গুচ্ছ কবিতা: কুণাল সিংহ

0
232

পিকাসোর ছবি

একই পথে সব গল্পেরই শেষ
বস্তুত একটাই গল্প
মাঠের মাঝে
তৈরি হচ্ছে নিরবচ্ছিন্ন।
শুধুমাত্র মনে হচ্ছে বদলে যাচ্ছে ;
মাঠের চারিদিকে বিভিন্ন উচ্চতার
ঘিরে আছে যে বাড়িগুলো
সেগুলোর বিভিন্ন ছাদ থেকে
কেউ দেখছে কান কেউবা একটা চোখ
কেউবা নাকের পাশ অথবা মাথার পেছন
তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখের ওপর চোখ
ঢাকা পড়ে যাওয়া কান
ছাদের গুঞ্জন শোনার জন্য
উঠে আসছে আর একটি কানের পাশে
ঠোঁটের ওপর ঠোঁট
চিবুকের ঝুলন্ত তিল লেপটে রয়েছে
বাঁদিকের কপাল ঘেঁষে
ঘৃণাগুলো ডুবে যাচ্ছে চূড়ান্ত ঘৃণায়
অভিমানে বদলে নিচ্ছে ভালবাসাগুলো
কুয়াশা সিল্যুট বিচ্ছেদে
বদলে নিচ্ছে রূপরসগন্ধস্পর্শ
তুমি আমি তাকে
একটাই গল্প
মাঠের মাঝে
তৈরি হচ্ছে নিরবচ্ছিন্ন
বস্তুত পৃথিবীর সব গল্পই পিকাসোর ছবি

 

হঠাৎ ভালবেসে

যে মেয়েটি হঠাৎ ভালবাসতে এসে
পালিয়ে গেল দূর দিগন্তে
অন্ধকারকে মাখতে চেয়ে
একটু ভালবাসতে চেয়ে
ছোঁয়াল হাত আকাশগায়ে
অন্ধকারে ঝরবে বলে
কয়েক মুঠো বৃষ্টি হয়ে
বুকের ‘পরে মুখের ‘পরে
ঝরেই যদি ঝরুক না মন
মনেই নাকি পরল তোমার
আজকে বুঝি বাইশ শ্রাবণ

 

খন্ডিত

অতীত। ভবিষ্যৎ।
মাঝখানে অদৃশ্য বর্তমান। যার পিঠে
ঠেস দিয়ে গোটা একটা জীবন
শ্বাস ফেলছে উঁচুনিচু।
ঐ অদৃশ্য বর্তমানই এক টুকরো অনন্ত
সকালের চায়ের গ্লাসে ডুবিয়ে নেওয়া আধখাওয়া পাঁউরুটি।
ঐ পাঁউরুটিই তো আমার অখন্ড ভবিষ্যত
যা চায়ের গ্লাসে ডুব দেওয়ার পর
আন্দোলিত চায়ে-ভাসা আমার প্রতিবিম্ব
টলোমলো আমি, যার কিছুটা চলে গেছে শুষে নিয়েছে
খন্ড পাঁউরুটি, আকাশের মতো
আকাশ কী একখন্ড কেটে নেওয়া গেল, না
টুকরো টুকরো আকাশ একাসনে বসে
খন্ডসমূহ কিংবা অনন্ত! তাই যদি হয়,
প্রতিটা খন্ড আকাশে ছেড়ে দিই গানের পাখি
ঠোঁটে ঠোঁটে জুড়ে দিক তিনকাল
ছায়ার মত মায়ার মতো,
যা কিছু আমি
একখন্ড

 

ক্ষয়

বস্তুত, মানুষের আস্তিনে
প্রেম ও হিংস্রতা দুটিই গোপন থাকে
চক্রবৃদ্ধি সুদের হারে
একটি ক্ষয়ে গেলে অপরটি
উঁকি মারে বেশি

 

শিউলি

এবছর বর্ষার চেয়ে শরৎ বেশি
আমার চেয়ে যতটা তুমি।
রোজ মৃত্যুর হয়ে তুমি আসো
পাশে বসো। কপালের ঘাম মুছে দিয়ে
বলো, এখন ঘুমোও সময় হলে ডেকে দেব
ঝরে পড়ব তোমার সমস্ত লুকোনো নদীবিলে
শিউলি রঙের ওড়না গায়ে
ভেজামাঠ পার হয়ে যায় ও পাড়ার যে মেয়েটি
অন্ধকার শূন্যে আসে শূন্য অন্ধকার
অন্ধকারে কপাল লেখে অন্ধ অবতার
সম্ভবত!

 

ছাঁকনি

পৃথিবীর এই সুদিনগুলোর গল্প
ধরে রাখবে? সময়ের এই ছাঁকনি
ফুল না কিনে এমনি
গুঁজে দিয়েছিলে ছোট্ট মুঠোর মাঝে
গান্ধীজি আঁকা আকাশ রঙের টাকা।
সেই শিশুটা এখন হারিয়ে গেছে
হাঁটছে রাস্তা পথের খোঁজে নিশ্চয়
হাঁটতেই হবে অনেক রাস্তা তাকে
ঘুমের থেকে অনেক দূরে হাঁটছে
রক্ত গোলাপ দেয়ালে আঁকবে বলে।