিয়ে পড়ব ছায়াপথের মতো পথে,
উপন্যাসের মতো দীর্ঘায়িত উটের শহরে
সীমানা পেরিয়ে খুব কাছে যখন বাতিস্তম্ভগুলি নিখোঁজ
তোমাকে নয়, তোমার মতো কাউকে ছুঁয়ে দেখব ক্যাকটাসের পাতায়
দংশনের ব্যাথায় খুঁজব তুলসী পাতা
শুনশান মৌন পৃথিবীর উপান্তে
ঈশ্বরের ছায়ার অন্বেষণে
আমার পাশ কেটে চলে যাওয়া আঁধির পিছনে ছুটতে...
দেবার্ঘ সেনে (Debardha Sen)
মান্দাস
ভাঙা আদর্শের চাদরে
লেগে আছে রাত
ধাপে ধাপে আবাদ, তোমার আমার।
শুধু আমার কাছে
শাঁখা ভেঙে
নিঃশুল্ক লাল চেয়েছিলে।
আধুনিক আজ হয়েছে উত্তর
তুমি মান্দাসে বইয়ে দিয়েছ তোমার
সকল চুম্বন।
আমাকে কেউ ডাকেনি
রক্ত প্রবাল কুমারী সৈকতে
এসে পড়ছে,
শেষ পঙক্তির আলো...
বৃথাজন্ম
প্রশ্রয়ে আজ পতন লেগে আছে
হারিয়ে গেছে রাইজোবিয়াম
বেদনা কোনও উপত্যকা নয়।
এপিঠ ওপিঠ আমাকে শুধুই
স্থবির করে দাও...
ধোঁয়া ওঠা গরম...
শর্বরী চৌধুরী (Sarbari Chowdhury)
ব্যর্থ
নিজের পায়ের ছাপ দলিত করি নিজেই
ছায়া হেসে ওঠে
বালুচর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে গর্ত খুঁজি,
যেখানে লুকোতে পারব নিজেকে।
দিনবদলের গান শুনতে পেলে দুহাতে
চাপা দিই কান।
অসহায় অপারগতায় ক্রুদ্ধ হই নিজের ওপর !
সাফল্যের অতিরিক্ত কিছু চাইনি জীবনে,
আজ সাফল্যের হাঁ-মুখ গিলে খাচ্ছে আমাকে।
এ-ই আমার একমাত্র ব্যর্থতা !
ভয়
আমি ভীত একটি শরীর পেয়েছি বলে
ভীত...
প্রণয় বটব্যাল (Pranay Batabyal)
হ্যাশ ট্যাগ শীতের পাঁচালী
১.
রডোডেনড্রন,দেখতে পাচ্ছিস?
আজ শীতকাল ঝরাপাতা,তালতলা পিকনিক স্পট!
দুটো পায়ে ভর দিয়ে বরফের দেশ থেকে আয়
এখানে লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকি
পাইন আর বার্চ মুকুট পরুক
নৈর্ব্যক্তিক স্বপ্নের মতো টান দিয়ে
এক একটা রাতে আরো ঠান্ডা পড়ুক!
২.
মুড়কি মুড়ি মোয়া, কিরে কেমন আছিস?
প্রতিটা দিন দুপুর ঘুম,আউটিংয়ে নার্সারি
সন্ধ্যে শাঁখ আর ঝিঁঝির...
সুদীপ দে সরকার (Sudip De Sarkar)
আত্মপ্রকাশ
দাঁড়াও
কথাগুলোকে মাজাঘসা করে নিই একটু
তোমরা বোসো
ফোনের সুইচ্টা অফ্ করাই থাক্, বড্ড বিরক্তিকর---
এটা তো জানোই যে আমার
দেরি হয়ে গেছে বেশ খানিকটা
ওই যে জানলা-দিয়ে-মুখ-বাড়ানো রোদ্দুর
ওই যে অসময়ের ডাক, কোকিলের ---
ওরা জানে
একবার যখন আমি পা বাড়িয়েছি
তখন আর কেউ
দাবায়ে রাখতে পারবে না আমারে।
ফুটো পকেট থেকে
এতটা সময় পড়ে গেছে
ঝরে...
আভা সরকার মণ্ডল (Ava Sarkar Mandal)
ভেসে গেলে
পাথরের খাঁজে খাঁজে আটকে থাকা
মনের কথাগুলো
কবে যেন ভাব জমিয়ে ফ্যালে বয়ে চলা চপল স্রোতের সঙ্গে
সুখ দুঃখের গল্প করতে করতে তারা
ভেসে চলে আনমনে ---
চারদিক থেকে অনিশ্চয়তা ঘিরে ধরলে
আকাশের প্রচ্ছদে আষাঢ়ে মেঘ
আর জলের বুকে প্রবল ঢেউয়ের দাপাদাপি
সম্বিৎ ফেরায়
ঠিক তখনই বোঝা যায়
একবার ভেসে গেলে
উজান ঠেলে তীরে...
