গুচ্ছ কবিতা: সমরেশ মুখোপাধ্যায়

0
290

পোড়া রুটি ও কয়েকটি কবিতা

দ্বিতীয় ঢেউ

ভালো লাগছে না বলতে নেই
বলো লড়াই-ই জীবন
মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে মৃত্যুকে অস্বীকার করার
শক্তিকে বাঁচিয়ে রাখাটাই চিয়ার্স
বাকি সবকিছু আবর্জনা
টান মেরে ছুঁড়ে ফেলো
হাসো,লুটোপুটি খাও
কোনো নিউজ চ্যানেলের দিকে তাকিও না
বরং নিজেই একটা নিউজ হয়ে যাও
অদৃশ্য বিভীষিকাকে ছেয়ে ফেলুক আমাদের
অট্টহাসি…
এই প্রথম গোটা একখানা মহামারির
ময়না তদন্তের রিপোর্ট ঘুরে বেড়াচ্ছে
মানুষের হাতে হাতে…

সুরভি

যে জাদু জানে
তাকে জাদু করার কোনো উপায় জানা নেই

প্রতিদিন সূর্যাস্তের হাত ছানি দীর্ঘ হয়
তবু
চা দোকানে বসে
যখন স্পর্শ করি
একটা স্বপ্ন মাখা বিস্কুট

তখন বেঁচে থাকার মানে বুঝি
কী সুন্দর এক উপাসনা…
প্রতিদিন একটু একটু আদর আর সোহাগে
আমায় জাদু করে…

আমি বেঁচে থাকি
আর কী অবলীলায় ছড়িয়ে পড়ে এক আশ্চর্য সুরভি…

দৃশ্য

গাছপালার মধ্যে দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছি
সারা গা ভর্তি রোদ্দুরে
ঘুরে বেড়াচ্ছে জগত
খুব ছোট্ট লাগছে তেপান্তর
নদীর পাড় বরাবর
নরম ঠোঁট হয়ে যাওয়া রাস্তায়
বেড়াতে এসে ভয় করছে
চোরাবালির ভয়…
ভাঙা গাছের ডালে আটকে আছে ঘুড়ি
আঁচড়ে নেওয়া মাটি,যন্ত্রণার দাগে লাল…
মাঞ্জা দেওয়া সুতো
শুকিয়ে নিচ্ছি রোদ্দুরে
জগতটাকে আকাশে উড়িয়ে দিতে পারলেই
ঝিকমিক করে উঠবে সকাল
লেপ মুড়ি দেবে রাত্রি!

 

সারিন্দা

মৃত্যু এসে নিতে পারে না
আমার কথা
আমার ছন্দ লেখার কলম
হঠাৎ ব্যথায় লাগানো মলম
হাসি ঠাট্টা আনন্দ গান…

শুইয়ে রাখা তুলসী তলার শেষ মায়া দাগ
আলতা আঁকা প্রণাম চিহ্ন… পায়ের খড়ম

রোদ ঝলমল এই বারান্দা
সেতার এবং সুর- সারিন্দা
নিতে পারে না..

মৃত্যু আমার হাড়ের উপর আগুন জ্বালে
মাংস পোড়ায়
তবুও শেষ ঘিয়ের গন্ধ নিতে পারে না
আমার নাভি ছুঁতে পারে না…

 

মুকুট

সমস্ত অস্পষ্টতাগুলি মুছে ফেলতে চাই
আর একটু মাথা উঁচু,তীব্র সাপ ভাবুক আমাকে
আর একটু সমীহ ভিক্ষা করি
এই নদ নদী আর আকাশের কাছে
আর একটু স্পর্ধা নিয়ে এঁকে বেঁকে
চলে যেতে চাই…
মাথায় মুকুট রাখি সহস্র পালক
গুঁজে দাও এই রৌদ্র মাসের সময়!

ধুলিমুঠি

ঘুমাতে যাবার আগে আরও একবার
তোমাকে ছোঁয়ার জন্য ছটফট করি…
কুতুবমিনার জুড়ে চাঁদ বসে আছে
আমি এত সিঁড়ি টপকে টপকে উঠে যাব ঠিক…
বুকের মধ্যে হাঁস ভেসে থাকে
রাজধানী জুড়ে…
চলে এসো রাস্তায় নামি…
হাওয়া বাতাসের মাঝে ধুলিমুঠি সোনা করে নিই
কয়েকটি আশ্চর্য লোভ রেখে দিই
পোষা এই বিড়ালের কাছে…
অনেক দূরের থেকে শুনতে পাচ্ছি বাঘের গর্জন!

ঘুমন্ত

এখন ঘুম পায়,শরীর জড়িয়ে আসে ঘুমে
দূরে দূরে উড়ে বেড়ায় বাঘ ফড়িং, ছুটে আসে কাঠবিড়ালি
আরও দূরে ফুলবাগান, হ্রদ,পেয়ারা গাছ
বুকের ভিতরে পাহাড়ি ময়নার আর্তনাদ…
ঝর্ণার মতো ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে গান
বাকি পথ সুরে সুরে… প্রস্তাব উড়ে এল বলে
তোমার অপেক্ষা করি,রাত্রি বাড়ে কাজলে ও তিলে..

 

নেটের ভিতরে

অলীক কুকাব্য আমি লিখিনা কখনও
ইউ টিউব ইউ টিউব করে তোমার চুলের স্পর্শ
ঢুকে গেল নেটের ভিতরে…

আমাদের মায়া মারিচের বন
সুর্পনখা স্বপন আমার…তোমাকে টানছি ক্রমে…
সীতা বিসর্জন লোভে
দীর্ঘ পাতাল খোঁড়া হচ্ছে
কোলে কাখে তীব্র ক্ষুধার পিন্ড
বেড়ে উঠছে…রেল পুলিশের পাহারায়…

আবার বাজার বসছে
দু’একটি বাজার প্রিয় সারমেয়,মার্জার প্রভৃতি

তোমাদের ঠিকানা খুঁজছে…
ঠিকঠাক সার্চ করলে পেয়ে যাবে

পথ জন্মের ইতিহাস
এস এল আর,ইনসাস আর পেটোর বাক্স খুলে

তুমি পাবে উত্তরের শীতল ভূগোল!