আজকাল সহবত শিখছি
১
যে সমস্ত শূন্যতাকে নিজের বলে দাবি করতাম, নিতান্তই আবেগ… আয়নার দিকে তাকালে বলিরেখা বাড়ে। সময়ের কোলে পরপর যুক্তাক্ষর।
হেঁটে চলি
শরীরে সহজপাচ্য রোদ্দুর
এরপর আয়ুযোগ হলে, ধরাকে সরা জ্ঞান করবো। চেসবোর্ডে লিখে ফেলবো সূর্যগ্রহণের নিরক্ষর কারণ।
২
সরে যায় কর্কটক্রান্তি দাগ, চেনা সংসার, ছক বাঁধা বিকেল। টুকরো অনুঘটক নিয়ে কেউ বেঁচে ফেরে, কেউবা আলিঙ্গন… বৃষ্টিস্নাত জোড়াসাঁকো, অনির্দিষ্ট সংলাপ।
প্রতিটা গভীর সমালোচনার পর নিজের ভেতর ঢুকতে পারা খুব জরুরি। সমাজ বিয়োগ করতে করতে জীবনকে দিব্বি একদিন সমান্তরাল করে দেয়। মানুষ হারিয়ে যায়, যেরকম পাখিদের অভ্যেস। গুটি গুটি পায়ে নদী ও জঞ্জাল।
৩
রান্নাবাটিচক্রে জড়িয়ে যাওয়ার পর সিঁথি আরও গাঢ় থেকে গাঢ় হতে থাকে। ঘুণ ধরে যায় কাগজে। অক্টোপাসের জিভ তোমার সান্নিধ্য আঁকড়ে ধরে। বেমালুম হেসে ওঠে বারান্দার অ্যালোভেরা।
আমরা যা ভাবি তার হদিস একমাত্র খুন্তির নিচে কিংবা চাটুর ওপর লেগে থাকা জমাট আটায়। এই হল চিরাচরিত সর্ষে-হলুদ গল্প। বাকিটা হতে গেলে…
অস্পষ্ট হয়ে যায় তোমার আমার ক্যান্ডেললাইট কবিতা সফর, ঘাম বরাবর হিসেবনিকেশ, আদানপ্রদান। নেগেটিভ কমেন্টস পাওয়া আধসেঁকা, আধপোড়া রুটিগুলো জানে ভুল আর ত্রুটির পার্থক্য।
আবার একটা উপন্যাসের সময় হয়েছে। আমি গুছিয়ে উঠছি আটকে থাকার ভয়…
৪
ছিটকে যাওয়ার মধ্যে যে সূক্ষ্ম আঁচড় থাকে, আমি তাকে নির্মাণ বলে জানি। এখানে ভেঙে যাওয়া যায়, ঝাঁটা হাতে দেয়ালে পিঠ ঘষা যায়। তাছাড়া, অসংখ্য জোঁকের সারি সারি প্রফেসির মাঝখানে মানুষ আচমকা পুঁচকে চড়ুই! আমি মনে করি, দুমদাম পাগল হওয়া জরুরি, দুমদাম নিজের থেকে নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার মধ্যে মারাত্মক স্বস্তি।
হাওয়া ততক্ষণই মিষ্টি যতক্ষণ আমি কবিদের আচরণ অনুসরণ করবো… সমুদ্রকে পাগল না ভাবলে উত্তেজনা মাথায় চড়ে না… আনুগত্য মানুষে মানুষে, আদিমতা ননভেজ ডিশে। আমি যাকে ইচ্ছে বলে জানি, সেখানেই নিয়মরেখার জন্মদিন। কবিতার ঘরবাড়ি নিংড়ে নেয় চটচটে গ্যাস ওভেন, ওবেলার আধ-কাঁচা মাছ অথবা ডিম ফুরোনো ঝোল। আমি কমলালেবুর খোসায় সংসার খোদাই করি।
অবশেষে, এক অক্ষর আদর লেখার পর বুঝলাম, গলার ভেতর চর্বি জমেছে। মানুষ আপেক্ষিক, অভিযোগ চিরস্থায়ী…
৫
একটা বিস্ফোরণ… বিপদসীমা থেকে আর একটু ওপরে। বিপদ তো আর বলে কয়ে আসে না! তুমি একে নক্সা বলে ধরেছিলে। সমস্তটাই ধরাছোঁয়ার বাইরে। নাগালে ছিলো দু চারটে মাছের কাঁটা, বাসি ভাত। তুমি ছাড়া এঁটোরাও বারান্দা চেনে না। আমি ফেলে আসি, পাঁচটা কাক আর দুটো বেড়াল… ভরসা আছে, ভরসা করা ভালো!
এদিকে, হস্তরেখা বলছে, আগামীকাল কেতুর দিন, নির্বাচিত দোষ আমার। ভাগ্য থেকে স্বাধীনতা ছেঁটে ফেলার পর পুরুষকে বাঘ আর মেয়েমানুষকে বাঘের মাসি হয়ে যেতে হয়। আমি তার দেখি, এখানেও কাঁটা আছে, জবরদস্ত বর্ডার। সূক্ষ্মতা বুঝলে নো ম্যানস্ ল্যান্ডে চড়ুইভাতি হবে, সাপিলা ডান্স হবে, চুপিচুপি নেশা হবে… আগুন নিভিয়ে নারী হবো আবার। বিপদ বাড়বে। ধূলিসাৎ বলিরেখা! মুচড়ে ফেলবো ‘না’ নামের শব্দ। অভিনয় শেষে অভিধান শব্দশূন্য। ভোর হতে না হতে বিদ্যুৎ চারপাশ…
তোমাকে তো ধন্যবাদ দিইনি কখনও, অজস্র অজুহাত লুকিয়েছো পকেটে। এখনও বুকের গন্ধটা স্পষ্ট। একটা বিষাক্ত ঘোর, অবিকল আয়নার মতো। এখানে আমিই পুরুষ। লিঙ্গের কাছে ক্ষমা চাওয়ার অধিকার পুরুষ কোনওদিন পায়নি…
পরিচিতি:
প্রত্যূষা সরকার
জন্ম: ১৫ জানুয়ারি, ১৯৯৫, কল্যাণী, নদীয়া
শিক্ষা: ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর, বি. এড
ছবি আঁকা ও আবৃত্তি দিয়ে শুরু আর লেখালেখিটা অ্যাকসিডেন্ট
প্রকাশিত বই:
● কবিতা
অসম ২২, অস্থির আঁতাত, ঈশ্বর থোড়ি না দেখছেন, ডোরাকাটা অন্ধকার পেরিয়ে, To Some Extent, আদিম জানলা ও সমুদ্র পার্বণ
● গল্প
বৃষ্টি রঙের নাকছাবি
● উপন্যাস
অ্যান্টিক্লক
প্যাশন: ছবি আঁকা ও তোলা, যে কোনও টপিকে লিমিটলেস বকবক করা আর ইনোভেটিভ রান্না
অবসেশন: আয়না ও রবীন্দ্রনাথ
লেখালিখির ইন্সপিরেশন: বাবা
অক্সিজেন: কফি, কালো-অক্ষর এবং মানুষজন
প্রেম: সমুদ্র, সৈকত