সান্তিয়াগো বারকাজা– সমসাময়িক চিলের প্রতিনিধি স্থানীয় কবি সান্তিয়াগো বারকাজা ১৯৭৪ সালে সান্তিয়াগো শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯৬ সালে নেরুদা ফাউন্ডেশনের স্কলারশিপ পেয়েছিলেন তিনি। ২০০৪ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ কার্টো ওশিয়ানো’ প্রকাশিত হয়। ২০১৪ সালে প্রকাশিত হয় ‘ বসখেস হরিজন্তালেস’। ‘কাসাগ্রান্দে’ কবিতা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তিনি।
সান্তিয়াগো বারকাজার কবিতা অনুবাদ- শৌভিক দে সরকার
তোমার সামনে যে পাখিটা উড়ে বেড়াচ্ছে তার চোখে
শীতকাল থেকে একটা কাক
একই ভাবে কথাবার্তা বলে যাচ্ছে
একই স্বরে
কেউ আলাদা করতে পারবে না যে
কোনটা প্রশ্ন আর কোনটা উত্তর
চোখের সামনে যা কিছু রয়েছে
যা এতদিন ধরে তিলে তিলে তৈরি করেছ তুমি
সবকিছু অসহ্য লাগছে আজ
বিরক্তিহীন মনটাও আজ
তেতো হয়ে উঠছে তোমার কাছে
রোদে পুড়ে যাওয়া পাতাকেও
সহ্য করতে পারছ না তুমি
শীতকাল থেকে কাকটা শুধু একই ভাবে ডেকে যাচ্ছে
ও শুধু তোমার বন্ধ চোখ দুটোকে দেখতে পারছে
তোমার সামনে উড়তে থাকা পাখিটার চোখে চোখ রাখো
নিজেকেই দেখতে পাবে তুমি
নিজেকে ছেড়ে চলে এসো!
সাদা রাত
মেয়েটার ঘরের আলোই শুধু জ্বলছে
আর পাখিটার কাছে আলোটা আসলে তার নিজের ছায়া
দেওয়ালগুলো নভেম্বর মাসেই পড়ে যাবে
আত্ম্যহত্যা করার জন্য ব্যালকনি থেকে লাফ দেবে কেউ
মেয়েটার ঘরের আলোটা আসলে
এই শহরেরই আলো
একটা নগ্ন শহর
শহরের ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে
ওরা স্বপ্ন দেখছে যে ওরা ঘুমোচ্ছে না
আর ঘুমের সময় হলেই ওরা জেগে উঠবে
আমি স্তব্ধতার ভেতরেই ঘুমিয়ে পড়ব
আমার নিজের জায়গায় ভাসতে ভাসতে
আর মেয়েটার ঘরের আলো জ্বলতেই থাকবে
শীতকাল তার নিজের কথা রাখতে গিয়ে
কথাদেরই ভেঙে দিচ্ছে
যেখানে কেউ মারা যায় না
মাঝরাতে একটা ফাঁকা গলিকে
দুপুরের ফাঁকা গলির মতই মনে হয়।
কোনও দিক থেকেই কেউ হেঁটে আসে না
কারও কোনও শরীরই তো নেই!
কোনও জৈব বর্জ্য ছাড়াই
শরীরের স্বচ্ছতা
পৃথিবীর রঙ হয়ে ওঠে।
আর পৃথিবীর রঙ মানেই তো
স্তব্ধতার রঙ!
আমি এখানে কোনদিন ছিলাম না
আমি যেটা বলার না, সেটাও কোনদিন বলি নি।
আর কোনও কিছু গ্রাহ্য না করেই
একটা ফাঁকা গলি
এরকম একটা জায়গা হয়ে ওঠে
যেখানে কেউ মারা যায় না।
আর সেটাই বালির ভাষা!
কারন তুমি জানো যে একটা সম্পূর্ণ জীবন আসলে
একমুঠো বালি
যা একটা পাথরকে রাস্তা করে দেবে
আর একটা পাথর
অন্য একটা পাথরকে রাস্তা করে দেবে।
প্রতিটা রাতে
গাছেদের স্তব্ধতা থেকে
আমার গলার স্বর খোঁড়াতে খোঁড়াতে
তোমার দিকে এগিয়ে যায়।
যাত্রা
যদি তুমি গাছ বলে ডাকো
তাহলে তুমি যা খুশি তাই
বর্ণনা করতে পারবে
যা তুমি দেখতে চাইছ
তা আসলে কিছুই নয়
অথবা ঐ ঝাপসা ধারণা যেটা সবাই
একটা না জন্মানো গাছকে নিয়ে ভাবে
যে গাছটা ক্রমশ বাড়তে থাকে
আর পৃথিবীর ওজন অনুভব করে
পৃথিবী নিজে থেকে কিছু বোঝার আগেই
তোমার আদৌ ভালো লাগবে না
কোনও কিছুরই কোনও সমাপ্তি নেই
গাছের ঐ ধারনাতে
ঠোঁটদুটো চোখকে ছোট করে দেয়
যা আর কিছুই দেখতে পারে না
যার নিজের কিছু আর থাকে না
আর একই সময়ে
তোমার গলার স্বর
ডালপালা আর পাতার মধ্যে হারিয়ে যায়
চাঁদের সাদা পাহাড়গুলো
পশ্চিমদিকে ফুটে ওঠে
বোধবুদ্ধি হারিয়ে গেলে
তোমারও চলে যাওয়া উচিত
সময় তোমার পূর্বপুরুষদেরও হারিয়ে দিয়েছে
যে দৃশ্য আর শব্দ
ঐ ধারনাটাকে ফুটিয়ে তুলছিল সেগুলোও চলে গিয়েছে
চলে যাওয়ার সময়
ওকে গাছ বলেই ডাকো
যদি কোনোদিন সমাপ্তি এগিয়ে আসে
তাহলে সেও যাতে একদিন চলে যায়।