জীবনে কখনো কোনো জটিল অঙ্ক নির্ভুল করেনি,
ধাঁধাঁ বা শব্দছকে ভয় পেয়ে এসেছে আজীবন,
নতুন শহরে গিয়ে চেনা বাড়ি গুলিয়ে ফেলেছে,
কম্পিউটারে টানা নাজেহাল, অনলাইন একদম না,
ঠিকানা ভুলেছে কতো সহজ সাফল্যের, বন্ধুরা একা
ছেড়ে গেছে, ছুঁড়ে গেছে বদনাম, কতোবার গসিপ করেছে,
টাকা খসে গেছে ছেঁড়া মানিব্যাগ বা পকেট থেকে,
সম্পর্কেরা যেন জলের মতোই আঙুলের ফাঁক...
শরবিদ্ধ জলপিপি যেভাবে জলের কাছে যায়
ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে আমি সীমাহীন পিপাসায়
দেখতে চেয়েছি তোমাকে; ক্ষান্তি নেই অনন্ত ছোটার
গ্রাম পেরিয়ে শহর, শহর পেরিয়ে গ্রহান্তর
ঘাসে ছাপ ফেলতে ফেলতে আমি কত দূর দূর গেছি
সুধার সন্ধানে যায় মহাবনে যেমন মৌমাছি
সন্ধেবেলা যে পরিটি সপেখম ফুচকা খেতে আসে
পাইন পাতার মতো কাঁপি ওর ভোরের বাতাসে
ওই যে গ্রিলে...
সুব্রত দেবনাথ (Subrata Debnath)
ফ্রেম
একটি নির্দিষ্ট ফ্রেমে আমার চোখ বাঁধা
ফ্রেমের বাইরে চোখ নিতে পারি না
চেষ্টা করলে হয়তো পারতাম, কিন্তু সে চেষ্টায় ব্যর্থ ।
জন্ম থেকেই এই ফ্রেমে বন্দি
আমার আর্টিস্ট এভাবেই আমাকে গড়েছে ।
যতবার ফ্রেমের বাইরে তাকাবার চেষ্টা করেছি
পাশের ফ্রেম থেকে আওয়াজ এসেছে
ধমকের সুরে !
আর সাহস হয়নি।
দেখেছি ফ্রেমের বাইরে যারা তাকাবার দুঃসাহস...
সোমনাথ রায় (Somnath Roy)
ভদ্দরলোকের বাচ্চা (ভাম)
একচল্লিশ ডিগ্রি তাপ-প্রবাহ ডিঙিয়ে বাড়ি ফিরলে
হাট করে খোলা জানলা দিয়ে ঢোকা প্রখর রোদ্দুরে
ঝলসানো ঘরখানা মুচকি হেসে সিলিং-এর পাখা ঘুরিয়ে দিয়েছে
মনে হচ্ছে, কাবাব হওয়ার দোর গোঁড়ায় পৌঁছেছি।
ভাত ঢাকা দেওয়া আছে খাবার টেবিলে।
আহা, খিদে আর একটু চড়লেও গা-মাথা ভিজিয়ে আসায় ভালো
ছাদের পিভিসি ট্যাংকে এখন চায়ের পাতা...
মণিদীপা বিশ্বাস কীর্তনিয়া (Manidipa Biswas Kirtaniya)
স্পর্শ স্বর
সা লাগাও ফিরসে
মাথার ভেতর ফিসফিস করে কে
গাছের অন্ধকারে জমে থাকে লয়
ক্ষত থেকে শাদারঙ আখর গড়ায়
সুরের ভঙ্গি.. তবে সুর ঠিক নয়
চাকলা ওঠা কাটা দাগ যতটা গভীর
জমাট আঠায় কোঁকড়ানো আর্তনাদ
যতদূর বয়ে নিতে পারো খালি পায়
মরা গান কাঁধে অন্ধ বেহালা ততদূর সুর নিয়ে যায়
ঘোলা লাগে জোছনা...
সন্দীপন চক্রবর্তী (Sandipan Chakrabarty)
অবৈধ স্রোত
কুর্তি গায়ে ফূর্তি এলো নেচে
যদি ফিরতে পারি বেঁচে
এটুক লিখে রাখবো--
তোমায় ভালোবেসেছিলাম
খেয়াল হতেই
হাজার ভয়ে নিজেই নিজের
টিপে ধরছি গলা
চোখের পাতা শুকনো নদী
হঠাৎ রজস্বলা
ঝাঁপাতে গিয়ে তুমি
থমকে গেলে;
বুঝলে কিছু
ঘটেছে গোলমেলে
কথা ছাড়াই বসলে এসে পাশে
হাত ডোবালে স্রোতে--
আঙুল তোমার ছন্দ পেলেই নাচে
হাত তুললে
স্মৃতির ভিতর
থোকায় থোকায় অপারগতা...
রক্ত লেগে আছে
হিংস্র
মানুষ মানুষের মাংস প্রকাশ্যে...
