উদয়ন বাজপেয়ীর কবিতা

0
359

উদয়ন বাজপেয়ী হিন্দি ভাষার লেখক। তিনি ৪ জানুয়ারি, ১৯৬০ সালে ভোপালে জন্মগ্রহণ করেন। উদয়ন বাজপেয়ী একজন হিন্দি কবি, প্রাবন্ধিক, ছোট কথাসাহিত্য এবং স্ক্রিপ্ট লেখক। তাঁর কবিতার দুটি খণ্ড, একটি ছোট গল্পের সংগ্রহ, একটি প্রবন্ধের বই এবং অন্যান্য বিবিধ প্রকাশনা (পুনর্নির্মিত লোককাহিনীর একটি বই এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা মণি কৌলের সাথে একটি বর্ধিত কথোপকথনের বিবরণ সহ) প্রকাশ করেছেন। তিনি ভোপালের গান্ধী মেডিকেল কলেজে ফিজিওলজি পড়ান।

নীচের কবিতাগুলো উদয়ন বাজপেয়ীর ‘কুছ বাক্য'(১৯৯৫) কাব্যগ্রন্থ থেকে মূল হিন্দি ভাষা থেকে অনুবাদ করা হয়েছে।

উদয়ন বাজপেয়ীর কবিতা
অনুবাদ- বেবী সাউ

শাড়ি

একটা লম্বা খাবার টেবিলে বসে বাবা ছুরি আর কাঁটা দিয়ে রুটি ছিঁড়ছেন। আমি মুগ্ধ হয়ে তাঁর পাশে বসে তাঁর অদ্ভুত অভিনয় দেখছি।
মা, আলো-আঁধারি ডোবা,একটা খালি ঘরে বসে আছেন। তাঁর শাড়িতে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে বাবার মৃত্যু।
দাদুর একাকী হাত একটি হুকের জন্য একটি দেয়ালের উপর আঁকড়ে ধরে আছে যেখানে তিনি তার টুপি ঝুলিয়ে রাখতে পারেন। ঠাকুমা চুপচাপ বিড়বিড় করে বলে, “বুড়ো আবার ঘুমিয়েছে?”

আমি জোর করলে মা তাঁর সাদা শাড়ি পাল্টে দেন। আর রাস্তার দিকে ফিরতে ফিরতে হঠাৎ আকাশের দিকে মোড় নেন বাবা।

ছুরি

বাবা অফিস থেকে বাড়ি ফিরছেন। রাস্তায় মানুষের হাতে ছুরি চকচক করে। বাবা তাঁর কাগজগুলো ওপরে-নিচে করেন। মরার আগে তারা একে অপরকে সাহায্য করত। তাঁর কুর্তায় কাগজের ধুলোর জায়গায় অক্ষর ঝরে ঝরে পড়ছে। শূন্য চৌরাস্তায় এক বৃদ্ধ সারারাত বিক্রি করছেন চিনাবাদাম। ভাইয়ের হাতে বন্দুক। তাকে বাইরে যেতে বাধা দিচ্ছেন বাবা। আমি দরজার আড়ালে লুকিয়ে দেখি, দরজার কাছে চলে এসেছে তারা। রান্না করছেন বিধবা মা। ছুরির ঝলকে চমকে উঠছে বাবার কাঁপা হাত। খুব জোরে চেঁচিয়ে ওঠেন।

তিনি ভয় পাচ্ছেন, তারা তাঁকে না হত্যা করে বসে।

 সিঁড়ি

সবচেয়ে ওপরের সিঁড়িতে ঠাকুমা একদম নীচে আমি। মাঝখানে বাইশটি কাঠের সিঁড়ি এবং অকালে মারা যাওয়া একজনের পায়ের পাতা। ঠাকুমার হাতে ধরা দুধে কালো তিল। মঞ্জু হাসে। পাশের অন্ধকার ঘরে দাদু তাঁর মোটা চশমা খুঁজতেন। তিনি নীচে নামেন না। আমার থেকে দশ ধাপ দূরে একটি মোটা চশমা। মঞ্জু প্রসাদ পাহাড়ি মেয়ে। ফটাফট ইংরেজি বলে। আমি তার কাছে আমি ঠিক তার সংসারের মতো ছিলাম না। ঠাকুমার নীচের বাইশ ধাপ একটানা ওঠানামা করছিল সে। আর আমি শুধু শুনছি অকালমৃত এক মানুষের পদধ্বনি।

 প্রত্যাবর্তন

বাবা টেবিলের ওপাশে বসে ছিলেন। উঠানে দুটি চাঁদ, একটি লাল এবং একটি হলুদ। আমি দৌঁড়তে দৌঁড়তে সেখানে পৌঁছালাম। ভাই টেবিলের এপাশে বসেছিল। নিজের মৃত্যুর বারো বছর পরে, তিনি এই ধ্বংস প্রাপ্ত বাড়িতে ফিরেছেন। আমি জানতাম আমরা যেখানে আছি সেখানে নেই। তিনি মারা যাওয়ার আগে পারদর্শী ছিলেন না। আমরা বারো বছর ধরে তাঁকে খুঁজছিলাম পাহাড়ে। তিনি আমাদের খোঁজেন নি। তিনি খাচ্ছিলেন না কথাও বলছিলেন না নাকি ছিলেন। তিনি তাঁর পুরানো বাড়িতে ফিরে এসেছিলেন যেন এটি ধ্বংস হয় নি নাকি তিনি মৃত । আমি দৌড়ে গেলাম তাঁর দিকে। তিনি আমার দিকে। অদৃশ্য হয়ে গেল ভাই। আমি ছুটে যাচ্ছি তাঁর দিকে। তিনি আমার দিকে। ভাই আকাশপথ থেকে তাঁর স্পর্শ নিয়ে ফিরে আসছে।

তিনি ওই পথে ফিরে যাচ্ছেন পুনরায়।

 কুঁয়ো

সবুজ বাক্সে একটা কাগজের নিচে লুকানো আছে মায়ের টাকা। কালো আলমারির সামনে দাঁড়িয়ে বাবা। ভাই গভীর রাতে কুঁয়োয় ঝুঁকে আছে। সে কলসির কাছে গ্লাসটি খোঁজে যা সে কখনও পায় না। ক্ষেতে লাল টমেটো দেখে বাবা খুশি। তাঁর পিছনে একজন মালী ঘিঁষড়ে ঘিঁষড়ে হাঁটছে। মাঠের কোণে কালো মাটিতে শিশুকে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছে মালীর বৌ। ঘুমের মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে মা পৌঁছে গেছে কুঁয়োর কাছে। তারা একে অপরকে চিনতে পারছে না। ‘কূপের মুখ অন্ধকার প্রেত জল ভরে’, বিড়বিড় করছেন ঠাকুমা। আমি কখনই গ্লাস পাই না, গলা চেপে চিৎকার করে ওঠে সে। যেখানে ছিল মা সেখানেই স্থির দাঁড়িয়ে থাকে।

উঠোনের সাদা হরসিংগার(শিউলি) ফুল পুরো ঢেকে দিচ্ছে বাবার মৃতদেহটিকে।