জোসেফ ব্রডস্কির কবিতা

0
300

জোসেফ ব্রডস্কির (২৪ মে ১৯৪০ — ২৮ জানুয়ারি ১৯৯৬) জন্ম সোভিয়েত রাশিয়ার পূর্বতন লেনিনগ্ৰাদ, বর্তমান সেন্ট পিটার্সবার্গ-এ। তিনি বিংশ শতাব্দীর একজন প্রধান কবি ও উল্লেখযোগ্য প্রাবন্ধিক। উত্তর রাশিয়ার আরখানস্লেগ অঞ্চলে তিনি ১৯৬৪ সালের মার্চ থেকে ১৯৬৫ সালের নভেম্বর পর্যন্ত নির্বাসনে ছিলেন। ১৯৭২ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার নাগরিক, তারপর বেশ কিছুদিন স্টেটলেস এবং ৭৭ সাল থেকে আমৃত্যু আমেরিকার নাগরিক। তাঁর অধিকাংশ কবিতাই প্রকাশিত হয় পশ্চিমে। কবিতা লিখেছেন রাশিয়ান ভাষায় ও প্রবন্ধ ইংরেজিতে। পড়িয়েছেন ইয়েল, কলম্বিয়া, কেমব্রিজ, মিশিগান প্রভৃতি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ইংরেজি ও পলিশ ভাষা থেকে অনুবাদও করেছেন রাশিয়ানে। ব্রডস্কির কবিতা দশটিরও বেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। “Verses and Poems” (১৯৬৫), “A Halt in the Wasteland” (১৯৭০) তাঁর প্রথম জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কাব্যগ্ৰন্থ। ১৯৭৩ সালে জর্জ ক্লাইন অনূদিত ব্রডস্কির “Selected Poems” সম্ভবত তাঁর প্রথম নির্বাচিত কবিতা সংকলন। ১৯৮৭ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। তাঁর কবিতায় শাশ্বত সময়, ব্যক্তিমানুষ ও প্রকৃতির অন্তর্গত সম্পর্কের বহুমাত্রা, প্রেম, মৃত্যু, ক্ষমতা ও রাষ্ট্রের আগ্রাসন তীব্র অন্তর্দৃষ্টির ফলে অর্জন করেছে গহন বাকপ্রতিমা।

বর্তমান কবিতাগুলি জর্জ ক্লাইন কৃত অনুবাদ “Joseph Brodsky: Selected Poems” (Penguin Books) থেকে অনূদিত।

জোসেফ ব্রডস্কির কবিতা                                                               অনুবাদ-দেবজ্যোতি রায়

 ধোপানির সেতুর ওপর                                                                (ইংরেজি নাম: “On Washerwoman Bridge”)

ধোপানির সেতুর ওপর আমরা দুজন
দাঁড়িয়েছিলাম, ঘন্টা ও মিনিটের আলিঙ্গনবদ্ধ
দুটি কাঁটার মতন, মধ্যরাতের ঘড়িতে।
বিচ্ছেদ আসন্ন – শুধু একটি দিনের নয়
সমস্ত জীবন। আমাদের সেতুর ওপর
এমন সকালে আত্মমগ্ন এক জেলে
ভুলে গেছে তার ফাতনার সংকেত
বিস্মিত দু-চোখে তাকিয়ে রয়েছে
নদীপ্রবাহের দিকে, চঞ্চল প্রতিবিম্বের।

জলের হিল্লোলে বেড়েছে বয়স তার
তারপর যেন ফিরে আসে পুনরায় নবীন সময়,
বলিরেখাগুলি বয়ে যায় ভ্রূলতায়,
মিশে যায় তার যৌবনআঙ্গিকে।
আমাদের স্থানের সীমাকে সে ছুঁয়ে আছে
আত্মঅধিকারে। সমকালে যা কিছু একাকী
সবই যেন ভিন্ন এক সময়ের অনন্ত প্রতীক।

সে রয়েছে স্থানচেতনায়। তাকে দাও
আমদের গভীর জলের দিকে নিবিড় বীক্ষণ
শান্ত চোখে দেখুক নিজেকে,
নিজেকে চেনার গূঢ় অধিকার
নদী ও সময় বয়ে যায় আজ তার সাথে।
এ যেন গৃহের মতো, নতুন ভাড়াটে স্থাপন করেছে
এক মায়াদর্পণ, কিন্তু ভেতরে পৌঁছতে পারেনি।

পয়লা সেপ্টেম্বর                                                                        (ইংরেজি নাম: “September the First”)

খুব সাধারণভাবে দিনটিকে বলা হয় পয়লা সেপ্টেম্বর
এদিনই পতন শুরু হয়ছিল, বাচ্চারা ইস্কুলে
পোল্যান্ড সীমান্তে জার্মানির ডোরাকাটা লৌহঅবরোধ
তাদের গর্জনরত ট্যাঙ্ক, চকোলেটের ওপর
রাংতার মসৃণ মোড়কে যেন আঙুলের নখ,
মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছিল বর্শাধারী উলানদের।

সাজাও পানপাত্র!
মৃত্যুতালিকায় যারা প্রথমে রয়েছে সেই সব
উলানদের সম্মানে পান করবো মদ, শ্রদ্ধায় অবনত।
শ্রেণিকক্ষে ছাত্রদের তালিকার মতো ওই
মৃত্যুর তালিকা।

আরও একবার
বার্চের মর্মর শোনা গেল বাতাসে বাতাসে,
শুকনো পাতারা ঝরে, নীচু-ছাদ বাড়ি, যেন চারপাশে
পড়ে থাকা টুপি, পোলিশ সেনার।
শিশুদের কণ্ঠগুলি স্তদ্ধ হয়ে আছে নির্জন বাড়িতে
গুরু গুরু মেঘ হামাগুড়ি দিয়ে চলে যায়
পাশ কাটিয়ে, মৃত চোখ গোধূলি-জানলার।