গুচ্ছ কবিতা: সেঁজুতি ভাদুড়ি

0
333

বিনোদিনী


এ চাওয়া আমার আসতনা যদি আমাদের প্রেমটা পূর্ণতা পেত। না পাওয়ার একটা মায়া আছে আলাদা, যেটা কাটানো কঠিন। এরকম একটা বৃষ্টির সন্ধেবেলার জন্যে যেগুলো তোলা থাকে…


আমাদের কোনোদিন দেখা হবেনা একান্তে। কিন্তু যদি হতো ! ভাবতে ভাবতে মাথার ক্লিপটা আমি খুলে চুলটা উড়িয়ে দিলাম হাওয়ায়। আমরা একসাথে ভিজতাম না, ভিজলে তোমার ঠান্ডা লাগার ধাত। আর আমার গায়ের কাছে এসে তুমি হাঁচলে সে ভারী বিরক্তের। মায়ের একটা বাক্সবন্দি ফুটফুটে সাদা ঢাকাই আছে। ওটায় সেজে উঠতাম আমি। কাল রবিবাবুর ‘চোখের বালি’ পড়ছিলাম, আমার নিজেকে আশালতা আর তোমাকে মহেন্দ্র ভাবতে ইচ্ছে হয়নি মোটেই। বরং নিজেকে বিনোদিনী ভেবে একটা অন্যরকম দুঃখবিলাস কল্পনা করছিলাম। ভালো লাগছিল ! যা আমরা অল্প পাই তার আদর বরাবর থাকে। ঠিক সেরকমই একটা অল্প আদরের গল্প হয়ে থাকতে চাই আমি তোমার বুকে। এমন এক বৃষ্টিদিনে মনে হয় আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে একটা রবীন্দ্রনাথের গান গাই আর তুমি পিছন থেকে আমার অর্ধ আবৃত পিঠ আর কোচকানো চুল দেখে থমকে যাও ! আমি আস্তে করে বাঁ দিকে দিয়ে পিছন ফিরে তোমায় দেখেও না দেখার ভান করে ফুলগাছের দিকে এগিয়ে যাবো। গুনগুনিয়ে গাইব ‘তুমি সুখ যদি নাহি পাও, যাও, সুখের সন্ধানে যাও’…


সুন্দরী বলে আমার একটা প্রচ্ছন্ন অহংকার, যেটাকে আশকারা দাও কেবলমাত্র তুমি ! আমার জন্য একটা আতর আনলে নাহয় সে সন্ধেবেলা। ছড়িয়ে দিলে সারা বারান্দায়, ঘরে, সে আতরে থাক জুঁই ফুলের গন্ধ। আমি ঘরে এসে তোমার শান্তিনিকেতন থেকে আনা বেতের লম্ফটা জ্বেলে যাব, চা খাবে তো একটু ?


পিয়ানো-তে বেজে উঠবে সুর…. যে সুর আগে কোনোদিন বাজেনি। একটা নতুন সৃষ্টি নতুন স্বরলিপি দিয়ে। একদম নতুন ছন্দে কথা বলবো আমরা। অনেক অনেক বছরের দূরত্ব মুছে যাবে এক লহমায় ক্ষনিকের জন্যে ! এমন তুমুল একটা আদরে বদলে যাবে আবীরের নকশা ! আমার সাদা কাপড়ের স্মৃতি হয়ে থেকে যাবে অনেকগুলো রং। বাইরে তখন বৃষ্টি, যা থামবার নয়,কমবারও নয়…..


সবশেষে তুমি একটু সিঁদুর নিয়ে সিঁথিতে না, কপালে একটা ছোট্ট চাঁদ এঁকে দেবে আমার ? সব ভালোবাসাই তো সিঁদুর ছাড়া অসম্পূর্ণ তাইনা ? কিন্তু বৈধতা ছাড়া যে নয়, সেকথা তো বলা নেই কোথাও! সাদা শাড়ি আর লাল টিপের মাঝখানে যেটুকু দূরত্ব থাকবে আমাদের, সেটাই হয়ে থাকবে আমার সারা জীবনের বেঁচে থাকার রসদ ! লম্ফর আলোটা বাড়িয়ে দিয়ে কাছে টেনে আমার থুতনি ধরে বলবে তুমি, আমার সুন্দরী ! আর ঠিক তখন; আমার চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়বে জল, কেন? কারণ ভালোবাসাকে সার্থক করতে এও যে এক বিষম বস্তু মহেনবাবু !