রূপক চট্টোপাধ্যায় (Rupak Chattopadhyaya)
ত্রিবর্ণ
১) নাভিকুন্ড থেকে
ক্ষুধাপদ্ম জেগে ওঠে।
তার তীব্র পরিমলে
ঢলে পড়ে দিনান্তের শ্রমিক পুরুষ!
২) কোনক্রমে
এগিয়ে পিছিয়ে অসমীকরণে
বেঁধে রাখি গনডোয়ানাল্যান্ড!
অন্তরে সব পুরুষেই শালিক পাখি
ষড়ভুজ জীবনের কোনায় কোনায়
উড়ে যায়, ঠোঁটে করে ঘরে আনে
সাঁঝের খড়কুটো, ডানায় ক্লান্তি ঝুঁকি পাড়ে
তবুও দিন থেকে দিনান্ত কাটে দাসত্ব প্রহরী!
৩) সঠিক বিন্দু থেকে অসীম অনন্তের দিকে
খিড়কি খুলে...
মৈত্রেয়ী রায়চৌধুরী (Maitrayee Roychowdhury)
বিজন রোদনা
আমার হাতে কখনও কোনও অস্ত্র ছিল না,
কোন হাতিয়ার নয়,
তবু, এতদিন তিলে তিলে গড়ে তোলা তিলোত্তমা, আমার ইমারৎ
এক প্রহরের সাইক্লোনে কীভাবে ভেঙে গেল!
আর ওই প্রবল ধূসর অবরোধকে যে আড়াল করে রেখেছিল সে উচ্ছল জলধিতরঙ্গ,
এক খরস্রোতা নদী।এতকাল
তা আমি জানতেও পারিনি।
সেই বন্ধনহারা উচ্ছলতা
প্রতিক্ষণে আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে চলেছে।
অবলোকন করি,
ভেসে...
রোজ রোজ ভুলে যেতে চাই
তবুও সেই অবাধ্য পিছুটান,
প্রতিদিনের আশ্বাসে হারিয়ে ফেলেছি নিজস্বতা,
স্তূপীকৃত জঞ্জাল থেকে তুলে নিয়ে ছিলাম
পরম সমাদরে, গঙ্গাজলে ধুইয়ে দিয়েছিলাম গা,
সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে দিয়েছিলাম বাদশাহী আতর।
লুডো খেলায় দানটা চেলে ছিলাম প্রথম থেকেই ভুল।
কখনো কখনো তিন ছক্কা ও তোমাকে
নিরাশ করতে পারে,
সামান্য একটা পুঁট জিতে নেয় জীবনের বাজী।
কেউ খুশি তোষামোদে,
কেউবা আভিজাত্যে...
শুভঙ্কর দাস (Suvankar Das)
জন্ম: ১৯৭৯, শিক্ষা: এম.এ, বি. এড, পেশা: শিক্ষকতা, কবিতা-গল্প-সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা ২৭।
গুপ্তনিবাস
বৃষ্টিভেজা ভোর আসে ঠিক মণীন্দ্র গুপ্তের কবিতার মতো,
আমি কাব্যের পাতাটি জড়িয়ে বেরিয়ে পড়ি
সেইসব রৌদ্রের বাড়ি
যাদের সঙ্গে কবিতার অর্থ নিয়ে হয়েছিল এক জন্ম মতান্তর!
প্রিয় লাল স্কুলবাড়ি,বলতে পারো কোথায় আমার ঘর?
এই ছন্দ, আসলে আমার ভেতরে প্রেম।
এই অলংকার,...
তুষার ভট্টাচাৰ্য (Tushar Bhattachariya)
কলম্বাসের নৌকো
নিঝুম হিমেল রাত্তিরে কলম্বাসের পালতোলা ফাঁকা নৌকো ভেসে আসে ঘুমের শিয়রে ;
আমি তার স্বপ্ন সন্ধানী নাবিক হয়ে
চলে যাই
গঙ্গা পদ্মা মেঘনা যমুনার দুরন্ত
জলস্রোত ভেঙে
শিলাইদহ সাজাদপুরের কুঠিবাড়িতে
সেখানে দেখি দখিন জানালা খুলে
ইজি চেয়ারে বসে আছেন রবীন্দ্রনাথ ;
কিছুক্ষণ পরে নৌকোর বাঁশের লগি ঠেলে চলে যাই বরিশালে
জোছনা আলোয় ভাসা ধানসিড়ি...
দুর্গা বেরার (Durga Bera) জন্ম নদীয়া জেলায়। বারাসাতে থাকেন। ছ'টি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। কয়েকটি বইয়ের নাম-- ও নতুন বছর, না বলা কথা, 'ভালবাসি' মুখে বলতে হয় না।
বানভাসি
সুন্দরী ঘেরা সুন্দরবনে- যারা ঝুঁপড়ি কুঁড়েতে থাকে-
ভালো 'বাসা' হীন ওরাই কেবল ভালোবেসে হেসে থাকে।
তোমার যাপন রোদেলা আকাশ, ওদের যাপন মেঘলা।
ওরাই থাকে আঁধার...