গুচ্ছ কবিতা: সুমন পাটারী

0
319

প্রতিষ্ঠান

আমাদের বাড়িতে দুটো প্রতিষ্ঠান
এক আমার বাবা,
আর এক আমি,

আমাদের মুখোমুখি সংঘর্ষে
যে আহত হয়,
সে মা,

কোনো প্রতিবাদ করে না
শুধু কাঁদে,

আমরা সে জল তুলে নিই হাতে
অঞ্জলি ভরে ছিটিয়ে দিই আত্মদাহে।

আলো

আমাদের পরিবারে একটাই কুপি
কেরোসিন উবে গেছে পড়ালেখায় কন্যাদায়ে,
এখন কখনো কুপির ভিতর আমি ঢুকি
কখনো ঢোকে মা
কখনো বাবা

এভাবেই আলো জ্বলছে ঘরে

হত্যার গান

আমাকে ঢেকির তলায় রেখে মেরেছে ভাত,
মেরেছে চাকরীর আশা, প্রাতিষ্ঠানিক বইপত্র,
মেরেছে মূর্খ বাবা মায়ের লক্ষণরেখা,
মেরে শুইয়ে রেখেছে কাঙ্খিত যুবতীর আপেলস্তন
গেলাসে গেলাসে আগুন ঢেলে দিয়েছে পুড়ে যাওয়া ফসল,
কবির মুখে থুথু দিয়ে চলে গেছে রাস্তার কুকুর,
মেরেছে সুন্দরীদের কামনার গান,
আরো মেরেছে সফলতা,
প্রেমিকার খোঁজে বেশ্যার বিছানায় গিয়েছি
লাথি মেরে ফেলে দিয়েছে সে আবেগ ও চাওয়া,

আমার শেষ আশা ভঙ্গ করেছে কবিতার প্রতি বিশ্বাস
আমার কথা সব গিলে খেয়েছে ভাষার খোলস।

কেঁচো

মাটি খেতে খেতে কেঁচো হয়ে গেছি
কখন, নিজেই জানতে পারিনি,
গতকাল মাঝরাতে লিখতে বসে দেখি
হাত, পা, হৃদয় কোথাও কিছুই নেই
ছাত্রদিনের ভুল,
সোনালী ক্ষত, সব মাটি হয়ে গেছে।

হামাগুড়ি দিয়ে দাঁড়া ভাঙা সাপের মতো
নেমে এলাম চেয়ারের পায়া ধরে
ভুলে গেছি যাবতীয় লেখার ইতিহাস
একা দিনরাত, জেগে থাকা।

তবুও কেউ, এখনো
কবি বলে ডাক দিলে
মন ভরে যায়, ভাবি লিখে ফেলব
অলৌকিক শব্দে সব অসহায় ক্রোধ

অথচ মাটি খেতে খেতে আমি কেঁচো হয়ে গেছি কবেই

সুমন পাটারী

দেখতে মানুষের মতো হলেও
হাত পা এখন লুপ্তপ্রায় অঙ্গ,
মফঃস্বলের এককোণায়
শীর্ণ লক্ষ্মীছড়ার পাশে
হেমন্তশেষের বিধবা ভূমির উপর
নাড়ায় শুয়ে আছে সুমন পাটারী।

তাঁর একটাই দাঁত।
তাও বিষদাঁত।
নীল শরীর নিয়ে ঘরে আছে তার মা বাবা শুধু,
বাকি সবাই পালিয়ে গেছে।

মায়া দিয়ে ডাকে যদি কখনো,
নিজের উপর ক্রুদ্ধ, অতৃপ্ত সুমন ,
ভুলিয়ে ভালিয়ে নিয়ে তোমার মোমের গলায়
বসিয়ে দিতে পারে বিষদাঁত!

তাঁকে এড়িয়ে চল,
ঋণগ্রস্থ ভয়ানক বিপজ্জনক
সাপ এক সুমন পাটারী