ক্ল্যারিবেল অ্যাহ্লেগ্রিয়ার কবিতা

0
297

ক্ল্যারিবেল অ্যাহ্লেগ্রিয়া (জন্ম ১২ মে, ১৯২৪, মৃত্যু ২৫ জানুয়ারি, ২০১৮)।তাঁর প্রকৃত নাম ক্লারা ইসাবেল অ্যাহ্লেগ্রিয়া ভিদেস (Clara Isabel Alegría Vides)। ক্ল্যারিবেল অ্যাহ্লেগ্রিয়া বিশ শতকে নিকারাগুয়ার একজন উল্লেখযোগ্য কবি, প্রাবন্ধিক এবং সাংবাদিক। যদিও তিনি নিজেকে একজন নিকারাগুইয়ো সালভাদোরিয়ো বলে ভাবতে ভালবাসতেন। মধ্য আমেরিকার সমকালীন সাহিত্যে ক্ল্যারিবেল অ্যাহ্লেগ্রিয়া একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নাম। তাঁর কাজে পঞ্চাশ ও ষাট দশকের মধ্য আমেরিকিয় সাহিত্যপ্রবাহের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। সমকালীন অন্যান্য বহু কবি ও সাহিত্যিকের মতো অ্যাহ্লেগ্রিয়ার কলমও ছিল সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার। প্রতিসাহিত্যিক ভাষার ব্যবহার তাঁর লেখার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সাহিত্যে তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য ২০০৬ সালে তাঁকে ‘নয়স্ট্যাট’ আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। অ্যাহ্লেগ্রিয়ার জন্ম নিকারাগুয়ার এস্তেলি শহরে। মৃত্যু হয় নিকারাগুয়ার মানাগুয়ায়।

নিকারাগুয়ার কবিতা
ক্ল্যারিবেল অ্যাহ্লেগ্রিয়ার কবিতা
অনুবাদঃ শ্যামশ্রী রায় কর্মকার

ভীষণ আহত

আজ সকালে যখন
আমার ঘুম ভাঙলো
আমি জানতাম
তুমি ভীষণ আহত
আমিও তো তাই
জানতাম আমাদের হাতে গোনা দিন
এবং রাত
আমাদের না জানিয়ে কেউ সেসবের
আগে থাকতেই হিসেবে রেখেছে
আমার তোমাকে ভালোবাসতেই হত
তোমারও আমাকে
আমি তোমার সুগন্ধ নিয়েছি
তোমাকে ঘুমোতে দেখে
তোমার শরীর জুড়ে
বুলিয়েছি আমার আঙুল
ভেবেছি বন্ধুদের কথা
যাদের সময় শেষ
যারা এখন ওপারে
মৃত্যু সহজভাবে
যাকে ছুঁয়েছিল
যুদ্ধে পতন যার
জেলের প্রহারে
যে বন্ধু পদাঘাতে মৃত্যু সরিয়ে রেখেছিল
আমি ওষ্ঠ, অধর দিয়ে
তোমার উত্তাপকে ছুঁয়েছি
ভীষণ আহত
প্রেম আমার
হয়তো আগামীকাল
আগের চেয়েও বেশি আমি ভালোবেসেছি তোমাকে
তুমিও তো তাই

 

আমার শহর

_”শহরকে তোমাকে সব সময়
অনুসরণ করতে হবে” – সি.পি ক্যাভাফাই_

স্বপ্নে দেখেছিলাম, আমার শহর
অনুসরণ করছে আমাকে
তার নিজস্ব পতঙ্গের
তার বৃক্ষপত্রাবলীর
তার প্রস্তরাবৃত নদীর
গান শুনেছিলাম
তার সৌরভ আবিষ্ট করেছিল আমাকে
তার সুগন্ধের বাষ্প
স্বেদের অম্লভাব
আর আমি
পালিয়ে যেতে চেয়েছিলাম আমার শহর থেকে
তার মূক আর্তনাদ থেকে
বাসি গন্ধ থেকে
আর সে আমাকে তার
মুখের মিছিল
রাস্তা
ওড়নায় আবৃত হাসি নিয়ে
অনুসরণ করেছিল
আর আমি তাকে তিরস্কার করতে চেয়েছিলাম
আর সে অদৃশ্য হয়ে গেল
আলোহীন
ছায়াহীন
আর তার না থাকা ব্যথাতুর করল আমাকে
স্বপ্নের ভেতর ফুটল স্মৃতিমেদুরতা
শৈশবের পথগুলো খুঁজলাম আবার
হারানো বন্ধুদের স্বপ্নে দেখলাম
যেসব বৃক্ষ আর
পাতাদের আমি হারিয়েছি
টাউন হল ব্যান্ডের স্বপ্ন
পাখির বাসার স্বপ্ন, উজ্জ্বল হলুদ
আমার ছোট্ট সেই সাদা পোশাকের স্বপ্ন
আর সেই চার্চবেল, প্রার্থনায় যাবার ডাক
পার্কের কোণে
আমি জেগে উঠলাম

মিছিল

একটি স্থির নৈঃশব্দ্য ভাবছে আমাকে
আরেকটি খোলসহীন নৈঃশব্দ্য
হেঁটে বেড়ায় আমার ভিতর
সে আহত
চিৎকার করে
ধস্ত করে দেয় সে আমাকে
এবং মধ্যরাতে
সিন্দুকের ডালা খুলে যায়
ধীরে ধীরে খুলে যায় তারা
একে একে নানান তৈজসপত্র বের হয় হামাগুড়ি দিয়ে
গুপ্ত সরণিতে তারা
বুকে হেঁটে আসে
আর শরীরে মোচড় দিয়ে
পড়ে যায় মেঝের ওপর
ছাঁচের পুতুল
অব্যবহৃত চাবি
মাকড়সার জালের আলোময় তন্তু
ধাতুর গন্ধ
আর জুঁই ফুল
এবং পচন
পাটির চতুর্দিকে
এইসব হামাগুড়ি দেয়
মিছিল পরত খোলে
গন্ধ
চিহ্ন
যোগাযোগ
একটি না বলা প্রেম
ভুলে যাওয়া হাসি
মিছিল এগিয়ে যায়
তরঙ্গ তুলে
বন্ধ চোখের পাতা ছেঁকে নেয় তাকে
ফোঁপানির শব্দ ছেঁকে নেয়
সব কণ্ঠস্বর
আর মাথা ঘুরে যাওয়া
এবং নরক
পাখিদের খ্যানখেনে চিৎকার
আমার জীবন আর
মৃত্যুর মুখ
আর আমার রাতভর একা একা লাগে
ভয় ভয় করে