ছোটদের ছবি
ওর ছোটবেলাকার কোনও ছবি নেই
ছোটবেলা নেই?
না না, ছবি নেই
ছোটবেলাটা কি ছবির মতো নয়?
সে আর ক’জনেরই বা হয়!
তা বলে ছবি থাকবে না?
হয়তো ক্যামেরা ছিল না
সেই সব দিনে
কটা বাড়ি ছবি তুলত ক্যামেরা কিনে?
স্কুল নেই? বিয়ে বাড়ি? আত্মীয়স্বজন?
পুজো বা জন্মদিন? খাওয়া? আয়োজন?
বান্ধববর্জিত নাকি! ছিল না এসবের প্রয়োজন?
প্রয়োজন না থেকে কারও পারে!
হয়তো নিয়তি যাকে মারে
আমাদের চেনা ডাক কখনও ডাকে না তাকে
আলো নিতে
হয়তো ব্রাত্য করে রাখে
মুহূর্তের ছেদ যাতে না পড়ে কারও কোনও
রোজকার আরামের ফাঁকে
তাই ওর মন আনমনা
ডেকে ছবি তুলে দেবে
ছবি তুলে রেখে দেবে
অ্যালবাম ভরে দেবে
এমন দুখানা হাত
হয়তো আশৈশব স্বপ্নে ছিল…
ছেঁড়া মেঘে বৃষ্টিরা ছিল না।
উবের ডেকে দাও
শ্মশানঘাটে গঞ্জিকাসেবীদের পাশে বসে
যে গয়নানৌকোর লণ্ঠন দেখতে পেল…
শেরাটন পাবে ডিউটিবদলের সময়
যার চোখে পড়ে গেল নর্তকীর ছাপা শাড়ি…
কর্পোরেট মিটিংয়ের মাঝখানে যে খেয়াল করল
নতুন চাকরি পাওয়া ছেলেটার জুতো…
ওদের চটপট তিনটে উবের ডেকে দাও
তিনজন ড্রাইভারকেই বলে দিও একটি প্রসূতি সদনের নাম
যেখানে তিনটে টেবিলের সামনে
ওদের সময়মতো হাজির করতে না পারলে
সর্বনাশ হয়ে যাবে…
নাড়ি জড়িয়ে গিয়ে মৃত্যু হবে তিনটে সদ্যোজাত কবিতার ।
কনটেইনমেন্ট
ডাক্তারবাবু বললেন ডিম না খেতে
প্রথম প্রথম অ্যালার্জি উপশমের আনন্দে
ব্যাপারটা ধরতে পারিনি
ক্রমশ দেখলাম একটু মাখনভাত আর অমলেটে
গনগনে গ্রীষ্মের অনেকটা ঢেকে রাখা যেত
তুমুল বৃষ্টির দিনে রান্নাঘরের সুতোটা
বজায় রাখতে পারত টানটান সার্কাস
আর ভাগ করা ডিমঝুরির ঝোলে
মাসের শেষদিনগুলোতেও
বেজে উঠত ইমনকল্যাণ
ডাক্তারবাবুর নিষেধে আমিষ নিরামিষের ফারাকটা
আমাদের বাড়িতে বড্ড বেশি প্রকট হয়ে উঠছে ।
ব্ল্যাকআউট
অন্ধকার হয় না অনেকদিন
টর্চ আর টেবিলল্যাম্পের ছোট বড় লোডশেডিংগুলোর
শীতঘুমে চলে যাওয়া
আমরা কেউ টের পাইনি
দোতলার টানাবারান্দা থেকে
রাস্তা ঝলসে যায় পাণ্ডুর আলোয়
সামনের বাবলা-বাবাই বাড়িটা
প্রমোটারের হাতে চলে গেছে
খোঁড়া ভিত থেকে লোহার আঙুল উঠে
ঘন রাতে হাউমাউ করে বলে
শ্রাবণী জ্যোৎস্নার চাঁদজল দেয়ালের গা বেয়ে
এখানেই মিশেছিল
একটুও পড়ে নেই কেন?
গলায় পাথর নামে
বোবাচোখে দেখি
আলোয় ঝলসে যাওয়া গলি
বাঁকতে বাঁকতে পিচ্ছিল হয়ে উঠছে
আর রোয়াকের শেষ ভরসারা
কেটে রাখা গহ্বর থেকে আলকাতরা তুলে
ঢালছে একের পর এক জানলায়।
প্রয়োজনীয়
একটু একটু করে চুপ করছি
একটা একটা করে বাইরের আলোগুলোয়
শেড দিচ্ছি
আজকাল শেডের অনেক দাম
সবকটা শেড একসঙ্গে কিনে ফেলার মত সঞ্চয়
করে উঠতে পারি না
প্যাকিং বাক্স করে শেড আসে
বাক্স ভর্তি খড় — আসল নয়, কাগজের খড়
ঘাস চুপ হতে হতে খড় হয়ে গেছে
তারপর বাদ পড়ে গেছে…
এখন কাগজের খড়
পরিপাটি, নকশাআঁকা শেড নিয়ে আসে
আমার শেড দরকার
— ঝলসানো আলো দূরে রাখে।